‘নমুনার অভাবে’ পরীক্ষাই বন্ধ হল সিভাসু’র ল্যাবে

26

চট্টগ্রামে গেল মাসেও করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ফল পেতে লেগে যেত কয়েক দিন, অনেকের মৃত্যুর পর জানা যায় তিনি আক্রান্ত ছিলেন; সক্ষমতার তুলনায় নমুনা বেশি থাকায় ল্যাবগুলোতে জট লেগে থাকায় এই দশা হয়েছিল। সেখানে এখন পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা পাচ্ছে না বন্দরনগরীর ল্যাবগুলো। নমুনার অভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি ল্যাবে গত তিন দিন ধরে পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
নমুনা ও পরীক্ষা কমায় তাই যৌক্তিকভাবেই কমে গেছে প্রতিদিন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। গেল মাসের শেষ দিকে যেখানে প্রতিদিন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে তিনশ’র কাছাকাছি পৌঁছেছিল, এখন নেমে এসেছে একশ’র আশেপাশে।
হঠাৎ করে নমুনা কমে যাওয়ার পেছনে পরীক্ষার জন্য ফি নির্ধারণের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া লক্ষণহীনদের পরীক্ষায় নিরুৎসাহিত করা, দ্বিতীয়বার পরীক্ষা না করানো, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পজিটিভ হলে সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কায় পরীক্ষায় অনীহার কথা বলছেন তারা।
সরকারি ব্যবস্থায় কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য ফি নির্ধারণ করে গত ২৯ জুন প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতে বুথে ও হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর নমুনা পরীক্ষায় ২০০ টাকা এবং বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহ করলে ৫০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়। এর দুই দিন আগে ২৭ জুন চট্টগ্রাম জেলায় কিট সংকটের কারণে মাত্র ৫৯০ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল।
প্রজ্ঞাপন জারির দিন ২৯ জুন চট্টগ্রাম জেলায় সর্বোচ্চ ১৫৯৪টি নমুনা পরীক্ষা হয় জেলার ছয়টি ও কক্সবাজারের একটি ল্যাবে। এতে একদিনে জেলার সবচেয়ে বেশি ৪৪৫ জনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। এরপর ৩০ জুন ১৩৪৫ জনের, ১ জুলাই ১৩৭৩ জনের এবং ২ জুলাই ১৩২৩ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়। এরপর ৭ জুলাই নমুনা পরীক্ষা হয় ১৪৭১ জনের।
তারপর থেকেই কমতে শুরু করে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা। ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে ১১ জুলাই ৪২৫ জন এবং ১২ জুলাই ৫৯৭ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, যা দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ। এমনকি নমুনা না থাকায় গত তিন দিন ধরে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) ল্যাবটিতে কোনো পরীক্ষাই হয়নি।
সিভাসুর ল্যাব ইনচার্জ ড. জুনায়েদ সিদ্দিকী গতকাল সোমবার বলেন, প্রতিদিন আড়াইশর মতো নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা থাকলেও শনিবার থেকে ল্যাবে পরীক্ষা বন্ধ। আমাদের কাছে কোনো নমুনা নেই।
এই ল্যাবে নমুনা আসে ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিসেস (বিআইটিআইডি) থেকে। সেখানেও নমুনা আগের এক তৃতীয়াংশ মাত্র।
বিআইটিআইডিতে জেলার ১৪টি উপজেলা, ব্র্যাকের দু’টি বুথ, পুলিশ, র‌্যাব ও শিল্প পুলিশের সদস্যদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
বিআইটিআইডির ল্যাব ইনচার্জ ডা. শাকিল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের এখানে দিনে পাঁচশ থেকে ছয়শ নমুনা আসত। তাই সব একদিনে পরীক্ষা করা যেত না। অথচ গতকাল দিনের নমুনা দিনেই পরীক্ষা করে ফল দিয়েছি। ফি নির্ধারণের পর থেকে নমুনা কমতে শুরু করে। সামর্থ্যহীন ও লক্ষণহীনরা এখন আর পরীক্ষা করাচ্ছেন না। পাশাপাশি শুরুতে প্রয়োজন না থাকলেও কেউ কেউ পরীক্ষা করিয়েছেন। এখন সেই উৎসাহ কমেছে এবং সচেতনতা বেড়েছে। তাই নমুনা কম আসছে’।
ডা. শাকিল আহমেদ বলেন, ‘উপজেলাগুলো থেকে লক্ষণ থাকলেই নমুনা সংগ্রহ করে পাঠাতে বলেছি। যাতে তারা পরীক্ষার আওতায় আসেন’। খবর বিডিনিউজের
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির আহব্বায়ক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘শুরুতে নমুনা দিয়ে ১৪-১৫ দিন পর ফল পাওয়ায় এবং করোনা ভাইরাস নিয়ে সচেতনতা বাড়ায় নমুনা পরীক্ষা কমেছে। এখন জ্বর সর্দি কাশি হলে অনেকে বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু সামাজিকভাবে সমস্যায় পড়তে পারেন ভেবে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করাচ্ছেন না। আবার উপসর্গহীন অনেকে জানেই না যে তারা আক্রান্ত। তারাও পরীক্ষার আওতায় আসছেন না’।
নমুনা পরীক্ষা কমার বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘বিনা প্রয়োজনে এবং দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষা নিরুৎসাহিত করায় টেস্ট কমেছে। লক্ষণহীনদের নমুনাও সংগ্রহ করা হচ্ছে না। ফি নির্ধারণের পর অপ্রয়োজনে কেউ আর টেস্ট করাচ্ছে না। আক্রান্তদের সুস্থ হওয়ার হারও ভালো। চট্টগ্রামে হাসপাতালগুলোর ৪০ শতাংশ শয্যাই এখন খালি’।
তিনি বলেন, দরিদ্র, সরকারি চাকরিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, উপজেলায় ভিজিএফ কার্ড এবং নগরীতে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র দেখালে সামর্থ্যহীনরা বিনা পয়সায় পরীক্ষা করাতে পারবেন।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘শনাক্তের হার কমছে। কিন্তু সংক্রমণ নিম্নমুখী কি না সে বিষয়ে এখনই কিছু মন্তব্য করতে চাই না। আসন্ন ঈদুল আজহায় যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কিছু করা সম্ভব হয় এবং এরপর এই হার আর উর্ধমুখী না হয় তখনই বলা যাবে সংক্রমণ কমছে, তার আগে নয়’।