নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভে মুসলিম নারীরা

28

ভারতের রাজধানী দিল্লির শাহিনবাগের খোলা নর্দমা আর বিপজ্জনকভাবে ছড়িয়ে থাকা বিদ্যুতের তারের জঞ্জালের পাশে রঙিন হিজাব পরিহিত শত শত মুসলমান নারীর অবস্থান। ভারতের বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এখানে অবস্থান করছেন তারা। ২৪ ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচিতে চলছে প্রতিবাদী গান আর সরকারবিরোধী স্লোগান।
শাহিনবাগের নারীদের এই অবস্থান কর্মসূচি আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ছে ভারতের বিভিন্ন শহরে, স্থানীয় নারীরা নিজ নিজ এলাকায় একই ধরনের অবস্থান নিচ্ছেন। শাহিনবাগের নারীদের ঘিরে রয়েছে অনেকগুলো পুলিশি ব্যারিকেড। তারপরেও বিভিন্ন পথ পেরিয়ে সন্তানদের সঙ্গে করে নিয়ে হাজির হচ্ছেন নারীরা। মাঝে মাঝে কবি আর গায়কেরা উঠে যাচ্ছেন অস্থায়ী মঞ্চে আর করতালি দিয়ে তাদের উৎসাহিত করছেন অন্যরা।
রাত গভীর হলে গরম কম্বল গায়ে সস্তা মাদুরে গাদাগাদি করে ঘুমিয়ে পড়ছেন কেউ কেউ। এদের মধ্যে রয়েছেন ৯০ বছরের বৃদ্ধারাও। মাঝে মাঝেই স্লোগান উঠছে, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, অর্থাৎ বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।
শাহিনবাগের মতো ভারতের বিভিন্ন স্থানে জড়ো হওয়া নারীদের দাবি একটাই, বিতর্কিত সিএএ প্রত্যাহার। ওই আইনে প্রতিবেশী তিন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে বাদ যাবে মুসলমানেরা।
ভারতজুড়ে বিভিন্ন ধর্ম ও মতের মানুষেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিতর্কিত এই আইনের প্রতিবাদ করছেন। ৬২ বছর বয়সী নাজমা খাতুন বলেন, ‘কাউকে না কাউকে তো সরকারকে বলতে হবে যে, তাদের কালো আইন গ্রহণযোগ্য নয়। সেকারণে মা হিসেবে আমরা প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছি’। শাহিনবাগে জড়ো হওয়া নাজমা খাতুন ও অন্য প্রতিবাদকারীরা মনে করেন, নাগরিকত্ব আইনটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের দেশজুড়ে এনআরসি প্রণয়নের অংশ। তাদের আশঙ্কা, এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে অনেককেই আটককেন্দ্র না হয় অন্য দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপির অন্য নেতারা বারবার বলে আসছেন নতুন নাগরিকত্ব আইনে ভারতীয় নাগরিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। আর ভারতজুড়ে যদি এনআরসি প্রণয়ন করা হয় সেখানে ধর্মীয় বিভাজন করা হবে না।