নবাব খাজা আহসান উল্লাহ

313

খাজা আহসানুল্লাহ (১৮৪৬-১৯০১) ঢাকার নওয়াব। ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ২২ আগস্ট ঢাকার বিখ্যাত নওয়াব পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। তাঁর পিতার নাম খাজা আব্দুল গণি এবং পিতামহের নাম খাজা আলীমুল্লাহ। বাল্যকালে তিনি গৃহশিক্ষকের নিকট উর্দু-আরবি শেখেন এবং পরবর্তী জীবনে ফারসি ও ইংরেজিতেও বুৎপত্তি লাভ করেন। নওয়াব আহসানুল্লাহ অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও ধীরস্থির প্রকৃতির লোক ছিলেন। মাত্র বাইশ বছর বয়সে তিনি ঢাকা নওয়াব এস্টেট পরিচালনার দায়িত্বপান। ঢাকার গোবিন্দপুর পরগনা কিনে তিনি এস্টেটের আয়তন বৃদ্ধি করেন। ১৮৭২ সালে ঢাকার নওয়াবদের বাসভবনের পুননির্মাণ কাজ শেষ হলে তাঁর নামে প্রাসাদটির নামকরণ করা হয় আহসান মঞ্জিল। ১৮৬৪ সাল থেকে তিনি দীর্ঘদিন ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনার ও অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। ঢাকা পৌর এলাকায় গোরস্থানসমূহ নির্মাণ ও উন্নয়নে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। আহসানুল্লাহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে ৫০ লক্ষাধিক টাকা দান করেন। এতদঞ্চলে এমন কোন মসজিদ, দরগাহ কিংবা জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান ছিল না যা তাঁর দান থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য দানের মধ্যে ছিল ঢাকার হোসেনী দালান পুননির্মাণে (১৮৯৭) ১ লক্ষ টাকা, ঢাকায় প্লেগ নিবারণে (১৮৯৮) ১ লক্ষ টাকা, কুমিল্লা শহর উন্নয়নে (১৮৯৮) ৮০ হাজার টাকা, বড়লাটের দুভির্ক্ষ তহবিলে ৫০ হাজার টাকা, মক্কায় নহরে জুবায়দা সংস্কারে ৬০ হাজার টাকা, মিটফোর্ড হাসপাতালে বিভিন্ন দান প্রায় ১ লক্ষ টাকা ও লেডি ডাফরিন মহিলা হাসপাতাল (ঢাকা) নির্মাণে (১৮৮৮) ৫০ হাজার টাকা ইত্যাদি। ঢাকার সার্ভে স্কুলটিকে ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে উন্নীত করার জন্য তিনি ১ লক্ষ ১২ হাজার টাকা দানের ওয়াদা করেন। তাঁর পুত্র নওয়াব খাজা সলিমুল্লাহ ১৯০২ সালে এ অর্থ প্রদান করেন। প্রতিবছর ৩০/৪০ জন হাজী তাঁর অর্থে হজ্বে যেতেন। তিনি পটুয়াখালী বেগম হাসপাতাল (১৯০০), মাদারীপুর মসজিদ ও মাদ্রাসা (১৮৮৬-৮৭) এবং বাইগুন বাড়ী মসজিদ নির্মাণ করেন। তিনি সাড়ে চার লক্ষ টাকা ব্যয় করে ঢাকা শহরে প্রথম বিজলিবাতি দানের ব্যবস্থা করেন। ১৯০১ সালের ৭ ডিসেম্বর উক্ত বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উদ্বোধন করা হয়। তিনি ১৮৯৯ সালে ঢাকা মোহামেডান ইউনিয়ন স্পোর্টিং ক্লাব প্রতিষ্ঠায় পৃষ্টপোষকতা দেন। তিনি কলকাতার সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন এবং এশিয়াটিক সোসাইটি এর সদর্স ছিলেন। ঢাকায় তিনি মোহামেডান লিটারারি সোসাইটি এর শাখা প্রতিষ্ঠা করেন।
কর্ম ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে তিনি উর্দু ও ফারসি ভাষায় কবিতা রচনা করতেন। আহসানুল্লাহর কাব্যনাম শাহীন (রাজপাখী)। ‘কুল্লিয়াতে শাহীন’ নামে তাঁর একটি উর্দু-ফারসি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর নির্দেশনায় ঢাকা থেকে ১৮৮৪ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারিতে ‘আহসানুল কাসাস’ নামক একটি উর্দু পত্রিকা প্রকাশিত হয়। তিনি নিয়মিত ডাইরি লিখতেন। তাঁর লেখা ‘তারিখে খান্দানে কাশ্মীরিয়াহ’ নামক গ্রন্থটির (অপ্রকাশিত) একটি পান্ডুলিপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থগারে রয়েছে। তিনি গীতিকার, নাট্যকার ও কন্ঠশিল্পী ছিলেন। তিনি প্রচুর ঠুমরী গান রচনা করেন। তাঁর উর্দু নাটকগুলি নওয়াব বাড়ির মঞ্চে অভিনয় করা হতো। তিনি একজন সৌখিন ফটোগ্রাফার ছিলেন এবং কলকাতার ফটোগ্রাফি সোসাইটির সদস্য হয়েছিলেন। রাজনীতির ক্ষেত্রে তিনি স্যার সৈয়দ আহমদের ন্যায় মুসলিম স্বাতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন।
খাজা আহসানুল্লাহ ১৮৭১ সালে খান বাহাদুর, ১৮৭৫ সালে নওয়াব, ১৮৯১ সালে সি.আই.ই, ১৮৯২ সালে নওয়াব বাহাদুর এবং ১৮৯৭ সালে কে.সি.আই.ই উপাধি পান। তিনি দুবার (১৮৯০ ও ১৮৯৯ ) বড়লাটের আইন সভার সদস্য মনোনীত হন। তাঁর নামে ঢাকার কুমারটুলির একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। তিনি ১৯০১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকায় পরলোক গমন করেন। বেগম বাজারে পারিবারিক গোরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। সূত্র : ইন্টারনেট