নগরীতে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হোটেল-রোস্তোরাঁর মালিকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এসময় তিনি ১৯টি নির্দেশনা দেন। গতকাল রবিবার সকালে নগরীর রীমা কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম শহরের হোটেল মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ নির্দেশনা দেন তিনি।
মেয়র বলেন, হোটেল-রেস্তোরাঁ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ও মানসম্পন্ন নিরাপদ খাদ্য তৈরির জন্য মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। নিরাপত্তার জন্য গরিব মানুষও নিরাপদ পানি কিনে খাচ্ছে। পঁচা-বাসি, মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার নিজে খাবেন না, ভোক্তাদের কেনো খাওয়াবেন। কর্মচারীরা যাতে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। হোটেল মালিক সমিতির ছাড়পত্র ছাড়া চসিকের ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হবে না উল্লেখ করে মেয়র বলেন, আমরা চাই দায়বদ্ধতা শেয়ার হোক।
মেয়র আরো বলেন, চসিক সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। মেয়র জনপ্রতিনিধি। নগরবাসী ও মেয়রের প্রত্যাশা পারস্পরিক। জরিমানা মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। জনস্বার্থে আইন তৈরি করে সরকার। আইন পরিবর্তনের সুযোগ আমাদের নেই। আমরা চাই আপনারা আইন মেনে চলেন। আইন জানি না, বলার সুযোগ নেই। ব্যবসা পরিচালনা করতে হলে আইন জেনে নিতে হবে।
মেয়র বলেন, প্রতিটি রেস্তোরাঁয় একজন ম্যানেজার থাকেন। মালিককে সচেতন করতে হবে ম্যানেজারকে। আমরা যে ফেস্টুন দিচ্ছি তা টাঙিয়ে দেবেন, সচেতনতা তৈরি হবে। রেস্তোরাঁ মালিক হলেও আপনি অন্য জায়গায় ভোক্তা। আমাদের একমাত্র পরিচয় ভোক্তা। হয়রানির সুযোগ নেই। সঠিক তথ্য না জানার কারণে বিভ্রান্তি হয়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামশুদ্দোহার সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন চসিকের মডার্ন খাদ্য পরীক্ষাগারের মাইক্রো বায়োলজিস্ট আশীষ কুমার দাশ, চসিকের স্বাস্থ্য পরিদর্শক ইয়াসিনুল হক চৌধুরী, ইপসার কর্মকর্তা ওমর সাহেদ হিরু, হোটেল মালিক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা দিদারুল আলম প্রমুখ।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আখতার বলেন, জনগণের স্বার্থে আইন তৈরি ও প্রয়োগ হয়। আইন জানতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে অপরাধ সংঘটিত হলে এবং অপরাধী অপরাধ স্বীকার করলে জরিমানা বা শাস্তি দেওয়া হয়। জরিমানার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চলে যায়। সচেতন করার জন্যই জরিমানা করা হয়।
হোটেল মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনার বাসার রান্নাঘরের পরিবেশ ও হোটেলের রান্নাঘরের পরিবেশ দেখুন। সুপারভিশন করুন। পরিষ্কার রাখুন। আপনারা সচেতন হলে আমরা সাধুবাদ জানাব।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হাসানুজ্জামান বলেন, আমরা কেউ কারও প্রতিপক্ষ নই। দইসহ কিছু পণ্য তৈরি করতে হলে বিএসটিআই’র লাইসেন্স নিতে হবে। উৎপাদন, মেয়াদ, খুচরা মূল্য দিতে হবে। বিদেশি পণ্যের মোড়কে আমদানিকারকের নাম, বাংলাদেশি টাকায় মূল্য ইত্যাদি থাকতে হবে। উৎপাদনকারী, আমদানিকারক, সরকার মূল্য নির্ধারণ করে।
তিনি বলেন, আমরা দেখি সাদা মটরে সবুজ রং দেওয়া হয়, চেরির নামে ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে আসা করমচা ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ধরনের পণ্য ব্যবহার করবো না। মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য প্রাণঘাতি হতে পারে। টেক্সটাইল কালার ও কৃত্রিম ফ্লেভার দেওয়া খাদ্যপণ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে। একই পানিতে বার বার প্লেট ধোয়া হলে যক্ষা, জন্ডিসসহ ছোঁয়াচে রোগ ছড়াতে পারে। কিচেনে কর্মচারীদের কাপড় ঝোলানো যাবে না। ফ্রিজে কাঁচা মাংস, ম্যারিনেট করা, সেদ্ধ খাবার এয়ারটাইড বাক্সে রাখতে হবে। পোড়াতেল ব্যবহার করবেন না। ছাপানো নিউজপ্রিন্টের কালিতে সিসা থাকে। তাই এ ধরনের কাগজে খাদ্যপণ্য রাখা যাবে না। বাবুর্চি বা শেফদের হাতে গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে।
চট্টগ্রাম রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ইলিয়াস আহমেদ ভূইয়া বলেন, নগরের হোটেলগুলোকে সবুজ, হলুদ ও লাল চিহ্নিত করা হবে। রেস্তোরাঁ কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ও মালিকদের সচেতন করা হবে।
চট্টগ্রাম রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদুল হান্নান বাবু বলেন, দেশ স্বাধীনের আগে থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের কথা শোনার আয়োজন কোনো নগর পিতা করেননি। একজন অভিভাবক হিসেবে তিনি আন্তরিকভাবে আমাদের ডেকেছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত যদি বেশি জরিমানা করে আমরা হিমশিম খাই, সুদে টাকা ধার করে ইজ্জত বাঁচাই। চসিক, জেলা প্রশাসন, বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার ও র্যাব জরিমানা করে। তিনি বলেন, জরিমানা বেশি করে আইন পাকাপোক্ত করা যায় না। আজ থেকে আমরা শুধু রেস্তোরাঁ নয়, পুরো শহর পরিষ্কার রাখবো। আমরা যে খাবার নিজে খাবো তা গ্রাহকদের খাওয়াবো। আমরা ভুল সংশোধনের জন্য এক বছর সুযোগ চাই।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, আমরা দেখেছি হোটেল রেস্তোরাঁকে জরিমানার পরও সংশোধন হচ্ছে না। অভিযান আরও বাড়াতে হবে। দেশে ক্যান্সারসহ অনেক জটিল রোগের মূল কারণ খাবারের সমস্যা। তাই নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। তাহলে চট্টগ্রাম একটি মডেল শহর হবে।