নতুন আবাসন প্রকল্পের খোঁজে সিডিএ

306

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নেয়া সর্বশেষ আবাসন প্রকল্প অনন্যা-২। প্রথম প্রকল্পে ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় অনন্যা দ্বিতীয় প্রকল্পের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। সে প্রকল্পের অনুমোদনও মেলে। তবে খরচ বেড়ে যাওয়াতে এ প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় নতুন আবাসন প্রকল্পের খোঁজে নেমেছে সংস্থাটি। পাহাড়তলী মৌজায় ইতিমধ্যে জমির খোঁজও মিলেছে। মানুষের ক্রমাগত চাপ সামলাতে সিডিএ নতুন আবাসন প্রকল্পটি দ্রুত সময়ের মধ্যে অনুমোদনের জন্য পাঠাবে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, নগরীর আবাসন সমস্যা প্রকট। অনন্যার পর অনন্যা-২ এর কাজ নানা কারণে আর হয়নি। এখন জমির মূল্য বেড়ে গেছে। এতে অনন্যা-২ এ যে দাম হবে এতে মানুষ কিনতে আগ্রহী হবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ আছে। আমরা নতুন কিছু জায়গার খোঁজ করেছি। পাহাড়তলী মৌজায় জমি পাওয়া গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো। কম মূল্যের মধ্যে আবাসনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে। সবকিছু বিবেচনা করেই আমরা প্রকল্প গ্রহণ করবো।
জানা যায়, ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণের হার বেড়ে যাওয়ায় অনন্যা দ্বিতীয় প্রকল্পে হোঁচট খায় সিডিএ। ২০১৭ সালের প্রথম দিকে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পেলেও এখনো ভূমি অধিগ্রহণের কাজই শুরু করতে পারেনি সংস্থাটি। এ প্রকল্পে ৪১৮ দশমিক ৭৩ একর জায়গায় তিন হাজার প্লট নির্মাণের পরিকল্পনা ছিলো সিডিএ’র। ভূমির ক্ষতিপূরণ মূল্য তিনগুণ হওয়াতে প্রকল্পের ব্যয়ও তিনগুণ বেড়ে যায়। এতে প্রকল্পটি সিডিএ’র ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এবং বেশি মূল্যের আবাসন প্রকল্প হিসাবে খ্যাতি পায়। সিডিএ’র অন্যান্য প্রকল্পে জামানত ৫ লাখ টাকা হলেও এ প্রকল্পের জন্য তা দ্বিগুণ এবং কাঠাপ্রতি দরের ক্ষেত্রেও সবচেয়ে বেশি মূল্য নির্ধারণ করার পরিকল্পনা করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ৪১৩ একর নাল জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছিল। তবে সিডিএ’র নেয়া সব প্রকল্পে নিম্নবিত্তরা উপেক্ষিত বলে অভিযোগ আছে। এ অবস্থায় নতুন আবাসন প্রকল্প কম মূল্যের এবং নিম্নবৃত্তের আয়ত্তের মধ্যে থাকতে পারে।
সিডিএ’র বোর্ড সদস্য কে এম শাহজাহান বলেন, চেয়ারম্যান মহোদয় নতুন আবাসন প্রকল্প নিয়ে সিদ্ধান্ত চাচ্ছেন। অনন্যা-২ বাতিল হবে না। উপযুক্ত দামে কিভাবে নেয়া যায় সে চেষ্টা চলছে। নতুন প্রকল্পের জন্য দক্ষিণ পাহাড়তলী মৌজায় জমি খোঁজা হচ্ছে। হাটহাজারী রোডে ফতেয়াবাদে জমি আছে। মূল শহরের কাছে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো এমন জায়গা খোঁজা হচ্ছে। জায়গা পাওয়ার পর প্রকল্প নেওয়া হবে।
পরিকল্পিত নগর গড়ার পাশাপাশি আবাসন সমস্যা নিরসনও সিডিএ’র অন্যতম দায়িত্ব। ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর সংস্থাটি এ পর্যন্ত নগর ও জেলা মিলিয়ে মোট ১২টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এর মাধ্যমে ৬ হাজার ৭৪৭টি প্লট বরাদ্দ দিয়েছে। সংস্থাটির সর্বশেষ আবাসন প্রকল্প অনন্যা বাস্তবায়ন হয় ২০০৭ সালে। অনন্যার প্লটের মূল্য ধরা হয় তিন কাঠার জন্য কাঠাপ্রতি সাড়ে ৪ লাখ, চার কাঠার জন্য সাড়ে ৫ লাখ ও পাঁচ কাঠার জন্য ৬ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে সিলিমপুর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের সময় কাঠা প্রতি মূল্য ধরা হয়েছিল ১০ লাখ টাকা করে। এর আগে ২০০৬ সালে বরাদ্দ দেয়া বাকলিয়ায় কল্পলোক প্রথম পর্যায় আবাসন প্রকল্পে প্রতি কাঠার মূল্য ছিল ৩ লাখ ২৫ হাজার। কল্পলোক দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০০৬ সালের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী একই বছরে বরাদ্দ দেয়া প্রকল্পে কাঠা প্রতি মূল্য ছিল ৬ লাখ টাকা।
এদিকে বর্তমানে নগরীতে ভবন আছে প্রায় তিন লাখ। ৬০ বর্গমাইলের বন্দর নগরীতে ৬০ লাখ মানুষের বাস। নগরবিদদের মতে, প্রতিবছর নতুন করে যোগ হচ্ছে ৪০ হাজার মানুষ। এ অবস্থায় আবাসন সমস্যা সমাধানে নগর ছাড়িয়ে নতুন উপ-শহর গড়ে তোলার মাধ্যমে আবাসন প্রকল্প গ্রহণের পরামর্শ নগরবিদদের।