নাগরিক অধিকার নিয়ে রাখাইনে ফিরতে চাই

50

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল ও বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে রোহিঙ্গা নেতাদের। গতকাল মঙ্গলবার পৃথক এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় রোহিঙ্গা নেতারা উদ্বাস্তু জীবনের অবসান এবং নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে দ্রুত মাতৃভূমি মিয়ানমারের রাখাইনে তাদেরকে ফেরত নেওয়ার দাবি জানান।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয়ে ঘণ্টাব্যাপী চলে বৈঠক। এ সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার কমিশনারের বিশেষ প্রতিনিধি সাবেক আইরিশ প্রধানমন্ত্রী এ্যামন গিলমারসহ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ্যামন গিলমার মিয়ানমার সেনাবাহিনী দ্বারা রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের বর্ণনা ও বিভিন্ন দাবি বিষয়ে রোহিঙ্গাদের বক্তব্য গভীর মনোযোগ সহকারে শোনেন।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটস’র চেয়ারম্যান মাস্টার মহিবুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের আশ্রয়ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা নিরাপত্তাসহ নানা বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন। এখানে প্রতিনিয়ত জীবনের জন্য হুমকি- এমন ঘটনা ঘটছে। এতগুলো মানুষ এক সাথে অবস্থান করায় কোন সামাজিক আচার-আচরণ ও শৃংখলা নেই।
তিনি বলেন, প্রতিনিধি দল বুধবার মিয়ানমার সফরে যাবেন। তাই তারা আমাদের কাছ থেকে সমস্যাগুলো জানতে চান। আমাদের ন্যায় নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মৌলিক অধিকারহারা হতে পারে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম- এমন আশঙ্কার কথা বলেছি। তাই যত দ্রুত সম্ভব নূন্যতম মৌলিক অধিকার দিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে নিজ দেশ মিয়ানমারের রাখাইনে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সফররত বিশেষ প্রতিনিধি দলের সাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, কুতুপালং ১-২ ক্যাম্পে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সিনিয়র সচিব মো. রেজাউল করিমসহ সরকারী কর্মকর্তা, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ছাড়া রোহিঙ্গাদের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেন।
কুতুপালং -২ নং ক্যাম্পের ডি-৫ বøকের একটি কমিউনিটি সেন্টারে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ইইউ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের সেবায় করা একাধিক স্থাপনা এবং রোহিঙ্গাদের উৎপাদিত সাবান ফ্যাক্টরি ও ঘুমধুম ট্রানজিট ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।
এদিকে গতকাল বিকেলে চীনের রাষ্ট্রদূত জাঙ্গ ঝু উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গাক্যাম্প পরির্দশনে এসে রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। এ সময় রাষ্ট্রদূত বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন দুর্ভোগ ও ভোগান্তির ব্যাপারে চীন ও তার দেশের জনগণ ওয়াকিবহাল। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করে রাখাইনে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ সময় চীনের মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গারা রাখাইনে স্ব স্ব ভিটে মাটিতে ফিরে যেতে সম্মত আছে কিনা জানতে চেয়েছেন।
বৈঠকে কুতুপালং -১ ও ২ নং ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সিনিয়র সহকারী সচিব মো. রেজাউল করিম ছাড়াও আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটস’র চেয়ারম্যান মাস্টার মহিবুল্লাহ ও ভাইস চেয়ারম্যান মাস্টার নুরুল আলমের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল অংশ নেন।
চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকারসহ পূর্ণ নাগরিকত্ব দিয়ে মিয়ানমারকে ফেরৎ নিতে হবে। এতদিন জানতাম না রোহিঙ্গাদের উপর বর্বর ঘটনা ঘটিয়েছে মিয়ানমার। কুতুপালং ক্যাম্পে এসে তাদের সাথে কথা বলে সঠিক তথ্য জানলাম।
উখিয়ার কুতুপালং ২ নং ক্যাম্প ডি-৫ বøকের ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ের সরকারি কর্মকর্তা ও রোহিঙ্গা নেতাদের সাথে কথা বলে তিনি রোহিঙ্গাদের উপর জুলুম, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়ন, অগ্নিসংযোগের ঘটনা জানলেন বলে জানান মাস্টার নুরুল আলম।
ক্যাম্প ইনচার্জের কর্যালয়ে ৯ জন রোহিঙ্গা নেতা ১ জন মহিলা রোহিঙ্গা নেত্রীর সাথে রাষ্ট্রদূত কথা বলেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ স্বাধীনতা, নাগরিকত্ব, মৌলিক অধিকারসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ফেরত নিতে হবে।