নতুনদের প্রত্যাশা পূরণের প্রতিশ্রুতি

29

শেখ হাসিনার নতুন সরকারকে সফল করতে সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিলেন মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যরা। বঙ্গভবনে গতকাল সোমবার শেখ হাসিনার সঙ্গে শপথ নেন তার নতুন সরকারের ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী।
টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের সময় পুরনো নেতাদের বাদ দিয়ে এক ঝাঁক নতুন মুখকে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, যাদের ২৭ জনই আনকোরা। নতুনদের সঙ্গে নিয়ে চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়া শেখ হাসিনার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে পাঁচ বছর পর মন্ত্রিসভায় ফেরা দীপু মনি শপথ নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে আস্থা; বিশ্বাস ও প্রত্যাশা নিয়ে আমাকে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি সেই আস্থা, বিশ্বাস, ভালোবাসা ও প্রত্যাশা পূরণে আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাব’।
শেখ হাসিনার ২০০৮ সালের সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন দীপু মনি। সেটা ছিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দায়িত্বে প্রথম কোনো নারীর আসা। এবারও প্রথম নারী হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী হলেন তিনি। এনিয়ে দীপু মনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়ন যেভাবে করছেন, এটা এ দেশের জন্য দৃষ্টান্ত। নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে সব সময়ই এগিয়ে। জাতীয় উন্নয়নে নারীরা এগিয়ে আসছে’। খবর বিডিনিউজের
শিল্পমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামীতে দেশকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী যে অঙ্গীকারে করেছেন, তা বাস্তবায়নই আমার চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা পূরণে চেষ্টায় কোনো কমতি থাকবে না’।
যুবলীগের এক সময়ের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হুমায়ূন নরসিংদী- ৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছেন চারবার। মন্ত্রিসভায় এবারই প্রথম এলেন। হুমায়ুনের মতো এবারই প্রথম প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তিনি পেয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘রাজনীতি যেহেতু করি, সেহেতু যে কোনো সময় যে কোনো দায়িত্ব আসতে পারে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, আমি যথাযথভাবে এই দায়িত্ব পালন করব। এই মর্যাদা যেন ধরে রাখতে পারি, সেই চেষ্টাই আমি করে যাব’।
এবার প্রথম সংসদ সদস্য হয়েই উপমন্ত্রী হয়েছেন চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এই সাংগঠনিক সম্পাদক শিক্ষা উপমন্ত্রী হয়েছেন। তরুণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারের উপর অনেক প্রত্যাশা নিয়ে ক্ষমতায় এনেছে। আমাদের কাছে মানুষের আশা এবং প্রত্যাশা অনেক বেশি। আমরা সেটা পূরণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আমি মন্ত্রিত্বটাকে দায়িত্ব হিসেবে দেখছি, দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিজের সর্বোচ্চটাই দেব’। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পেতে নিজের আগ্রহ ছিল বলেও জানান এই আইনজীবী। অগ্রজ দীপু মনিকে মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে পেয়ে নওফেল বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে যিনি দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি যথেষ্ট অভিজ্ঞ, উনার সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগবে’।
নতুনদের ভিড়েও পুরনো গুঁটিকয়েককে মন্ত্রিসভায় রেখেছেন শেখ হাসিনা, তার একজন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি নতুন করে শপথ নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করব, এটাই আমার চ্যালেঞ্জ’। নতুনদের নিয়ে আশাবাদী এই পুরনো মন্ত্রী বলেন, ‘নতুনরা তাদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, এটাই আশা করি’।
নতুন সরকারের কয়েক মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর আশা দিয়েছেন এবারও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া শাহরিয়ার আলম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারকে যে তালিকা দিয়েছিলাম, এতো কিছুর পরও তাদের আমরা ফেরত পাঠাতে পারিনি। এখন এই সরকারের কয়েক মাসের মধ্যে আমরা তাদের ফেরত পাঠানো শুরু করতে পারব’। তবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান এতো সহজ না বলেও মত প্রকাশ করেন গত পাঁচ বছরও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সূত্রে বিষয়টি কাছ থেকে দেখে আসা শাহরিয়ার। তিনি বলেন, ‘আমরা ইদানিং সেখানে (মিয়ানমার) দেখেছি যে আরসা নয় এমন অন্যান্য জঙ্গি সংগঠন আবার হামলা করেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর ওপর। সেই জায়গায় বিষয়গুলো অবশ্যই জটিল’।
পুরনো হলেও নতুন পরিচয়ে এবারের মন্ত্রিসভায় আসা জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দেব। আগের অসম্পূর্ণ কাজগুলো দ্রুত সমাপ্ত করব। নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করব’।
গত পাঁচ বছর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা জাহিদ মালেককে এবার একই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী করেছেন শেখ হাসিনা।

বঙ্গভবনে যারা
হাজির-গরহাজির

বঙ্গভবনে ঢোকার জন্য দুপুরের পর থেকেই ভিড় জমছিল। প্রায় হাজার খানেক অতিথি আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার বেশ আগেই দরবার হল পরিপূর্ণ। অতিথিদের মধ্যে আওয়ামী লীগ এবং তাদের সমর্থক বিভিন্ন পেশাজীবী এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের সংখ্যাই বেশি। আরো ছিলেন সামরিক-বেসামরিক আমলা এবং বিভিন্ন দেশের ক‚টনীতিকরা।
আওয়ামী লীগের যে সিনিয়র নেতারা এবার মন্ত্রিসভায় ডাক পাননি, তাদের অনেককেই দেখা গেছে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে। সামনের দিকের কাতারেই বসেছিলেন সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী ও সাবেক অর্থমন্ত্রী এ এম এম মুহিত। খবর বিবিসি বাংলার
উপস্থিত অনেকেই ছিলেন বেশ গুরুগম্ভীর। তবে নতুন সংসদে যিনি বিরোধী দলীয় নেতা হতে চলেছেন, সেই সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদকে অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। তিনি অসুস্থ বলে জানানো হয়েছে। তাঁর স্ত্রী রওশন এরশাদও গরহাজির ছিলেন। জাতীয় পার্টির কোন প্রথম সারির নেতাকে দেখা যায়নি। বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের কোন নেতা উপস্থিত ছিলেন না। একেবারে সামনের সারিতে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা। ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং বিকল্পধারার নেতা বদরুদ্দোজা চৌধুরী। মহাজোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাম্যাবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া এবং জাসদের শিরিন আখতারকে দেখা গেছে। তবে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি।
মন্ত্রিসভায় যারা শপথ নিয়েছেন তাদের বেশিরভাগই নতুন এবং অপেক্ষাকৃতভাবে বয়সে তরুণ। এজন্যে মন্ত্রিসভার অনেকেই ছিলেন উৎফুল্ল। নবীন মন্ত্রীদের অনেকে সামনের কাতারে বসে থাকা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তাদের আশীর্বাদ চান।
সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী জানান, একটা মন্ত্রিসভায় এত বেশি সংখ্যায় নবীন এবং তরুণদের জায়গা করে দেয়া, সেটা খুবই সাহসী একটা পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই সাহসী একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে তারা কাজ করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।