‘নরকযন্ত্রণা’ থেকে আধুনিক সিস্টেমে আরাকান সড়ক

107

দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর ধরে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে রাস্তা কর্তন করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি.। এ কারণে কার্যত একপাশ বন্ধ ছিল আরাকান সড়কের বহদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত। ফলে ভাঙা আর গর্তে ভরা অপর পাশে লেগে থাকে যানজট। সড়কটিতে সৃষ্ট এমন নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, সংস্কারের পাশাপাশি এ সড়কে প্রয়োগ করা হবে আধুনিক ‘বিআরটি (বাস রেপিড ট্রানজিট)’ পদ্ধতি। আরাকান সড়কে চলাচল আধুনিক, দ্রুত ও আরামদায়ক করতে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে বলে।
আজ বুধবার বেলা ১২টায় আরকানরোডস্থ ওসমানী গ্লাস ফ্যাক্টরির সামনে আরকান রোডের উন্নয়ন কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এ সড়কের উন্নয়ন কাজ উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে মেয়র পূর্বদেশকে জানান, এ সড়কে দীর্ঘ তিন বছর ধরে ওয়াসা ও কেজিডিসিএলসহ বিভিন্ন সংস্থা উন্নয়ন কাজ করেছে। ফলে রাস্তা কর্তন ও গর্ত করা হয়েছিল। যার কারণে সড়ক একপাশ বন্ধ ছিল, অপর পাশে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বুধবার আমরা সড়কটির সংস্কার কাজ উদ্বোধন করবো। তবে এখানে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে, তা হল বিআরটি।
বিআরটি সম্পর্কে মেয়র বলেন, পুরো সড়কটিকে চারটি অংশে ভাগ করা যাবে। একটিতে গণপরিবহন যাবে এবং আরেকটি দিয়ে ফেরত আসবে। বাকি দুইটির একটি করা হবে মোটরবিহীন গাড়ির জন্য। শেষ অংশটি উন্মুক্ত করা হবে অন্যসব যানবাহনের জন্য। ফলে ওই সড়ক দিয়ে অফিসগামী বাসগুলো দ্রæত যেতে পারবে। এছাড়া পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে আরামদায়ক হবে যোগাযোগ। তবে এ আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করতে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের কঠোর অবস্থান লাগবে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম ওয়াসার শেখ রাসেল (মদুনাঘাট) প্রকল্পের পাইপলাইন বসানোর জন্য ২০১৬ সালের শুরুতে আরাকান সড়কের নগর অংশের ৬ দশমিক ৩ কিলোমিটারের মধ্যে বহদ্দারহাট মোড় থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়কের একপাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে ওয়াসা। এরপর দীর্ঘ তিন বছর ধরে ব্যস্ত সড়কে পাইপলাইন বসানোর কাজ চলে। তখন থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত সড়কের একপাশ বন্ধ। আরেক পাশ দিয়ে চলছে গাড়ি। ওই অংশও অনেক স্থানে ভাঙা। আর এর মধ্যে ফ্লাইওভারের র‌্যাম্প নির্মাণের জন্য ২০১৬ সালের অক্টোবরে বহদ্দারহাট মোড় থেকে টার্মিনালমুখি সড়কের একপাশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আবার বহদ্দারহাটমুখি যানবাহন বাসটার্মিনাল হয়ে নতুন চান্দগাঁও থানার সামনে দিয়ে চলাচল করে আসছে।
এরকম যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিভিন্ন সময় আন্দোলনেও নেমেছিলেন এলাকাবাসী। এছাড়া এ নিয়ে গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নানা সময় লেখালেখি হয়েছিল।
ওই সময় সিটি কর্পোরেশন দাবি করছিল, ওয়াসা তাদের সড়কটি হস্তান্তর না করায় সিটি করপোরেশন সংস্কার কাজ শুরু করতে পারছে না। তবে এ বছরের শুরুর দিকে চট্টগ্রাম ওয়াসা সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করে। এরপর থেকে সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন।
সিটি কর্পোরেশনের বাস্তবায়নাধীন ১২৩০ কোটি টাকার ‘সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ’ প্রকল্পের অধীনে ১২টি লটে ৭২ কোটি ব্যয়ে এ সড়কের সংস্কার কাজ করা হবে। ইতোমধ্যে এর টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। সিটি করপোরেশনের দুই ডিভিশনের অধীনে তা বাস্তবায়ন করা হবে।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ পূর্বদেশকে বলেন, বুধবার সংস্কার কাজ উদ্বোধন হবে। এ সড়কের বেহাল দশার কারণে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের কষ্ট হয়েছে। এ সড়কে এখন বিআরটি সিস্টেম প্রয়োগ করা হবে। ফলে দুর্ভোগ থেকে আধুনিক সিস্টেমে যাচ্ছে আরাকান সড়ক।
তিনি আরও বলেন, প্রথমদিকে এখন যে পাশ বন্ধ রয়েছে, সেটাই সংস্কার করবো। তারপর ওই পাশটি উন্মুক্ত করে বর্তমানে চালু পাশটি সংস্কার করবো। যাতে মানুষের যাতায়াতপথ উন্মুক্ত থাকে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে ১২ লটে এ কাজ শেষ করার আশা রাখছি।
প্রসঙ্গত, নগরের ব্যস্ততম এ সড়কের দুই পাশে রয়েছে কালুরঘাট শিল্প এলাকা, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল ও বিনোদনকেন্দ্র স্বাধীনতা কমপ্লেক্স। এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে নগরীর মোহরা ও চান্দগাঁও ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। এছাড়া উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার একাংশ, কাপ্তাই উপজেলা এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর মানুষের নগরের সঙ্গে যোগাযোগ এ পথে। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন যাত্রীবাহী বাস ও টেম্পু, পণ্যবাহী ট্রাক-মিনিট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে।
এ কারণে পুরাতন চান্দগাঁও থানার সরাফত উল্লাহ পেট্রোল পাম্প থেকে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল, চান্দগাঁও আবাসিকের প্রবেশ পথের সামনে, কালুরঘাট সিএন্ডবি, বাহার সিগনাল ও কাপ্তাই রাস্তার মাথাসহ বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘ যানজট লেগে থাকছে। এছাড়া সড়কের একপাশের দুরবস্থার জন্য দোকানগুলোতে বেচাকেনা অর্ধেক কমে গেছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।