নারীর প্রতি সহিংসতা এবং সমসাময়িক চিত্র

49

ফারহানা ইদ্রিস,

বর্তমান সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে নারী নির্যাতন আশংকাজনক হারে বেড়ে চলেছে। কোভিড- ১৯ পরিস্থিতিতে পারিবারিকভাবে নারীর প্রতি সহিংসতা আগের তুলনায় বেড়েছে। বিভিন্ন সময় কর্মক্ষেত্রে যাওয়া আসার পথে গণপরিবহনে কর্মজীবী নারীরা বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং হচ্ছে। ফলে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাধাঁপ্রাপ্ত হচ্ছে। অতএব, নারী পুরুষের সমতা নিশ্চিত সম্ভব হবে না এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন থমকে যাবে। কারণ বিপুল পরিমাণ দক্ষ নারী জনগোষ্ঠীকে কর্মক্ষেত্রের বাইরে রেখে একটি দেশ কখনও উন্নয়নের সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছানো সম্ভব নয়। এর পাশাপাশি পাঠ্যপুস্তকে নারী পুরুষের সমতাভিত্তিক লেখা অর্ন্তভুক্ত করা উচিত। ফলে প্রতিটি শিশুর মানসিক বিকাশ অনেক গঠনমূলক এবং সুন্দর হবে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রনে থাকা সড়কবাতিগুলো বেশিরভাগ সময় নিভানো থাকে। ফলে নারীরা সন্ধ্যার পর চলাচলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়। এছাড়া নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় নারীর পোশাক, আচরণকে দায়ী করা হয় যেটা পরোক্ষভাবে অপরাধীদের অপরাধ সংঘটনে উৎসাহ দিয়ে থাকে। এছাড়া অপরাধীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিচারের আওতায় আসে না। ফলে অপরাধীদের কঠোর বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি এই অপরাধ সংগঠনের মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলো খুঁজে বের করা জরুরি। এসব ক্ষেত্রে পারিবারিক কাউন্সেলিং, ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চা এবং একজন শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য সাংস্কৃতিক পরিবেশ, অপর শিশুর সাথে মেলামেশা এবং খেলাধুলার মধ্যে থাকা খুব জরুরি। ফলে একজন পুরুষ একজন নারীকে পুরুষ হিসেবে নয় বরং মানুষ হিসেবে গণ্য করবে। এছাড়া নারীর পোশাক এবং আচরণকে দায়ী না করে অপরাধীদের সামাজিকভাবে বয়কট করে তাদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি এই অপরাধীদের প্রচ্ছন্ন সমর্থনকারীদের খুঁজে বের করতে হবে। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীদের হয়রানি আগের চেয়ে বহুলাংশে বেড়েছে। এর প্রধান কারণ বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং প্রতিবাদ না করা। এই ধরনের অপরাধীদের তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় চিহ্নিত করে তাদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নারী নির্যাতন বন্ধে সরকারি হেল্পলাইনগুলোর সহজলভ্য করার পাশাপাশি প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য সেটা তাদের উপযোগি মাধ্যমে জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া গণমাধ্যমকর্মীদের ধর্ষণের সংবাদগুলো প্রচারের ক্ষেত্রে আরো বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ইপসার বিভিন্ন জরিপে দেখা গিয়েছে যে, করোনাকালীন সময়ে নারী নির্যাতন বহুলাংশে বেড়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতার প্রধান কারণ হল পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি। এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সমাজের প্রতিটি স্তরে সমাজকর্মী,স্বাস্থ্যকর্মী উন্নয়নকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী এবং দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিকদের ইতিবাচকভাবে কাজ করার পাশাপাশি নারী নির্যাতন রোধে দেশের বিচারব্যবস্থার কঠোর ভূমিকা পালন করা উচিত।

লেখক : উন্নয়নকর্মী