নারী, শিশু নির্যাতন, তদন্ত কর্মকর্তা প্রসঙ্গ

43

সা¤প্রতিক সময়ে নানা কারণে নারী ও শিশু নির্যাতনের হার বেড়েই চলেছে। নগরে-শহরে গ্রামে সর্বত্র একই চিত্র। ঘরে-বাইরে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও সহিংতার সংবাদ মিলছে। আধুনিক জীবনাচারণ ও শীলতা বর্জিত সংস্কৃতি প্রসারের কারণে মানুষের মনের কোমল অংশ টুকু হারিয়ে যাচ্ছে। মানবিক চেতনা লুপ্ত হয়ে জাগতিক চেতনার প্রকাশই বেশি। সর্বত্র শুধু লোক দেখানো ভন্ডামি। কোথাও আন্তরিকতা ও মমতার পরশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই যেন জড় বস্তুতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। সুশীল সমাজ ও বেসরকারী সংস্থা সমূহ এ নিয়ে সোচ্চার হলেও বড় একটা কাজ হচ্ছে না। এর প্রধান একটা কারণ হলো, আইনের শাসনের স্থবিরতা। এটি বেশি দেখা দিচ্ছে বাংলাদেশসহ অনুন্নত দেশে। উন্নত দেশে যে হচ্ছে না, তা নয়। সেখানে বিচার বিভাগ কঠোর হওয়ায় সহিংসতার হার অনেক কম। তারপর ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে হ্যাস-টু, মি-টু ইত্যাদি শ্লোগানে মুখর বিশ্বের নির্যাতিত মানুষেরা। এ আন্দোলন দিন দিন প্রবল আকার ধারণ করছে। বাংলাদেশে প্রতিদিন গণমাধ্যমে ফলাও করে সহিংসতার সংবাদ এলেও তার পেছনে আন্তরিকতা আছে বলে মনে হয় না। এরা পত্রিকা এবং মিডিয়ার কাটতি বাড়ানোর হলুদ সাংবাদিকতা করে বলে অভিযোগ আছে। যার ফলে নির্যাতিত মানুষেরা প্রত্যাশিত বিচারের চেয়ে অপমান, বিড়ম্বনার মুখোমুখি হয়। নারী-শিশুর প্রতি যৌন হেনেস্তার পর বিচারের দাবী উঠে সঙ্গত করণে। যার সাথে সম্পৃক্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিশেষ করে তদন্তকারী পুলিশ বাহিনী। তার পরে আসে আইন ও আদালত। ভুক্তভোগীরা প্রায়শ অভিযোগ করে থাকনে যে, ধর্ষনের মামলা করতে গিয়ে প্রায় অর্ধেক নারী শিশু থানায় হেনস্তার শিকার হয়ে থাকেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো হচ্ছে, মামলা রেকর্ডে অবহেলা, ঘুষের জন্য টাকা, এবং অধিকাংশ সময়ে পুলিশের আসামী ধরতে ব্যর্থ হওয়া। রাজনৈতিক নেতা, জন প্রতিনিধি, স্থানীয় মস্তান এবং ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপের কারণে পুলিশ অপরাধী ধরতে পারেন না অথবা ব্যর্থ হন। ঘুষের ব্যাপারটিও কম উল্লেখযোগ্য নয়। এ তথ্য পুলিশের স্টাফ কলেজের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে প্রকাশ হয়। (প্রথম আলো, ৩ মার্চ ২০১৯)। ‘কনভিকশন অব রেপ কেসেস অ্যা স্ট্যাডি অন মেট্রোপলিটান সিটিজ অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি পুলিশ স্টাফ কলেজের সদর দপ্তরে জমা হয়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, থানায় যাওয়ার পর থেকে নারী ও শিশুরা বিচারের প্রতিটি ধাপে কী কী প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়। বর্ণিত গবেষণা প্রতিবেদনে ছয়টি মহানগরের ২২টি থানা অন্তর্ভুক্ত ছিলো। এ সকল থানায় ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৫৭৫টি মামলার এজাহার, ধর্ষণের শিকার ১৭৫ জন নারী ও শিশু এবং ১৯১ জন কর্মকর্তার সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি চ‚ড়ান্ত হয়। উক্ত গবেষণায় নেতৃত্ব দেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনটি দলে চারজন তদন্ত কর্মকর্তা এবং একজন মাঠ তত্ত¡াবধায়ক মিলে এই গবেষণা কাজটি সম্পাদন করেন। তাদের সাথে ছয়টি মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা ও যুক্ত ছিলেন। ‘মামলা করার সময় শিশু ও নারীর সঙ্গে পুলিশের আচরণ কেমন’ তা তারা পর্যবেক্ষণ করেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ধর্ষণের শিকার নারীদের দুই তৃতীয়াংশ হলো শিশু। আর ধর্ষকের বড় অংশ হলো, তার প্রতিবেশি। অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, থানা কর্তৃপক্ষ যথাযথ মামলা গ্রহণ করে ৫৭, ৭ শতাংশের, পুলিশ কর্তৃক নিরৎসাহিত করে মামলা নেয়ার হার ১৮.৩ শতাংশ। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো ভুক্তভোগীদের ৬.৩০ শতাংশ পুলিশের কটুক্তি শুনতে হয়। আবার ৪ শতাংশকে মামলা না করার হুমকি দেয়া হয়। এ তথ্য থেকে দেশের নারী ও শিশুরা যে হেনস্তার শিকার হয় তা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হলো। সা¤প্রতিক সময়ে সহপাঠী বা ফেসবুক বন্ধুদের বিরুদ্ধে ও ধর্ষণের মামলা হচ্ছে। ফেসবুক বন্ধুত্বের হার দেশ যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে ধর্ষণ ও নিগ্রহের হার। গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, ২০০৩-২০১৭ সালে ছয়টি মহানগর এলাকার মধ্যে ঢাকায় বিচারের হার সবচেয়ে কম। মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ মামলার বিচার হয়েছে বর্ণিত সময়ে। পুলিশের সাথে জনগণের সৌহার্দ ও স¤প্রীতি সন্তোষজনক নয়। সাধারণ নাগরিক থানা পুলিশকে ভয় করে। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, ‘বাঘে ছুলে এক ঘা আর পুলিশে ছুলে সতের ঘা’। প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, নারী-শিশুর বড় একটি অংশ বিচারের প্রাথমিক পর্যায় পেরুতেই হিমশিম খায়। যদিও নাগরিককে সেবা দিতে পুলিশের ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু আছে। জরুরী প্রয়োজনে ৯৯৯ তে কল করার ব্যবস্থা বিদ্যমান। তারপরও দেখা গেছে, ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুদের মধ্যে যারা থানায় গিয়ে হেনস্তার শিকার হন, তাদের প্রায় অর্ধেক বলেছেন পুলিশ মামলা রেকর্ড করার পরও পাত্তা দেয়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মামলা দায়ের করতে নিরুৎসাহিত করা হয়। ধর্ষণের শিকার হওয়ায় থানায় পুলিশ কট‚ক্তি করে, কিংবা মামলা না করার জন্য থানায় বসেই হুমকি দেন। আবার কেউ কেউ একের অধিক অভিযোগ ও করেছেন। গবেষকদল কামরাঙ্গী চরে ধর্ষনের শিকার এক নারীর উদাহরণ দেন। বছর তিনেক আগে ধর্ষনের শিকার হয়ে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ও পরে তাদের পরামর্শে তিনি থানায় যান। থানা তাঁকে অপমান করে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। অতপর পুলিশ তাকে একজন রাজনৈতিক নেতাকে সঙ্গে নিয়ে থানায় আমার নির্দেশ দেন। বার বার অনুরোধের পর থানা মামলাটি নিতে রাজী হয়। একদিন পর তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গেলেও কোন সাক্ষ্য প্রমাণ পাননি। অথচ আগামী ছয় মাস পালিয়ে ছিলেন। পলাতক অবস্থায় এবং পরবর্তী সময়ে ও পুলিশ তাকে ধরার উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ করেন ধর্ষণের শিকার নারী। এ ধরনের নজীর দেশে ভুরি ভুরি। আরও সা¤প্রতিক উদাহরণ দেয়া যায়। চট্টগ্রামে ধর্ষণের পর এক নারীকে ফাসানো হয় ইয়াবার মামলায়। তার কাছ থেকে দুই হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে সাজানো হয় মিথ্যা মামলা। তথ্য অনুযায়ী ২৯ আগস্ট ২০১৭ নগরীর বাসায় ঢুকে ঐ নারীকে ধর্ষণ করা হয়। পরে তাঁকে সীতাকুÐের নির্জন একটি স্থানে ফেলে আসা হয়। সেখান থেকে ঐ নারীকে ইয়াবাসহ পুলিশ গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে এসে উল্টো মাদক মামলায় কারাগারে প্রেরণ করে। সূত্র : দৈনিক আজাদী ৪ এপ্রিল ২০১৯।
দুর্ভাগ্যের বিষয় ছয় সন্তানের জননী কিংবা প্রতিবন্ধী নারী-শিশু কেউই রেহাই পাচ্ছে না। প্রতিবেদনে আরো প্রকাশ পায় যে, থানায় এসে হেনস্তার পাশাপাশি মামলা দায়ের করতে ৪৬.৩ শতাংশকে টাকা খরচ করতে হয়েছে। টাকার অংক ১ থেকে ১০০০ টাকা কিংবা তার বেশি। সাক্ষাৎকারে অংশ নেয়া নেয়া ধর্ষনের শিকার নারী-শিশুদের ৭২.৬ শতাংশের কোন আয় রোজগার ছিল না। ধর্ষণ মামলার তদন্ত করেন কারা? ধর্ষনের শিকার যে কেউ মামলা করলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একজন তদন্ত কর্মকর্তাকে ঘটনাটি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেন। তিনি তদন্ত করে যে প্রতিবেদন দেন তাঁর উপর নির্ভর করে ধর্ষণের মামলাটি এগুবে না থেমে যাবে। এ ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তা ভিকটিমের সাথে যোগাযোগ করেন। প্রয়োজনীয় তথ্য ও সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়ায় ভিকটিমকে সম্পৃক্ত রাখেন। তাঁকে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নেবেন, তাঁর চিকিৎসা পরামর্শ ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করবেন। ধর্ষণের শিকার নারী-শিশু যাতে সুবিচার পায় তার ভিটটা গড়ে দেওয়ার দায়িত্ব তদন্তকারী কর্মকর্তার।
গবেষণায় যে সব তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষাত নেওয়া হয়েছে তারা ৭২ শতাংশ আসামী ধরতে সক্ষম হননি। ছয়টি মহানগর পুলিশের মধ্যে তিনটি মহানগর পুলিশের কর্তৃপক্ষ (চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল মহানগর পুলিশ) একজন আসামীও ধরতে পারেনি। তদন্ত কর্মকর্তারা কোনো কোনো পক্ষ থেকে নেতিবাচক প্রভাব ঘটানোর অভিযোগ করেছেন। তবে আর একটু গভীরে গেলে দেখা যায় যে, অবাঞ্চিত চাপের কারনে পুলিশ আসামী ধরতে পারেনি। বিষয়টা তেমন নয়, ভিকটিমদের ৫০ শতাংশ বলেছেন আসামী বরাবর পলাতক ছিল, ৭.২ শতাংশ ধর্ষক প্রভাবশালী ৫.২ শতাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ ঘুষ খেয়েছে, ৪.১ শতাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ গা করেনি এবং এক শতাংশ বলেছেন, আসামী ধরা পড়েনি কারণ গ্রেপ্তারী পরওয়ানা জারী না হওয়া ও আপোষ রফা হওয়া। উক্ত গবেষণা প্রতিবেদনে সুবিচার নিশ্চিত করতে আরও কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করা হয়। যেমন নারী তদন্ত কর্মকর্তার অভাব, লেখাপড়া ও প্রশিক্ষণের অভাব ইত্যাদি। নারী তদন্ত কর্মকর্তা কেন বেশি সংখ্যায় অবশ্যক তার যৌক্তিকা তুলে ধরা হয় গবেষণা প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশের সামাজিক ব্যাস্ততায় যৌন সম্পৃক্তার মতো বিষয়গুলো অত্যন্ত সংবেদনশীল বলে ধরা হয়। প্রকাশ্যে কেন ব্যক্তিগত আলাপেও স্বাচ্ছন্দবোধ করে না অনেকেই। আবার এমন উদাহরণ ও কম নয় যেখানে ধর্ষনের শিকার সমাজে অথবা সামাজিকভাবে হেনস্তার শিকার হয়ে থাকেন। বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে সে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করে তাও ধর্ষনের শিকার হওয়ার মতই। বেশির ভাগই মানবিকভাবে খুব পর্যদুস্ত থাকে। যাদের বড় অংশ হলো- শিশু। তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে তাদের কষ্টের কথা বলতে পারে না। একজন নারী কর্মকর্তা হলে এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি উন্নতি ঘটাতে পারেন। সেখানে আরও বলা হয় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও জেন্ডার বিষয়ক প্রশিক্ষণের গুরুত্বের কথা। গবেষক দল ৫৭৫ নারী তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন। মজার বিষয় হলো, তদন্ত কর্মকর্তাদের অর্ধেকের লেখাপড়া মাত্র উচ্চমাধ্যমিক এবং অর্ধেকের বেশি কনেস্টবল থেকে পদোন্নতি পেয়ে উপ-পরিদর্শক হয়েছেন। তারা ১৯১ জন তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষাতকার নিয়েছেন, তাদের মধ্যে মাত্র দুইজন জেন্ডার বিষয়ে সামান্য প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। অবশ্য তদন্ত কর্মকর্তার ৯৭.৪ শতাংশ স্বীকার করেছেন, তাঁদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। এ ছাড়া ৯৭.৭ শতাংশ বলেছেন, নারী কর্মকর্তা হলে ধর্ষণের বিষয়টা অনেক ভালোভাবে বুঝতে পারতেন। এ হলো নারী শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের বাস্তব চিত্র। বলা যায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তার এবং মামলার ভেতর বাহিরের চিত্র। একজন তদন্ত কর্মকর্তার ইচ্ছা, অভিরুচি ও আর্থিক লেনদেনের উপর নির্ভর করে মামলার অগ্রগতি। সা¤প্রতিক সময়ে পুলিশ বাহিনীতে বেশ পরিবর্তন আসছে এবং প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়ছে। এখন শিক্ষিতরা পুলিশ বাহিনীতে যোগদানে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এ ছাড়া বিষায়নের প্রেক্ষিতে পুলিশ বাহিনী বেশ আধুনিকায়নের আওতায় আসছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সাজ সরঞ্জাম যুক্ত হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে নারী ও শিশু নিগ্রহ ও ধর্ষণের চিচার প্রক্রিয়ায় মুধু পুলিশ বাহিনী নয়, নাগরিক সমাজ ও অংশিজনদের নিয়ে সমস্যা উত্তরণের চেষ্টা করতে হবে। এটা এখন দেখার বিষয়। সকল পক্ষ এ সমস্যা সমাধানের জন্য সমবেত ভাবে এগিয়ে আসতে কতটুকু আগ্রহী। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় সকল নাগরিকের মন ও মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য সরকার সুশীল সমাজ, ধর্মীয় নেতা, শিক্ষাবিদ, ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল নাগরিকের এগিয়ে আসতে হবে। সমাজের সকল স্তরে এ বিষয়টির ভয়াবহতা তুলে ধরে বোঝাতে হবে যারা আক্রান্ত হচ্ছে তারা আমার মা, বোন, কন্যা। এরা মাতৃজাতি এদের সুরক্ষা দান করা সকল পক্ষের জন্য অবশ্য পালনীয়। সহিংসতা সঠিক ভাবে প্রতিহত না করতে পারলে, আজ তোমার কাল আমার স্বজনরা আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত হওয়ার আগেই গর্জে ওঠো প্রিয় দেশবাসী।
লেখক : কবি ও নিসর্গীক, প্রাক্তন ব্যাংক নির্বাহীমুশফিক হোসাইন

সা¤প্রতিক সময়ে নানা কারণে নারী ও শিশু নির্যাতনের হার বেড়েই চলেছে। নগরে-শহরে গ্রামে সর্বত্র একই চিত্র। ঘরে-বাইরে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও সহিংতার সংবাদ মিলছে। আধুনিক জীবনাচারণ ও শীলতা বর্জিত সংস্কৃতি প্রসারের কারণে মানুষের মনের কোমল অংশ টুকু হারিয়ে যাচ্ছে। মানবিক চেতনা লুপ্ত হয়ে জাগতিক চেতনার প্রকাশই বেশি। সর্বত্র শুধু লোক দেখানো ভন্ডামি। কোথাও আন্তরিকতা ও মমতার পরশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই যেন জড় বস্তুতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। সুশীল সমাজ ও বেসরকারী সংস্থা সমূহ এ নিয়ে সোচ্চার হলেও বড় একটা কাজ হচ্ছে না। এর প্রধান একটা কারণ হলো, আইনের শাসনের স্থবিরতা। এটি বেশি দেখা দিচ্ছে বাংলাদেশসহ অনুন্নত দেশে। উন্নত দেশে যে হচ্ছে না, তা নয়। সেখানে বিচার বিভাগ কঠোর হওয়ায় সহিংসতার হার অনেক কম। তারপর ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে হ্যাস-টু, মি-টু ইত্যাদি শ্লোগানে মুখর বিশ্বের নির্যাতিত মানুষেরা। এ আন্দোলন দিন দিন প্রবল আকার ধারণ করছে। বাংলাদেশে প্রতিদিন গণমাধ্যমে ফলাও করে সহিংসতার সংবাদ এলেও তার পেছনে আন্তরিকতা আছে বলে মনে হয় না। এরা পত্রিকা এবং মিডিয়ার কাটতি বাড়ানোর হলুদ সাংবাদিকতা করে বলে অভিযোগ আছে। যার ফলে নির্যাতিত মানুষেরা প্রত্যাশিত বিচারের চেয়ে অপমান, বিড়ম্বনার মুখোমুখি হয়। নারী-শিশুর প্রতি যৌন হেনেস্তার পর বিচারের দাবী উঠে সঙ্গত করণে। যার সাথে সম্পৃক্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিশেষ করে তদন্তকারী পুলিশ বাহিনী। তার পরে আসে আইন ও আদালত। ভুক্তভোগীরা প্রায়শ অভিযোগ করে থাকনে যে, ধর্ষনের মামলা করতে গিয়ে প্রায় অর্ধেক নারী শিশু থানায় হেনস্তার শিকার হয়ে থাকেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো হচ্ছে, মামলা রেকর্ডে অবহেলা, ঘুষের জন্য টাকা, এবং অধিকাংশ সময়ে পুলিশের আসামী ধরতে ব্যর্থ হওয়া। রাজনৈতিক নেতা, জন প্রতিনিধি, স্থানীয় মস্তান এবং ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপের কারণে পুলিশ অপরাধী ধরতে পারেন না অথবা ব্যর্থ হন। ঘুষের ব্যাপারটিও কম উল্লেখযোগ্য নয়। এ তথ্য পুলিশের স্টাফ কলেজের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে প্রকাশ হয়। (প্রথম আলো, ৩ মার্চ ২০১৯)। ‘কনভিকশন অব রেপ কেসেস অ্যা স্ট্যাডি অন মেট্রোপলিটান সিটিজ অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি পুলিশ স্টাফ কলেজের সদর দপ্তরে জমা হয়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, থানায় যাওয়ার পর থেকে নারী ও শিশুরা বিচারের প্রতিটি ধাপে কী কী প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়। বর্ণিত গবেষণা প্রতিবেদনে ছয়টি মহানগরের ২২টি থানা অন্তর্ভুক্ত ছিলো। এ সকল থানায় ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৫৭৫টি মামলার এজাহার, ধর্ষণের শিকার ১৭৫ জন নারী ও শিশু এবং ১৯১ জন কর্মকর্তার সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি চ‚ড়ান্ত হয়। উক্ত গবেষণায় নেতৃত্ব দেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনটি দলে চারজন তদন্ত কর্মকর্তা এবং একজন মাঠ তত্ত¡াবধায়ক মিলে এই গবেষণা কাজটি সম্পাদন করেন। তাদের সাথে ছয়টি মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা ও যুক্ত ছিলেন। ‘মামলা করার সময় শিশু ও নারীর সঙ্গে পুলিশের আচরণ কেমন’ তা তারা পর্যবেক্ষণ করেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ধর্ষণের শিকার নারীদের দুই তৃতীয়াংশ হলো শিশু। আর ধর্ষকের বড় অংশ হলো, তার প্রতিবেশি। অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, থানা কর্তৃপক্ষ যথাযথ মামলা গ্রহণ করে ৫৭, ৭ শতাংশের, পুলিশ কর্তৃক নিরৎসাহিত করে মামলা নেয়ার হার ১৮.৩ শতাংশ। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো ভুক্তভোগীদের ৬.৩০ শতাংশ পুলিশের কটুক্তি শুনতে হয়। আবার ৪ শতাংশকে মামলা না করার হুমকি দেয়া হয়। এ তথ্য থেকে দেশের নারী ও শিশুরা যে হেনস্তার শিকার হয় তা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হলো। সা¤প্রতিক সময়ে সহপাঠী বা ফেসবুক বন্ধুদের বিরুদ্ধে ও ধর্ষণের মামলা হচ্ছে। ফেসবুক বন্ধুত্বের হার দেশ যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে ধর্ষণ ও নিগ্রহের হার। গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, ২০০৩-২০১৭ সালে ছয়টি মহানগর এলাকার মধ্যে ঢাকায় বিচারের হার সবচেয়ে কম। মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ মামলার বিচার হয়েছে বর্ণিত সময়ে। পুলিশের সাথে জনগণের সৌহার্দ ও স¤প্রীতি সন্তোষজনক নয়। সাধারণ নাগরিক থানা পুলিশকে ভয় করে। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, ‘বাঘে ছুলে এক ঘা আর পুলিশে ছুলে সতের ঘা’। প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, নারী-শিশুর বড় একটি অংশ বিচারের প্রাথমিক পর্যায় পেরুতেই হিমশিম খায়। যদিও নাগরিককে সেবা দিতে পুলিশের ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু আছে। জরুরী প্রয়োজনে ৯৯৯ তে কল করার ব্যবস্থা বিদ্যমান। তারপরও দেখা গেছে, ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুদের মধ্যে যারা থানায় গিয়ে হেনস্তার শিকার হন, তাদের প্রায় অর্ধেক বলেছেন পুলিশ মামলা রেকর্ড করার পরও পাত্তা দেয়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মামলা দায়ের করতে নিরুৎসাহিত করা হয়। ধর্ষণের শিকার হওয়ায় থানায় পুলিশ কট‚ক্তি করে, কিংবা মামলা না করার জন্য থানায় বসেই হুমকি দেন। আবার কেউ কেউ একের অধিক অভিযোগ ও করেছেন। গবেষকদল কামরাঙ্গী চরে ধর্ষনের শিকার এক নারীর উদাহরণ দেন। বছর তিনেক আগে ধর্ষনের শিকার হয়ে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ও পরে তাদের পরামর্শে তিনি থানায় যান। থানা তাঁকে অপমান করে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। অতপর পুলিশ তাকে একজন রাজনৈতিক নেতাকে সঙ্গে নিয়ে থানায় আমার নির্দেশ দেন। বার বার অনুরোধের পর থানা মামলাটি নিতে রাজী হয়। একদিন পর তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গেলেও কোন সাক্ষ্য প্রমাণ পাননি। অথচ আগামী ছয় মাস পালিয়ে ছিলেন। পলাতক অবস্থায় এবং পরবর্তী সময়ে ও পুলিশ তাকে ধরার উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ করেন ধর্ষণের শিকার নারী। এ ধরনের নজীর দেশে ভুরি ভুরি। আরও সা¤প্রতিক উদাহরণ দেয়া যায়। চট্টগ্রামে ধর্ষণের পর এক নারীকে ফাসানো হয় ইয়াবার মামলায়। তার কাছ থেকে দুই হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে সাজানো হয় মিথ্যা মামলা। তথ্য অনুযায়ী ২৯ আগস্ট ২০১৭ নগরীর বাসায় ঢুকে ঐ নারীকে ধর্ষণ করা হয়। পরে তাঁকে সীতাকুÐের নির্জন একটি স্থানে ফেলে আসা হয়। সেখান থেকে ঐ নারীকে ইয়াবাসহ পুলিশ গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে এসে উল্টো মাদক মামলায় কারাগারে প্রেরণ করে। সূত্র : দৈনিক আজাদী ৪ এপ্রিল ২০১৯।
দুর্ভাগ্যের বিষয় ছয় সন্তানের জননী কিংবা প্রতিবন্ধী নারী-শিশু কেউই রেহাই পাচ্ছে না। প্রতিবেদনে আরো প্রকাশ পায় যে, থানায় এসে হেনস্তার পাশাপাশি মামলা দায়ের করতে ৪৬.৩ শতাংশকে টাকা খরচ করতে হয়েছে। টাকার অংক ১ থেকে ১০০০ টাকা কিংবা তার বেশি। সাক্ষাৎকারে অংশ নেয়া নেয়া ধর্ষনের শিকার নারী-শিশুদের ৭২.৬ শতাংশের কোন আয় রোজগার ছিল না। ধর্ষণ মামলার তদন্ত করেন কারা? ধর্ষনের শিকার যে কেউ মামলা করলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একজন তদন্ত কর্মকর্তাকে ঘটনাটি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেন। তিনি তদন্ত করে যে প্রতিবেদন দেন তাঁর উপর নির্ভর করে ধর্ষণের মামলাটি এগুবে না থেমে যাবে। এ ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তা ভিকটিমের সাথে যোগাযোগ করেন। প্রয়োজনীয় তথ্য ও সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়ায় ভিকটিমকে সম্পৃক্ত রাখেন। তাঁকে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নেবেন, তাঁর চিকিৎসা পরামর্শ ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করবেন। ধর্ষণের শিকার নারী-শিশু যাতে সুবিচার পায় তার ভিটটা গড়ে দেওয়ার দায়িত্ব তদন্তকারী কর্মকর্তার।
গবেষণায় যে সব তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষাত নেওয়া হয়েছে তারা ৭২ শতাংশ আসামী ধরতে সক্ষম হননি। ছয়টি মহানগর পুলিশের মধ্যে তিনটি মহানগর পুলিশের কর্তৃপক্ষ (চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল মহানগর পুলিশ) একজন আসামীও ধরতে পারেনি। তদন্ত কর্মকর্তারা কোনো কোনো পক্ষ থেকে নেতিবাচক প্রভাব ঘটানোর অভিযোগ করেছেন। তবে আর একটু গভীরে গেলে দেখা যায় যে, অবাঞ্চিত চাপের কারনে পুলিশ আসামী ধরতে পারেনি। বিষয়টা তেমন নয়, ভিকটিমদের ৫০ শতাংশ বলেছেন আসামী বরাবর পলাতক ছিল, ৭.২ শতাংশ ধর্ষক প্রভাবশালী ৫.২ শতাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ ঘুষ খেয়েছে, ৪.১ শতাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ গা করেনি এবং এক শতাংশ বলেছেন, আসামী ধরা পড়েনি কারণ গ্রেপ্তারী পরওয়ানা জারী না হওয়া ও আপোষ রফা হওয়া। উক্ত গবেষণা প্রতিবেদনে সুবিচার নিশ্চিত করতে আরও কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করা হয়। যেমন নারী তদন্ত কর্মকর্তার অভাব, লেখাপড়া ও প্রশিক্ষণের অভাব ইত্যাদি। নারী তদন্ত কর্মকর্তা কেন বেশি সংখ্যায় অবশ্যক তার যৌক্তিকা তুলে ধরা হয় গবেষণা প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশের সামাজিক ব্যাস্ততায় যৌন সম্পৃক্তার মতো বিষয়গুলো অত্যন্ত সংবেদনশীল বলে ধরা হয়। প্রকাশ্যে কেন ব্যক্তিগত আলাপেও স্বাচ্ছন্দবোধ করে না অনেকেই। আবার এমন উদাহরণ ও কম নয় যেখানে ধর্ষনের শিকার সমাজে অথবা সামাজিকভাবে হেনস্তার শিকার হয়ে থাকেন। বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে সে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করে তাও ধর্ষনের শিকার হওয়ার মতই। বেশির ভাগই মানবিকভাবে খুব পর্যদুস্ত থাকে। যাদের বড় অংশ হলো- শিশু। তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে তাদের কষ্টের কথা বলতে পারে না। একজন নারী কর্মকর্তা হলে এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি উন্নতি ঘটাতে পারেন। সেখানে আরও বলা হয় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও জেন্ডার বিষয়ক প্রশিক্ষণের গুরুত্বের কথা। গবেষক দল ৫৭৫ নারী তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন। মজার বিষয় হলো, তদন্ত কর্মকর্তাদের অর্ধেকের লেখাপড়া মাত্র উচ্চমাধ্যমিক এবং অর্ধেকের বেশি কনেস্টবল থেকে পদোন্নতি পেয়ে উপ-পরিদর্শক হয়েছেন। তারা ১৯১ জন তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষাতকার নিয়েছেন, তাদের মধ্যে মাত্র দুইজন জেন্ডার বিষয়ে সামান্য প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। অবশ্য তদন্ত কর্মকর্তার ৯৭.৪ শতাংশ স্বীকার করেছেন, তাঁদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। এ ছাড়া ৯৭.৭ শতাংশ বলেছেন, নারী কর্মকর্তা হলে ধর্ষণের বিষয়টা অনেক ভালোভাবে বুঝতে পারতেন। এ হলো নারী শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের বাস্তব চিত্র। বলা যায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তার এবং মামলার ভেতর বাহিরের চিত্র। একজন তদন্ত কর্মকর্তার ইচ্ছা, অভিরুচি ও আর্থিক লেনদেনের উপর নির্ভর করে মামলার অগ্রগতি। সা¤প্রতিক সময়ে পুলিশ বাহিনীতে বেশ পরিবর্তন আসছে এবং প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়ছে। এখন শিক্ষিতরা পুলিশ বাহিনীতে যোগদানে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এ ছাড়া বিষায়নের প্রেক্ষিতে পুলিশ বাহিনী বেশ আধুনিকায়নের আওতায় আসছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সাজ সরঞ্জাম যুক্ত হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে নারী ও শিশু নিগ্রহ ও ধর্ষণের চিচার প্রক্রিয়ায় মুধু পুলিশ বাহিনী নয়, নাগরিক সমাজ ও অংশিজনদের নিয়ে সমস্যা উত্তরণের চেষ্টা করতে হবে। এটা এখন দেখার বিষয়। সকল পক্ষ এ সমস্যা সমাধানের জন্য সমবেত ভাবে এগিয়ে আসতে কতটুকু আগ্রহী। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় সকল নাগরিকের মন ও মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য সরকার সুশীল সমাজ, ধর্মীয় নেতা, শিক্ষাবিদ, ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল নাগরিকের এগিয়ে আসতে হবে। সমাজের সকল স্তরে এ বিষয়টির ভয়াবহতা তুলে ধরে বোঝাতে হবে যারা আক্রান্ত হচ্ছে তারা আমার মা, বোন, কন্যা। এরা মাতৃজাতি এদের সুরক্ষা দান করা সকল পক্ষের জন্য অবশ্য পালনীয়। সহিংসতা সঠিক ভাবে প্রতিহত না করতে পারলে, আজ তোমার কাল আমার স্বজনরা আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত হওয়ার আগেই গর্জে ওঠো প্রিয় দেশবাসী।
লেখক : কবি ও নিসর্গীক, প্রাক্তন ব্যাংক নির্বাহী