নতুন ভবন নির্মাণের টেন্ডার আগামী মাসে

187

চট্টগ্রামের শত বছরের পুরানো ঐতিহ্যের জেলা পরিষদ ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে। সেখানকার ৪০শতক জায়গার উপর ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হবে ১৮তলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন ভবন। নকশা চ‚ড়ান্তের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী মাসেই ভবন নির্মাণে দরপত্র আহবান করা হবে।
ইতোমধ্যে পুরানো জেলা পরিষদ ভবন, ট্রেনিং সেন্টার ও ডরমেটরী ভবন ভাঙার জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে পুরানো ভবনগুলো ভাঙার কাজ শেষ হলে জেলা পরিষদের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলা পরিষদের নিজস্ব অর্থায়নে আগামী তিন বছরের মধ্যেই ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম পূর্বদেশকে বলেন, চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। ভবনটি নির্মিত হলে অত্র এলাকার সৌন্দর্য্য বাড়ার পাশাপাশি জেলা পরিষদের আয়ের উৎসও বাড়বে। কারণ এ ভবনটি হবে অফিস কাম বাণিজ্যিক ভবন। ভবন নির্মাণের অফিসিয়ালি সব কর্মকান্ড শেষ হয়েছে। আগামী মাসেই নতুন ভবন নির্মাণে টেন্ডার আহবান করা হবে।
জেলা পরিষদ অফিস সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ জেলা পরিষদের ভবনটি ভেঙ্গে নতুন বহুতল বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। ভবন নির্মাণের অনুমোদনের সম্ভাব্যতা দেখা দিলে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরে কাছে ভবনটি হেরিটেইজ হিসেবে সংরক্ষণযোগ্য কিনা সে বিষয়ে মতামত জানতে চেয়ে চিঠি পাঠায় মন্ত্রণালয়। একইভাবে ভবন নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ের কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। এরমধ্যে প্রতœতাত্তি¡ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ভবনটি পরিদর্শন করেন এবং এটি হেরিটেইজ হিসেবে সংরক্ষণযোগ্য নয় বলে মন্ত্রণালয়ে মতামত দেন। এরপরেই মূলত ভবনের নকশার কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের অক্টোবরে ভবনটি নির্মাণে এলইউসি (ল্যান্ড ইউজার সার্টিফিকেট) দেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
প্রকৌশল বিভাগ জানায়, ১৮তলার নির্মিতব্য ভবনটি হবে একটি অত্যাধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত ভবন। এ ভবনের নিচে গাড়ি পার্কিয়ের সুবিধার্থে থাকবে দুটি বেজমেন্ট। বাকি ১৬ তলায় থাকবে জেলা পরিষদ অফিস কাম বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ভবনের নিচের চারতলায় একটি মসজিদ, বিভিন্ন ব্যাংকের অফিস, আধুনিক কনফারেন্স কক্ষ, অডিটরিয়াম, হলরুম ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থাকবে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় থাকবে জেলা পরিষদের নিজস্ব অফিস। সপ্তম থেকে ১৫ তলা পর্যন্ত হবে নামিদামি গ্রুপ অব কোম্পানিজের করপোরেট অফিস। ১৬ তলায় থাকবে জেলা পরিষদের ডরমেটরি, রেস্ট হাউজ ও ক্যাফটেরিয়া।
১৮৮৭ সালের ৫ এপ্রিল গঠিত জেলা পরিষদের মূল ভবনটিও সেসময় নির্মিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে দ্বিতীয় তলায় বর্ধিত করা হয় ভবনটি। ২০০১ সালের দিকে পার্শ্ববর্তী ডরমেটরি ও ট্রেনিং সেন্টার নির্মিত হয়। এ তিনটি পুরাতন ভবন ভাঙার জন্য দরপত্র আহবান করে গত ১২ মার্চ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় জেলা পরিষদ। আগামী ৭ এপ্রিল দরপত্র ক্রয় ও পরদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত জমাদানের শেষ সময় রাখা হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্নের দুই মাসের মধ্যে ভবনগুলো ভেঙে ফেলে কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, পুরাতন ভবন নিলাম টেন্ডার শেষ। আমরা নকশা করে এলজিইডিকে দিয়েছি। উনারা কিছু বিষয় চেক করে আমাদেরকে সংশোধনী দিয়েছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে চ‚ড়ান্ত নকশা হয়ে যাবে। ভবনটি নির্মাণে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে সব ধরণের কারিগরি সহায়তা দিবে। আগামী একমাসের মধ্যেই নতুন ভবন নির্মাণের টেন্ডারে যাবো। নিচের দুটি ফ্লোর গাড়ি পার্কিং বেজমেন্ট রেখে বাকি ১৬ তলায় অফিস ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান করা হবে। চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জে অনেক করপোরেট অফিস। সরু গলি ও অবকাঠামোগত কারণে সেগুলো মানুষের দৃষ্টিসীমায় কম থাকে। আমাদের এ ভবনে করপোরেট অফিস হলে সাধারণ মানুষের সাথে অফিসগুলোর সংস্পর্শ আরো বাড়বে। জেলা পরিষদের সম্পূর্ণ নিজস্ব আয়ের অর্থে ভবনটি নির্মাণ করা হবে বলেও জানান তিনি।