নাজিরহাট ভূমি অফিসে ঘুষ ছাড়া কিছুই হয় না

330

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাটে দ্রুত গড়ে উঠছে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে এখানকার জমির মূল্য। আর এ কারণেই ভ‚মি সংক্রান্ত বিরোধও বেড়েছে বহুগুণ। বিরোধসহ বিভিন্ন ধরনের ঝামেলা এড়াতে ইউনিয়ন ভ‚মি অফিসটিতে জমির নামজারি, ভ‚মি উন্নয়ন কর পরিশোধ, মিস কেসসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ভ‚মি সংক্রান্ত কাজ করতে গিয়ে তহশিলদার থেকে শুরু করে পিয়নদের পর্যন্ত ঘুষ দিতে হচ্ছে।
ভ‚মি অফিসে আসা অধিকাংশ ভুক্তভোগীর মুখে একই কথা। হয়রানি আর ভোগান্তি কী তা এখানে না এলে বোঝা যায় না। অফিস নিয়মে প্রত্যেক ধাপে ঘুষ দিলেই ফাইল কর্তাদের টেবিল পর্যন্ত পৌঁছায়। এতে সহযোগিতা করে ইউনিয়ন ভ‚মি অফিসের কর্মচারী ও দালালের সিন্ডিকেট।
উপজেলার ছয়টি তহশিল অফিসে মাসে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার ঘুষ লেনদেন হয়। ফলে ভ‚মি সংশ্লিষ্ট সেবা নিতে আসা সরকারি এসব অফিসে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ভ‚মি মালিকদের।
তহশিলদার, অফিস সহকারী, পিয়ন-দালাল সবাই ঘুষ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। অবৈধ লেনদেনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী জালিয়াত চক্র। কর্মচারী-দালাল সিন্ডিকেট এই চক্রের অংশ। ঘুষ দিয়েই অফিসের অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করাসহ এক দাগের জায়গার মালিক অন্যজনকে করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নাম প্রস্তাব, সার্ভে রিপোর্ট, নামজারি, ডিসিআর সংগ্রহ, মিস কেস ও খাজনা দাখিল থেকে শুরু করে সব কিছুতেই এখন ঘুষের কারবার।
উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভা এলাকার মুহাম্মদ হাসান উদ্দিন অভিযোগ করেন, তার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৯ শতাংশ জমির নামজারি করতে গেলে ইউনিয়ন ভ‚মি কর্মকর্তা ১২ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় আবেদন জমা নেওয়া হয়নি।
পশ্চিম সুন্দরপুর গ্রামের আবু দাউদ জানান, তিনি তার এক আত্মীয়কে নিয়ে নিজেদের কেনা ও পৈত্রিক জমির নামজারি ও জমাভাগ করার জন্য আবেদন করেন। এ কাজটি করতে অফিস খরচের নামে ইউনিয়ন সহকারী ভ‚মি কর্মকর্তা ১৬ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু তিনি এতে রাজি না হওয়ায় তার নথি দুটি গায়েব হয়ে যায়।
উক্ত তহশিল অফিসে রয়েছে দালালদেরও দৌরাত্ম্য। কর্মকর্তাদের নিজস্বভাবে নিয়োগ করা দালাল বিভিন্ন কার্যক্রমসহ টাকা লেনদেনের বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করেন। ভ‚মি অফিসটিতে দালালরা চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র নিয়ে কাজ করেন। ফলে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে সরকারি দলিলপত্র।
রাজস্ব আদায়ের নামে নিজের পকেট ভারি করার কাজে ব্যস্ত থাকেন সহকারি ভ‚মি কর্মকর্তারা। একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, তাদের জমির ভ‚মি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে গেলে সাত হাজার টাকা দাবি করেন। অবশেষে ছয় হাজার টাকা দিলে তার হাতে ধরিয়ে দেন ১,৬৭০ টাকার রশিদ। ভ‚মি উন্নয়ন করের কোনও চার্ট বা তালিকা জনগণকে অবহিত না করায় ইচ্ছেমত ভ‚মি উন্নয়ন কর আদায় করছেন ভ‚মি কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভ‚মি) মো. জানে আলম বলেন, এসব অভিযোগের বিষয়ে কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।