নাশকতার পরিকল্পনা জামায়াত-শিবিরের!

27

চট্টগ্রামে নাশকতার পরিকল্পনা করছে জামায়াত। দেশের চলমান পরিস্থিতি ও জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের ফাঁসির রায়কে ঘিরে তাদের নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। এনিয়ে সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মেসে মেসে ও বাসা বাড়িতে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে পুলিশ। গত ১৫ দিনে ৪০ জন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল শনিবার বাকলিয়া থানা জামায়াতের আমির আবুল মনসুরসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা গোপন বৈঠক করে নাশকতার পরিকল্পনা করছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।
একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বুয়েটে আবরার হত্যাকান্ড ও ভোলার বোরহানউদ্দিনে সহিংসতাকে ঘিরে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা ছিল জামায়াত-শিবিরের। সেসময় তারা রাস্তায় নামারও চেষ্টা করেছিল। ঝটিকা মিছিলও বের করেছিল কয়েকটি স্থানে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মুখে সফল হয়নি তারা। অবস্থা বেগতিক দেখে চুপসে যায়।
সূত্র জানায়, জামায়াত ও শিবির ইতিমধ্যে কয়েক দফায় গোপন বৈঠকও করেছে। বিশেষ করে বাকলিয়া, চান্দগাঁও, পাহাড়তলী ও ঝাউতলা এলাকায় বৈঠকে মিলিত হয়েছে তারা।
সম্প্রতি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও প্রভাবশালী নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ। রিভিউ না করলে যে কোনো সময় মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হতে পারে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করতে পারে জামায়াত-শিবির।
পুলিশ জানতে পেরেছে, আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদন্ডের রায়কে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করতে পারে একটি সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক গোষ্ঠী। তারা সংঘবদ্ধ হওয়ারও চেষ্টা করছে। গোপনে বৈঠকও করছে।
গত ২১ অক্টোবর গ্রেপ্তার হওয়া শিবির নেতারা পুলিশের কাছে বিষয়টি স্বীকারও করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের নগরীতে নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য বিভিন্ন মেসে অবস্থান নিয়ে তারা গোপন বৈঠকও করছেন। ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে বাসাও ভাড়া নিয়েছেন অনেকে। জামায়াত-শিবির সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে বলেও পুলিশকে জানিয়েছে তারা।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার এম এম মোস্তাইন হোসাইন পূর্বদেশকে বলেন, জামায়াত-শিবিরের নাশকতার পরিকল্পনার ব্যাপারে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তবে কোনো লাভ হবে না। পুলিশ সবসময় এ বিষয়ে সতর্ক আছে। তাদের আস্তানায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কোনো ধরনের শক্তি তারা দেখাতে পারবে না। পুলিশের তৎপরতার মুখে তারা খুবই দুর্বল। প্রতিটি এলাকায় আমাদের নজরদারি রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশকে জানিয়েছে, তাদের টার্গেট সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তাছাড়া আকস্মিক হামলা-ভাঙচুর চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা।
সিএমপি সূত্রে জানা যায়, পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। প্রতিটি থানাকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। কেউ যাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার উপর গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সাদা পোষাকে গোয়েন্দা পুলিশ টহল দিচ্ছে।
সিএমপি’র উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান পূর্বদেশকে বলেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না। প্রতিটি থানা ও প্রতিজন পুলিশ সতর্ক রয়েছে। সবদিকে আমাদের নজরদারি রয়েছে। বিশৃঙ্খলার কোনো সুযোগ নেই। কেউ চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ মেসে মেসে ও বাসা বাড়িতে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। অভিযানে গত ১৫ দিনে জামায়াত-শিবিরের ৪০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বাকলিয়া থানার রাহাত্তারপুল এলাকা থেকে বাকলিয়া থানা জামায়াতের আমির আবুল মনসুর সহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে বিপুল জিহাদি বই ও ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পু্লশি।
বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদন্ডের রায়কে কেন্দ্র করে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে বাকলিয়া থানা জামায়াতের আমির আবুল মনসুর ও তার সহযোগী শেখ নছরুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে বিপুল জিহাদি বই ও ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা রয়েছে বলে তিনি জানান।
এর আগে বাকলিয়া থানার বগারবিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবিরের ১৮ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
ভোলায় সহিংসতার পর নগরীতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়ে তারা জড়ো হয়েছিল বলে পুলিশ জানায়। আটকের পর তাদের দেখানোমতে জে এস টাওয়ারের চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে জিহাদি বই, লাঠি, ককটেল, কাঁচের বোতল উদ্ধার করা হয়।
এদের মধ্যে আশরাফুল নগরীর কোতোয়ালী থানা, মিজবাহ উদ্দীন হাবিব সরকারী হাজী মুহম্মদ মহসীন কলেজ, রাকিবুল হাসান নগরীর চন্দনপুরার দারুল উলুম মাদ্রাসা এবং মো. সাইমন দেওয়ান বাজার ওয়ার্ড ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি বলে পুলিশ জানিয়েছে।