নিউজিল্যান্ডের রান উৎসবে মলিন বাংলাদেশ

26

বাংলাদেশের রান ছাড়িয়ে গেল নিউজিল্যান্ডের প্রথম জুটিই। দুই ওপেনার জিম রাভাল ও টম ল্যাথাম পেরিয়ে গেলেন শতরান। সেঞ্চুরির কাছে গিয়েছেন কেন উইলিয়ামসনও। বাংলাদেশের নির্বিষ বোলিংয়ে কিউইরা মেতে উঠেছে রান উৎসবে।
হ্যামিল্টন টেস্টের প্রথম ইনিংসে বড় লিড নিয়ে নিউ জিল্যান্ড ছুটছে লিড আরও সমৃদ্ধ করার পথে। শুক্রবার এক দিনেই তুলেছে তারা ৩৬৫ রান। দ্বিতীয় দিন শেষে দলের রান ৪ উইকেটে ৪৫১।
আগের দিন বাংলাদেশ গুটিয়ে গিয়েছিল ২৩৪ রানে। ৬ উইকেট হাতে নিয়ে কিউইরা এগিয়ে ২১৭ রানে।
বড় স্কোরের ভিত গড়ে দিয়েছে অসাধারণ উদ্বোধনী জুটি। ল্যাথামের সঙ্গে রাভালের জুটিতে এসেছে ২৫৪ রান। নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের এটি তৃতীয় সেরা উদ্বোধনী জুটি।
১৭তম টেস্টে এসে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন রাভাল। আগের ৭ ফিফটিতে ৩ বার থমকে গেছেন আশি ছুঁয়ে। এই সেডন পার্কেই সেই হতাশায় পুড়তে হয়েছে দুইবার। তবে প্রথম সেঞ্চুরির জন্য বাংলাদেশ তো বরাবরই প্রতিপক্ষের পছন্দের দল!
রাভালের দুই বছরের অপেক্ষারও অবসান হলো। পেলেন প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির অনির্বচনীয় স্বাদ। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি পাওয়া ৩২তম ব্যাটসম্যান এই বাঁহাতি ওপেনার! ল্যাথাম টানা তৃতীয় টেস্টে খেলেছেন দেড়শ ছাড়ানো স্কোর।
দিন জুড়ে বাংলাদেশের বোলিং ছিল একদমই ধারহীন। তিন পেসারের বলে ছিল না গতি। ছিল না ভালো লেংথে টানা বল করে চাপ সৃষ্টির ধারাবাহিকতা। বরং অনিয়মিত বোলার সৌম্য সরকারই ছিলেন তুলনামূলক কার্যকর। স্পিনে মেহেদী হাসান মিরাজ লাইন-লেংথ পেতেই ধুঁকেছেন, রান দিয়েছেন দেদার।
দুই কিউই ওপেনার সকাল থেকেই খেলেছেন স্বচ্ছন্দে। শুরুতে খানিকটা পরিকল্পনার ছাপ ছিল বাংলাদেশের বোলিংয়ে। দুই বাঁহাতির জন্য মিড উইকেট ও মিড অন কাছাকাছি রেখে রাউন্ড দা উইকেটে বল করে ব্যাটসম্যানকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেছেন আবু জায়েদ। কিন্তু রাভাল-ল্যাথাম তা সামলে নিয়েছেন অনয়াসেই।
রাভালের ইনিংস ছিল প্রায় নিখুঁত। লাঞ্চের একটু আগে ইবাদত হোসেনকে টানা দুটি দারুণ পুলের বাউন্ডারিতে ছুঁয়েছেন তিন অঙ্ক। শতরান স্পর্শ করা বাউন্ডারিতে পূরণ হয়েছে টেস্টে হাজার রানও।
প্রথম সেঞ্চুরির পর আরেকটি প্রথমের স্বাদও পেয়েছেন রাভাল। লাঞ্চের আগের ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজকে পুল শটে মেরেছেন ছক্কা, টেস্ট ক্রিকেটে তার প্রথম ছয়!
৪৭ রানের সময় ল্যাথাম পূর্ণ করেছেন ৩ হাজার টেস্ট রান। দুর্দান্ত ফর্মের ধারাবাহিকতায় পরে করেছেন ক্যারিয়ারের নবম আর টানা তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি।
অপ্রতিরোধ্য মনে হতে থাকা জুটি ভেঙেছেন মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশ অধিনায়কের প্রথম ওভারেই স্বভাববিরুদ্ধ স্ল্যাগ সুইপ খেলতে গিয়ে রাভাল আউট হয়েছেন ১৩২ রানে।
রাভাল ফিরে গেলেও বাংলাদেশের স্বস্তি ফেরেনি। উইলিয়ামসন নেমেই নতুন দম দেন রানের চাকায়। ল্যাথামের সঙ্গে তার জুটিতে রান উঠতে থাকে ওয়ানডের গতিতে।
প্রথম দিন শূন্য রানে ল্যাথামের ক্যাচ ফেলেছিলেন যিনি, সেই সৌম্যই শেষ পর্যন্ত থামান ল্যাথামকে। ভাঙে ৮৮ বলে ৭৯ রানের জুটি। ওয়াইড স্লিপে দুর্দান্ত ডাইভিং ক্যাচ নেন মোহাম্মদ মিঠুন।
২৪৮ বলে ল্যাথোমের ১৬১ রানের ইনিংস ছিল ১৭ চার ও ৩ ছক্কায় খচিত। আগের দুই টেস্টে তার ছিল অপরাজিত ২৬৪ ও ১৭৬ রানের ইনিংস।
একটু পর আবার চমকে দেন সৌম্য। দ্বিতীয় নতুন বলে ভেতরে ঢোকা দারুণ ডেলিভারিতে ফিরিয় দেন অভিজ্ঞ রস টেইলরকে।
নতুন বলের প্রাপ্তি শেষ ওখানেই। উইলিয়ামস ও হেনরি নিকোলসের শটের দ্যুতিতে ঔজ্জ্বল্য হারায় বল। গড়ে ওঠে আরেকটি শতরানের জুটি।
দিনের শেষভাগে ঠিক ১০০ রানে শেষ হয়েছে এই জুটি। মিরাজের আপাত নিরীহ এক বলের অ্যাঙ্গেল পড়তে না পেরে ছেড়ে দিয়ে নিকোলস বোল্ড ৫৩ রানে।
উইলিয়ামসন কোনো ভুল করেননি। দিন শেষ করেছেন ১৩২ বলে ৯৩ রানে। অধিনায়কের ব্যাটেই লিড ধরাছোঁয়ার বাইরে নেওয়ার পথে নিউ জিল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৩৪
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১১৮ ওভারে ৪৫১/৪ (আগের দিন ৮৬/০) (রাভাল ১৩২, ল্যাথাম ১৬১, উইলিয়ামসন ৯৩, টেইলর ৪, নিকোলস ৫৩, ওয়েগনার ; আবু জায়েদ ২৩-৪-৬৫-০, ইবাদত ২১-৪-৭৭-০, খালেদ ২২-৬-৮৪-০, সৌম্য ১৮-১-৫৭-২, মিরাজ ৩১-১-১৪৯-১, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৩-১, মুমিনুল ১-০-১১-০)।