নতুন চ্যালেঞ্জ শুরু

52

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর আজ রবিবার থেকে শর্ত সাপেক্ষে খুলছে সরকারি-বেসরকারি অফিস। গত ২৮ মে সাধারণ ছুটি না বাড়িয়ে ১৫ জুন পর্যন্ত কঠোরভাবে বিধি-নিষেধ মেনে সার্বিক কার্যাবলী/চলাচলের পক্ষে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
এর আগে ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল প্রথম দফায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর কয়েক দফায় সাধারণ ছুটি বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত ১৯ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ঘোষণা অনুযায়ী ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে এর আগে ২৬ এপ্রিল রবিবার থেকে ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগ এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরকারের ১৮টি মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ও বিভাগগুলো খুলেছে। এসব কার্যালয়ে কাজ চলছে সীমিত আকারে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দীর্ঘ সময় সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী বাসায় অবস্থান করছেন সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা। অনেকেই জানিয়েছেন, বাসায় অবস্থান করলেও তারা কেউ কেউ অনলাইনে দায়িত্ব পালন করছেন।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই মন্ত্রিপরিষদের তিনটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভা হয়েছে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। সে সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি মিলনায়তন থেকে যুক্ত হয়েছেন। ওই সভায় সরকারের আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) চূড়ান্ত করা হয়।
গত ২৬ এপ্রিল থেকে যেসব মন্ত্রণালয়ে কাজ চলেছে সেগুলো হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও পাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
এদিকে, আজ থেকে স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু হচ্ছে। পূর্বের সময়সূচি অনুযায়ী ব্যাংকের লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। আর লেনদেন পরবর্তী ব্যাংকের আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য শাখা ও প্রধান কার্যালয় বিকাল ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
তবে করোনা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সীমিত ব্যাংকিং কার্যক্রম চলবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আজ থেকে দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু হচ্ছে। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম তিন জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য প্রকাশ পেলে শেয়ারবাজারে ধস নামা শুরু হয়। এ সময় ডিএসই এর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসই-এক্স একদিনে রেকর্ড ২৭৯ পয়েন্টে নেমে আসে। এরপর কয়েক দফায় দরপতন হতে থাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৯ মার্চ থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেনের সময় একঘণ্টা কমিয়ে আনা হয়। এরপরও পতন ঠেকানো যায়নি। পরবর্তী সময়ে প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এতে শেয়ারবাজারের পতন কিছুটা থামে। তবে ২৬ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে শেয়ারবাজারের লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। বিএসইসির অনুমতি সাপেক্ষে রবিবার থেকে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত শেয়ার লেনদেন হবে।
এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জীবনের পাশাপাশি জীবিকার গতি সচল রাখতে শেখ হাসিনা সরকার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে সাধারণ ছুটি না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, রবিবার (আজ) থেকে অফিস পুরোদমে চালু হলেও বয়স্ক, অসুস্থ ও গর্ভবতী নারীদের আপাতত অফিসে আসতে হবে না। আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত স্কুল, কলেজ বন্ধ থাকবে। নাগরিক জীবন সুরক্ষিত রেখে আমরা সীমিত আকারে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালু করতে যাচ্ছি। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিসগুলো নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত আকারে চালু হবে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডও চলবে। হাটবাজার, দোকান-পাট সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো খুললেও মিটিং অনলাইনেই করতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থল ত্যাগ করা যাবে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে কর্মরত ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার রাজীব দাস জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্বের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরাই সচিবালয়ে আসবেন। আপাতত কোনও দর্শনার্থীকে সচিবালয়ে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
সরকারি-বেসরকারি অফিস চালুর ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ১৩ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ১. দফতরের বাইরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জীবাণুমুক্তকরণ টানেল স্থাপনের ব্যবস্থা নিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। ২. অফিস চালু করার আগে অবশ্যই প্রতিটি অফিস কক্ষ, আঙিনা, রাস্তাঘাট জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ৩. প্রত্যেক মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রবেশ পথে থার্মাল স্ক্যানার, থার্মোমিটার দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে অফিসে প্রবেশ করাতে হবে। ৪. অফিস পরিবহনগুলো অবশ্যই জীবাণুনাশক দিয়ে শতভাগ জীবাণুমুক্ত করতে হবে। যানবাহনে বসার সময় ন্যূনতম তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং সবাইকে মাস্ক (সার্জিক্যাল মাস্ক অথবা তিন স্তর বিশিষ্ট কাপড়ের মাস্ক, যা নাক ও মুখ ভালোভাবে ঢেকে রাখবে) ব্যবহার করতে হবে। ৫. সার্জিক্যাল মাস্ক শুধু একবার ব্যবহার করা যাবে। কাপড়ের মাস্ক সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে আবার ব্যবহার করা যাবে। ৬. যাত্রার আগে এবং যাত্রাকালে পথে বার বার হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। ৭. খাওয়ার সময় শারীরিক দূরত্ব (ন্যূনতম তিন ফুট) বজায় রাখতে হবে। ৮. প্রতিবার টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে জীবাণুমুক্তকরণ নিশ্চিত করতে হবে। ৯. অফিসে কাজ করার সময় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ১০. কর্মস্থলে সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এবং ঘন ঘন সাবান পানি বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। ১১. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধের সাধারণ নির্দেশনাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি নিয়মিত মনে করিয়ে দিতে হবে এবং তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ভিজিলেন্স টিমের মাধ্যমে মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। ১২. দৃশ্যমান একাধিক স্থানে ছবিসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষার নির্দেশনা ঝুলিয়ে রাখতে হবে। ১৩. কোনও কর্মচারী অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।