নিজ বাসভূমে পরবাসী

56

বৃহত্তর কক্সবাজারবাসী নিজ বাসভ‚মে পরবাসী। তারা পরবাসী হয়েছেন মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে। গত পরশু কক্সবাজারে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের এক বিরাট কর্মী সমাবেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা জননেত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতি মানবতা দেখিয়ে সীমান্ত খুলে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে সুযোগ করে দেন। তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে আশ্রয় দিইনি। ওদের এদেশ ছাড়তে হবে। মিয়ানমার নানা ছলা-কলার আশ্রয় নিয়ে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের কারণে আজ কক্সবাজারবাসী মানবিক সংকটে রয়েছে। একই কারণে আমাদের পরিবেশ, অর্থনীতি, পর্যটন, জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন।
বাংলাদেশের এই সংকট নিরসনে ভারত-চীনসহ সমগ্র বিশ্ববাসীকে মিয়ানমারের উপর জোর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে বিশ্ব জনমত। বাংলাদেশের জন্য অনাকাক্সিক্ষত ও দুঃসহ এ বোঝা থেকে বিশ্ববাসীকে এগিয়ে এসে মুক্তি দিতে হবে। এ জন্য বিশেষ প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর শক্ত অবস্থান। বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা এখন বিষফোড়া হয়ে দেখা দিয়েছে। এদের আশ্রয়, খাদ্য-বস্ত্র, স্বাস্থ্য-শিক্ষা, প্রজনন এক চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তারা কক্সবাজারের আকাশ-বাতাসকে বসবাস অযোগ্য করে তুলেছে।
তারা নিজেদের মধ্যে কলহ, মাদক ব্যবসা, চুরি-ডাকাতি, বৃক্ষ-পাহাড় নিধন করে চলেছে। পাহাড়ি সৌন্দর্য, সবুজ শ্যামলিমা হারিয়ে যেতে বসেছে কক্সবাজার এলাকায়। তারা সংগঠিত হচ্ছে। এক শ্রেণীর এনজিও তাদের এদেশ না ছাড়তে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগে প্রকাশ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী রোহিঙ্গাদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের পেছনে সরকারি ব্যয় মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে গেছে। আর বেশি দিন এই ব্যয় বহন দেশের অর্থনীতির জন্য বিরাট সংকট হয়ে দেখা দিবে। অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে এরই মধ্যে বন্দুক যুদ্ধের শিকার হয়েছে কতিপয় রোহিঙ্গা। ওদের জন্মহার আরেকটি আশংকার বিষয়।
আমাদের মনে রাখতে হবে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। এ নগরী দেশ-বিদেশের লাখ লাখ বিনোদন প্রিয় মানুষকে টানছে। পর্যটনকে কেন্দ্র করে সেখানে নানা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। রোহিঙ্গা সংকট ব্যবসায়িদের জন্য আতংকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সংকট যত দ্রæত সমাধান হবে ততই কল্যাণকর হবে সমগ্র দেশবাসী তথা বাংলাদেশের জন্য।
কক্সবাজারের বিশাল এলাকা আগেকার ঐতিহ্য ও পরিবেশ ফিরে পাক। ফিরে আসুক নিরাপত্তা। সবুজে সবুজে পাহাড়-অরণ্যে হাতছানি দিয়ে ডাকুক পর্যটকদের এই কামনা আমাদের। বিশ্বের সমস্ত মানবতাকামী মানুষেরই হোক একই কামনা। নোবেল জয়ী সু চি র শুভবুদ্ধির উদয় হোক, আন্তর্জাতিক আদালত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিক এ কামনা আমাদের।