নতুন প্রজন্মের হাত ধরেই আসবে নতুন বাংলাদেশ

38

বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘লাইফলাইন’ খ্যাত বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম। বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মূল কারণ নিয়ে বিতর্কে নামেন ছায়া সংসদের সরকারি দল ও বিরোধী দল। ‘এই সংসদ মনে করে, সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা ও সিডিএ’র সমন্বয়হীনতার কারণে চট্টগ্রামের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন নিশ্চিত হচ্ছে না।’
এ বিষয়ে গতকাল নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিট মিলনায়তনে বিতর্কে অবতীর্ণ হয়ে নিজেদের বিভিন্ন যুক্তি-পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের বিতার্কিকরা। আর এরই মাধ্যমে শেষ হলো ১৭ দিনব্যাপী রবি-দৃষ্টি জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০১৯ এর চূডান্ত প্রতিযোগিতা।
এতে স্কুল পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চ বিদ্যালয় এবং রানার আপ হয় চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ের চূড়ান্ত বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় রানার আপ এবং সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ চ্যাম্পিয়ন ও বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজ রানার আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
পরে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ এমপি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রবি’র সিইও মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (পরিকল্পনা) সামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সানশাইন গ্রামার স্কুলের অধ্যক্ষ সাফিয়া গাজী রহমান।
দৃষ্টি চট্টগ্রামের সভাপতি মাসুদ বকুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে আরো বক্তব্য রাখেন বিতর্ক প্রতিযোগিতার আহবায়ক ও কর্ণফুলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুল তাবরিজ সনেট, দৃষ্টির সহ সভাপতি বনকুসুম বড়–য়া নুপুর ও শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাবের শাহ, যুগ্ম সম্পাদক সাইফুদ্দিন মুন্না, প্রতিযোগিতার সমন্বয়কারী ও দৃষ্টির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আরফাত।
অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ বলেন, নতুন প্রজন্মের হাত ধরেই নতুন বাংলাদেশ আসবে। আমাদের মনে রাখতে হবে জীবন মানেই সংগ্রাম। জীবনের অভিষ্ট লক্ষ্য পৌঁছাতে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছাতে লড়াই করার প্রতিজ্ঞা ও প্রচেষ্টা রাখতে হবে। তিনি দৃষ্টি চট্টগ্রামকে একটি সফল সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, দৃষ্টি আগামী বাংলাদেশ বিনিমার্ণে ইতিবাচক কাজ করে যাচ্ছে। তাই দৃষ্টির সাথে থাকাটা আমাদের দায়িত্ব।
তিনি আরো বলেন, একটি গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে বিতর্ক চর্চার ভূমিকা অতুলনীয়। বিতর্ক চর্চার প্রসার আরো বাড়াতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের নিয়ে শীঘ্রই বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে জাতীয় পর্যায়ের স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতা শুরু হতে যাচ্ছে।
রবি আজিয়াটা লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, শুধু তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার করলেই হবে না, তার ইতিবাচক ব্যবহার জানতে হবে। বর্তমানের বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা তথ্য-প্রযুক্তি খাতে সারা বিশ্বে নানা ভাবে তাদের সাফল্যের ছাপ রাখছে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (পরিকল্পনা) সামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিতর্ক করে হয়তো কোন টাকা আসবে না কিন্তু তৈরি হবে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব, তৈরি হবে স্বপ্নদ্রষ্টা। শিক্ষার্থীদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাফল্যের মাধ্যমে একটু একটু করে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
সভাপতির বক্তব্যে মাসুদ বকুল বলেন, দৃষ্টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত ২৭ বছর ধরে বিতর্ক নিয়েই কেন কাজ করছে কারণ, দৃষ্টি বিশ্বাস করে বিতার্কিকদের মাঝে আছে সেই স্পৃহা, সেই প্রাণচাঞ্চল্য যেটি স্বপ্নের পরিধিকে বাড়ায়, তৈরি করে জীবনবোধ, বৃদ্ধি করে জীবনের আকাক্সক্ষা। একজন বিতার্কিক কখনো নিজেকে একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মাঝে আবদ্ধ ভাবতে পারে না। সে পুরো বিশ্বের, সে পুরো জাতির অন্যতম অংশ। তিনি বলেন, বিতর্ক চর্চার মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করছি দেশকে এমন এক প্রজন্ম উপহার দেয়ার, যারা সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলার সৎসাহস রাখবে, যারা সৃজনশীল হবে, যারা অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক হবে।
এবারের এই প্রতিযোগিতায় স্কুল বিতর্কের ২৭তম আয়োজনে চট্টগ্রামের ৩২টি স্কুল, ১৬তম বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্কে সারা দেশের ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং ১৭তম কলেজ বিতর্কে ১৬টি কলেজসহ ৮৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।