নারী-পুরুষের সমতায় এগিয়ে বাংলাদেশ এ ধারা অব্যাহত থাক

60

বাংলাদেশ এখন আর তেমন দুঃসংবাদের দেশ নয়; সুসংবাদ নিয়েই প্রতিদিনের প্রভাত শুরু হয়। মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন কিছু দুঃসংবাদ বা খারাপ খবর আমাদের দুঃচিন্তার কারণ হলেও গত কয়েকদিনের বেশ কিছু সংবাদ আমাদের প্রাণিত করছে। বিজয়ের মাসে এমনটি সংবাদই প্রতিটি বাঙালির কামনা থাকে নিঃসন্দেহে। গত সপ্তাহের মঙ্গলবার বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম ডাবিøউইএফ যে ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২০’ প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা গেছে, লৈঙ্গিক সমতার ক্ষেত্রে টানা পঞ্চমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। বিশ্বের ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের এবারের অবস্থান ৫০তম। আগের বছর ১৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪৮তম। ডাবিøউইএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৬ সালে ১১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯১তম। ১০ বছরে বাংলাদেশ ১৯ ধাপ ওপরে উঠে এসেছে। দেশে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে নারীদের তফাত কমে এসেছে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। ২০০৬ সালে ছিল ১৭তম। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, এটিই বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে গত ৫০ বছরে পুরুষের তুলনায় নারীরা অধিক সময় ধরে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন। এ কারণে রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন মাপকাঠিতে দেশটি শক্তিশালী স্থানে অবস্থান করছে। কিন্তু দেশটির মন্ত্রিপরিষদে নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ৮ শতাংশ। আর সংসদে নারীর অংশগ্রহণ ২০ শতাংশ। ডাব্লিউইএফের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, নারীদের মৌলিক অধিকার জোরদারের পাশাপাশি রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বাংলাদেশের আরো অবদান রাখার সুযোগ আছে। নেতৃত্বের ক্ষেত্রে প্রতি ১০ জনে নারীর অংশগ্রহণ মাত্র একজন। বার্ষিক গড় আয়ে নারীরা কিছুটা পিছিয়ে আছে, তাদের গড় আয় ৪০ শতাংশের মতো। অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও সুযোগের মাপকাঠিতে এবার বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম। স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির মাপকাঠিতে অবস্থান ১১৯তম এবং শিক্ষার সুযোগ মাপকাঠিতে অবস্থান ১২০তম।
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী, সংসদের বাইরে বড় একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রী নারী। সমাজের নানা স্তরে এবং সামরিক বাহিনী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশাতে নারীর অবস্থান আগের চেয়ে অনেক দৃঢ় হয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন রয়েছে। স্থানীয় সরকার পর্যায়ে নারীর সরাসরি নির্বাচনের সুযোগ ছাড়াও বিশেষ কোটা রাখা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ সবখানেই নারী সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন। কর্মক্ষেত্রেও নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। চ্যালেঞ্জিং পেশায়ও দেশের নারীরা সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছেন। কিন্তু তার পরও নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায়নি। সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের পেশাজীবী নারীদের ৯৪% কোন কোনভাবে পুরুষ কর্তৃক লাঞ্ছিত হচ্ছে।
সম্প্রতি নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি নির্যাতনের চিত্রও সুখকর নয়। উত্তরাধিকার সম্পত্তি ভোগের ক্ষেত্রেও নারীদের নানাভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এসব বিবেচনায় বলা যায়, সমাজে নারী-পুরুষের সামতা এখনও পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা হয়নি। ক্ষেত্রে সরকারের দায় দায়িত্বের পাশাপাশি ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে সমানভাবে কাজ করতে হবে। দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও ধর্মীয় বিধি-বিধানে নারীর প্রতি যে সন্মান প্রদর্শন করা হয়েছে, তা প্রতিপালিত হওয়া জরুরি।নারী-পুরুষের সমতায় এগিয়ে বাংলাদেশ
এ ধারা অব্যাহত থাক

বাংলাদেশ এখন আর তেমন দুঃসংবাদের দেশ নয়; সুসংবাদ নিয়েই প্রতিদিনের প্রভাত শুরু হয়। মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন কিছু দুঃসংবাদ বা খারাপ খবর আমাদের দুঃচিন্তার কারণ হলেও গত কয়েকদিনের বেশ কিছু সংবাদ আমাদের প্রাণিত করছে। বিজয়ের মাসে এমনটি সংবাদই প্রতিটি বাঙালির কামনা থাকে নিঃসন্দেহে। গত সপ্তাহের মঙ্গলবার বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম ডাবিøউইএফ যে ‘গেøাবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২০’ প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা গেছে, লৈঙ্গিক সমতার ক্ষেত্রে টানা পঞ্চমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। বিশ্বের ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের এবারের অবস্থান ৫০তম। আগের বছর ১৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪৮তম। ডাবিøউইএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৬ সালে ১১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯১তম। ১০ বছরে বাংলাদেশ ১৯ ধাপ ওপরে উঠে এসেছে। দেশে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে নারীদের তফাত কমে এসেছে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। ২০০৬ সালে ছিল ১৭তম। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, এটিই বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে গত ৫০ বছরে পুরুষের তুলনায় নারীরা অধিক সময় ধরে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন। এ কারণে রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন মাপকাঠিতে দেশটি শক্তিশালী স্থানে অবস্থান করছে। কিন্তু দেশটির মন্ত্রিপরিষদে নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ৮ শতাংশ। আর সংসদে নারীর অংশগ্রহণ ২০ শতাংশ। ডাব্লিউইএফের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, নারীদের মৌলিক অধিকার জোরদারের পাশাপাশি রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বাংলাদেশের আরো অবদান রাখার সুযোগ আছে। নেতৃত্বের ক্ষেত্রে প্রতি ১০ জনে নারীর অংশগ্রহণ মাত্র একজন। বার্ষিক গড় আয়ে নারীরা কিছুটা পিছিয়ে আছে, তাদের গড় আয় ৪০ শতাংশের মতো। অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও সুযোগের মাপকাঠিতে এবার বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম। স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির মাপকাঠিতে অবস্থান ১১৯তম এবং শিক্ষার সুযোগ মাপকাঠিতে অবস্থান ১২০তম।
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী, সংসদের বাইরে বড় একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রী নারী। সমাজের নানা স্তরে এবং সামরিক বাহিনী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশাতে নারীর অবস্থান আগের চেয়ে অনেক দৃঢ় হয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন রয়েছে। স্থানীয় সরকার পর্যায়ে নারীর সরাসরি নির্বাচনের সুযোগ ছাড়াও বিশেষ কোটা রাখা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ সবখানেই নারী সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন। কর্মক্ষেত্রেও নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। চ্যালেঞ্জিং পেশায়ও দেশের নারীরা সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছেন। কিন্তু তার পরও নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায়নি। সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের পেশাজীবী নারীদের ৯৪% কোন কোনভাবে পুরুষ কর্তৃক লাঞ্ছিত হচ্ছে।
সম্প্রতি নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি নির্যাতনের চিত্রও সুখকর নয়। উত্তরাধিকার সম্পত্তি ভোগের ক্ষেত্রেও নারীদের নানাভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এসব বিবেচনায় বলা যায়, সমাজে নারী-পুরুষের সামতা এখনও পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা হয়নি। ক্ষেত্রে সরকারের দায় দায়িত্বের পাশাপাশি ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে সমানভাবে কাজ করতে হবে। দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও ধর্মীয় বিধি-বিধানে নারীর প্রতি যে সন্মান প্রদর্শন করা হয়েছে, তা প্রতিপালিত হওয়া জরুরি।