নিচের লেভেলে সমঝোতা করেও ট্যাক্স ফাঁকি হয়

37

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, আমাদের ট্যাক্স ও জিডিপি রেশিও কাছাকাছি দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। আমাদের দেশে ব্যক্তি যতোটা ধনী, রাষ্ট্র ততোটা নয়। জিডিপি অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। গতকাল রবিবার চট্টগ্রামে ‘আয়কর আহরণে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ নিয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি বক্তব্য রাখছিলেন।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সায়েন্স ইউনিভার্সিটির (সিভাসু) মিলনায়তনে এই সভার আয়োজন করে এনবিআরের কর অঞ্চল-৪ চট্টগ্রাম।
মতবিনিময় সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, এনবিআর কর্মীরা যখনই কারও ট্যাক্স ধার্য করেন তখন সম্পদশালীরা ‘নিচের লেভেলে’ গিয়ে সমঝোতা করে ট্যাক্স কম দেয়। এর মাধ্যমে সম্পদশালীদের কর ফাঁকি দেওয়ার বিষয়ে এনবিআর কর্মীরা সহায়তা করেন।
মতবিনিময় সভায় সম্পদশালীদের কর ফাঁকি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য অধ্যাপক অনুপম সেন বলেন, এখন বাংলাদেশে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বাড়ছে। সৃষ্টি হচ্ছে অসাম্য।
একাত্তরের পরে এ দেশে বড় বড় ধনীর সংখ্যা বাড়ছে। ক্যাপিটালিজমের এটাই ধর্ম, হবেই। যাদের কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে, তারা খেলাপি হচ্ছেন, ফাঁকি দেন। সম্পদ পুঞ্জীভূত হচ্ছে। আর দেশে টাকা যাদের বেশি, তারা বেশি ট্যাক্স দেন না। চাকরিজীবীরাই ট্যাক্স দিই।
এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকেও বলব, আপনারা প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সেশন কেন বন্ধ করে দিয়েছেন? কেন উপরের দিকে বাড়তি হারে ট্যাক্স নেন না? যদি কারও বার্ষিক আয় ১০০ কোটি টাকা হয় তাহলে তাকে ৭৫ কোটি টাকা ট্যাক্স দিতে হবে। উন্নত দেশে এ রকম হয়।
অনুপম সেনের এমন বক্তব্যের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, কারও ট্যাক্স যখন ধার্য করা হয়, তখন তারা নিচের লেভেলে গিয়ে সমঝোতা করে ফেলে। সমঝোতা করে কম ট্যাক্স দেয়।
ট্যাক্স দিতে নাগরিকদের অনীহার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা এখনও মানুষকে বুঝিয়ে উঠতে পারছি না সরকারের কাছ থেকে সাধারণ মানুষ কত কিছু ভোগ করছেন। তাহলে কেন সরকারকে ট্যাক্স দিব না? ট্যাক্স দেওয়াটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
বাংলাদেশে কমপক্ষে চার কোটি মানুষের ট্যাক্স দেওয়ার ক্ষমতা আছে। কিন্তু মাত্র ২০ লাখ লোক রিটার্ন জমা দেন।
তার মধ্যে মার্জিনাল ট্যাক্স পেয়ার ৬০ শতাংশ।
চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইসমাইল খান বলেন, আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু বিকাশ ও রূপান্তর যদি না হয় তবে সন্তুষ্ট হওয়ার কারণ নেই। একবিংশ শতাব্দীতে কোনো কিছুই বিচ্ছিন্ন নয়। সামগ্রিক উন্নয়নে সবাই মিলে মিশে কাজ করতে হবে।
সিভাসু উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, ট্যাক্স দেওয়ার বিষয়ে আগের চেয়ে কিছুটা সচেতনতা বেড়েছে। তবে এখনও ভয় আছে। এ কারণে অনেকে সাদা টাকাও কালো করে ফেলেন। মানুষের কাছে যান। বড় চিঠি দিবেন না, এটা মানুষ ভয় পায়।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সিকান্দার খান, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সরোজ কান্তি সিংহ হাজারী, পোর্ট সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নুরুল আনোয়ার, এনবিআর সদস্য রওশন আরা আক্তার ও সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া।