নামের সাথে মিল রেখেই স্টল সাজিয়েছে ‘কুঁড়েঘর’

218

বইমেলায় ব্যতিক্রমী সাজের কারণে বইপ্রেমীদের নজর কেড়েছে ‘কুঁড়েঘর’ স্টল। বাঁশের নানান কারুকাজে সজ্জিত স্টলটির আবয়বটা যেন ভিন্ন। মনে হয় যেনো প্রত্যন্ত গ্রামের একটি ঘর। বাঁশ আর কাঠের তৈরি এ ঘরটি ‘কুঁড়েঘর’। সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কুঁড়েঘর প্রকাশনী লিমিটেডের স্টল এটি। নামের সাথে মিল রেখেই স্টলটিকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। আগ্রহী পাঠক-দর্শনার্থীদের ভিড়ও আছে স্টলটিতে।
‘চলো করি শিল্পের বড়াই’ স্লোগানে বইমেলায় এসেছে কুঁড়িঘর। পাঠক সমাজের চাহিদা এবং রুচির প্রতি খেয়াল রেখে কুঁড়েঘর নানা ধরনের বই প্রকাশ এবং বাজারজাত করছে। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, কমিকস, হাদিস গ্রন্থ. তাফসির গ্রন্থ, কিশোর সাহিত্য, কিশোর উপন্যাস, অনুবাদ বা অনূদিত, সায়েন্স ফিকশন, চিকিৎসা বিজ্ঞান, আত্মোন্নয়ন, ওয়েস্টার্ন ও আইন বিষয়ক বই প্রকাশ করেছে কুঁড়িঘর। একুশের বই মেলায় প্রকাশনীর প্রত্যেক বইয়ের উপর ২৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
কুঁড়েঘর স্টলের কর্মী মাহমুদুল হাসান সায়মন বলেন, নামের সাথে মিল রেখে স্টলটি সাজানো হয়েছে। বইমেলায় এসে আমরা প্রচুর সাড়া পেয়েছি, এতটুকু আমরা আশা করিনি। সবাই আমাদের স্টলটিতে আসছেন। মেলায় এসে আমাদের স্টলের সামনে ছবি তুলছেন, সেলফি তুলছেন।
তিনি বলেন, আমাদের স্টলে মূলত পুরাতন বইয়ের চাহিদা বেশি। বিচ্ছন্নতার সত্য মিথ্যা, চৈত্রের ভালোবাসাসহ কয়েকটি বইয়ের চাহিদা বেশি দেখা যাচ্ছে।
গতকাল সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে দেখা যায় বইপ্রেমীদের ঢল নামে। ছোট থেকে বৃদ্ধ সবাই আসছেন মেলায়। মেলায় এসে পুরাতন বই যেমন কিনছেন, তেমনি নতুন বইয়ের সাথে পরিচিতও হচ্ছেন।
সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের যুগ্ম সচিব জামাল উদ্দিন বলেন, সম্মিলিত বইমেলা আমাদের প্রাণের দাবি ছিলো। কিন্তু মেলা প্রথমেই এমনভাবে জমে উঠবে সেটা আশা করিনি। প্রচুর বইপ্রেমীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ভিড় বাড়ছে। এখন থেকে চট্টগ্রামের কোনো মানুষ আর ঢাকার বইমেলায় যাবে না। ঢাকার প্রকাশকরাই চট্টগ্রামে আসবেন।

শামসুল আরেফীনের
‘কালুরঘাট বেতার
কেন্দ্র ও স্বাধীনতা
ঘোষণা’
নিজস্ব প্রতিবেদক


১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত ১৪ টি অধিবেশন সম্প্রচারের মাধ্যমে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই ভূমিকা বা অবদান নিয়ে চলমান বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলায় খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের বলাকা থেকে প্রকাশিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও কবি শামসুল আরেফীনের ‘কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র ও স্বাধীনতা ঘোষণা’। বইটি চট্টগ্রামের বইমেলাতেও পাওয়া যাচ্ছে।
গ্রন্থটিতে বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিনগত রাতে চট্টগ্রামের তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর পরিবারে আসা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার মেসেজ অবলম্বনে পরদিন ২৬ মার্চ দুপুর প্রায় ২.১০ টায় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠের মধ্য দিয়ে এই বেতার কেন্দ্র মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে শুরু করে’।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র বা স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র সম্পর্কে এই গ্রন্থের বয়ান হলো: ‘এম এ হান্নান কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠের পূর্বে ছাত্রলীগ কর্মী রাখাল চন্দ্র বণিককে অনুষ্ঠান ঘোষণার দায়িত্ব দেয়া হলে তিনি ঘোষণা করেছিলেন-‘চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র। একটি বিশেষ ঘোষণা। একটু পরেই জাতির উদ্দেশ্যে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের বিপ্লবী সাধারণ সম্পাদক জনাব এম এ হান্নান। আপনারা যাঁরা রেডিও খুলে বসে আছেন তাঁরা রেডিও বন্ধ করবেন না’।
তিনি প্রথমে ‘চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র’ বললেও পরে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’ ঘোষণা করেছিলেন। এভাবে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’ হিসেবেও সেসময় আত্মপ্রকাশ করে। ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্ল­বী বেতার কেন্দ্র’ নাম দেয়া হয় রেডিও ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহানের পরামর্শক্রমে।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পর্কে গ্রন্থটিতে বলা হয়েছে, ‘২৬ মার্চ দুপুর প্রায় ২.১০ টায় এম এ হান্নান কর্তৃক কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র বা ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাটি প্রচার করা হয়। একারণে বেতারের আঞ্চলিক প্রকৌশলী মীর্জা নাসিরউদ্দিন দেশদ্রোহিতার দায়ে অভিযুক্ত হন।
এদিকে বেতারের মাধ্যমে ঘোষণাটি প্রচারিত হওয়ার পর পর তা আবারও প্রচার করার চিন্তা করেন বেতারকর্মী বেলাল মোহাম্মদ (অনিয়মিত বেতারকর্মী), সুলতান উল আলম, মাহবুব হাসান, আবুল কাসেম স›দ্বীপ, কবি আব্দুস সালাম, হোসনে আরা, আবদুল্লাহ-আল ফারুক ও ডা. আনোয়ার আলী প্রমুখ। এখানে তথ্য দেয়া প্রয়োজন যে, ২৬ মার্চ সকালে বেতারকর্মীদের মধ্য থেকে বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাসেম স›দ্বীপ ও আবদুল্লাহ-আল ফারুক স্টেশন রোডে অবস্থিত রেস্ট হাউসে গমন করেন। শহর আওয়ামী লীগের অফিস ও চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদের কন্ট্রোল রুম হিসেবে পরিচিত এই রেস্ট হাউসে তাঁদের গমনের উদ্দেশ্য ছিল, শহর আওয়ামী লীগ ও চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদের সম্মতি ও সহায়তায় বেতার চালু করা। এরপর তাঁরা ক্যাপ্টেন রফিকের সাথে সাক্ষাৎ করে বেতারের নিরাপত্তার রক্ষা করার জন্য অনুরোধ করেন। রেস্ট হাউসে নাট্যকার ও অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন বেতার চালুতে ভূমিকা রাখার মানসে তাঁদের সাথে যোগদান করেন।
সন্ধ্যায় বেতারকর্মীরা কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের একটি কক্ষে মিলিত হয়ে এই কেন্দ্রের নামকরণ নিয়ে আলোচনা করেন অনেক। সভায় সাব্যস্ত হয় দুপুরে প্রদত্ত ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’ই উপযুুক্ত নাম। এরপর রাত ৭.৩০ টায় রেডিও ইঞ্জিনিয়ার মোসলেম খান সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে ১০ কিলোওয়াট বিশিষ্ট ট্রান্সমিটারটি চালু করলে শুরু হয় দ্বিতীয় অধিবেশন। অনুষ্ঠান ঘোষক হিসেবে বেতারকর্মী সুলতান উল আলম স্টুডিওতে প্রবেশ করে প্রথম মাইক্রোফোনে উচ্চারণ করেন: ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতারকেন্দ্র থেকে বলছি’। এই অধিবেশনে আবদুল্ল­াহ আল ফারুক এবং আবুল কাসেম স›দ্বীপের কণ্ঠেও এই ঘোষণা উচ্চারিত হয়েছিল।
এম এ হান্নান এই অধিবেশনেও বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠ করেন। ডা. সৈয়দ আনোয়ার আলীর কাছ থেকে পাওয়া বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার একটি হ্যান্ডবিলও (যা তাঁর স্ত্রী ডা. মনজুলা আনোয়ার কর্তৃক বাংলায় রূপান্তরিত) প্রচারিত হয়।


এই দ্বিতীয় অধিবেশনের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো প্রচারিত এম এ হান্নান কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক গুরুত্ব পায়। এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পরদিন ২৭ মার্চ জাপানের অংধযর ঊাবহরহম ঘবংি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইধষঃরসড়ৎব ঝঁহ নিম্নোক্তরূপে সংবাদ প্রকাশ করে:
অংধযর ঊাবহরহম ঘবংি, ঔধঢ়ধহ, গধৎপয ২৭, ১৯৭১
ঊধংঃ চধশরংঃধহ পঁঃ ড়ভভ ভৎড়স ড়িৎষফ ধং যবধাু ভরমযঃরহম ৎড়পশং পরঃরবং
চবঃৎধঢ়ড়ষব, ডবংঃ ইবহমধষ, গধৎপয ২৬
ঝযবরশয গঁলরনঁৎ জধযসধহ, ষবধফবৎ ড়ভ ঃযব হড়ি ড়ঁঃষধবিফ অধিসর খবধমঁব যিরপয ঃড়হরমযঃ ফবপষধৎবফ ঊধংঃ চধশরংঃধহ’ং রহফবঢ়বহফবহপব, ৎবঢ়ড়ৎঃবফষু বিহঃ ঁহফবৎমৎড়ঁহফ রিঃয যরং ঃড়ঢ় ধফারংবৎং.

ইধষঃরসড়ৎব ঝঁহ, টঝঅ, গধৎপয ২৭, ১৯৭১
১০,০০০ পরারষরধহং ৎবঢ়ড়ৎঃবফ শরষষবফ রহ ইবহমধষ ংঃৎরভব

ঘবি উবষযর, ঝধঃঁৎফধু, গধৎপয ২৭ (জবঁঃবৎ)
জধফরড় চধশরংঃধহ ধহহড়ঁহপবফ ঃড়ফধু ঃযধঃ ঝযবরশয গঁলরন ধিং ধৎৎবংঃবফ ড়হষু যড়ঁৎং ধভঃবৎ যব ঢ়ৎড়পষধরসবফ রহফবঢ়বহফবহপব ভড়ৎ ঊধংঃ চধশরংঃধহ, ঃযব অংংড়পরধঃবফ চৎবংং ৎবঢ়ড়ৎঃবফ.
ঋড়ৎপবং ষড়ুধষ ঃড় ঃযব ঊধংঃ চধশরংঃধহ ষবধফবৎ, যিড় বধৎষরবৎ যধফ ঢ়ৎড়পষধরসবফ ধহ রহফবঢ়বহফবহঃ ইবহমধষর ৎবঢ়ঁনষরপ, বিৎব ৎবঢ়ড়ৎঃবফ ঃড় যধাব পধঢ়ঃঁৎবফ ঃযব ঈযরঃঃধমড়হম ংঃধরড়হ ড়ভ জধফরড় চধশরংঃধহ ষধংঃ হরমযঃ.
ঊধৎষরবৎ, ধ পষধহফবংঃরহব ৎধফরড় সড়হরঃড়ৎবফ রহ ওহফরধ ংধরফ ঝযবরশয গঁলরন যধফ ঢ়ৎড়পষধরসবফ ঊধংঃ চধশরংঃধহ ঃযব ংড়াবৎবরমহ রহফবঢ়বহফবহঃ চবড়ঢ়ষব’ং জবঢ়ঁনষরপ ড়ভ ইধহমষধ উবংয (ইবহমধষর হধঃরড়হ).
‘কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র ও স্বাধীনতা ঘোষণা’ গ্রন্থটিতে এই বেতার কেন্দ্রের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিস্তারিত ইতিহাস ‘কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র ও স্বাধীনতা ঘোষণা’ এবং ‘বঙ্গবন্ধুর হাতে লেখা স্বাধীনতা ঘোষণার মূল দলিল’ প্রবন্ধদ্বয়ের মাধ্যমে পরিবেশনের চেষ্টা করা হয়েছে। ‘কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র ও স্বাধীনতা ঘোষণা’ প্রবন্ধটি ‘কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র’ নামে এনসাইক্লোপিডিয়া অব বাংলাদেশ ওয়ার অব লিবারেশন প্রজেক্ট, এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ-এ ইতোমধ্যে প্রেরণ করা হয়েছে। বস্তুত এই প্রজেক্টের জন্য এই প্রবন্ধ লিখিত। গ্রন্থের শেষদিকে সংকলিত হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পর্কিত সংবাদ’ পর্ব। পর্বটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার ব্যাপক গুরুত্ব পাওয়ার বিষয়টি অনুধাবনে সহায়তা করবে।
বলা যায়, গ্রন্থটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে চিহ্নিত হবে।