নটর ডেম গির্জা পুনর্নির্মাণে ৫৬ কোটি ইউরোর প্রতিশ্রুতি

57

আগুনে ভস্মীভূত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্যারিসের ঐতিহাসিক নটর ডেম গির্জা পুনর্নির্মাণে ৫৬ কোটিরও বেশি ইউরোর প্রতিশ্রæতি পাওয়া গেছে। আটশ’ বছরের পুরনো এই গির্জা পুনর্নির্মাণে কত খরচ হবে তা নির্ধারিত হওয়ার আগেই এসব অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রæতি পাওয়া গেছে।
ফ্রান্সের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে এসব অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছে। তবে অর্থ সহায়তা পাওয়া গেলেও গথিক শিল্পের অনন্য এই স্থাপনাটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। ইউরোপের শিল্প ইতিহাসে ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রায় মধ্যভাগ থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত সময়কালকে গথিক শিল্পের কাল বলা হয়ে থাকে। ফরাসি গথিক স্থাপত্যের অনবদ্য উদাহরণ হিসেবে নটর ডেম গির্জাকে বিবেচনা করা হয়।
১১৬০ সালে শুরু হয়ে ১২৬০ সালে এ গির্জার নির্মাণ পুরোপুরি শেষ হয়। তবে পুরো শতাব্দী ধরে এ ভবনের বিভিন্ন সংস্কার হয়েছে। বয়সের ভারে জরাজীর্ণ ভবনটিতে সংস্কার কাজ চলার মধ্যে সোমবার বিকেল ভবনটিতে আগুন লাগে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতি নাটকীয়ভাবে ভবনটির ছাদ ধসে পড়তে দেখা যায়। ঘটনার পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এক আবেগী বক্তৃতায় স্থাপত্যটি পুর্ননির্মাণের ঘোষণা দেন। প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণার পর ফরাসি ধনকুবেররা গির্জা পুর্ননির্মাণে সাহায্যের প্রতিশ্রæতি ঘোষণা করতে থাকেন।
কেরিং গ্রুপের ধনকুবের প্রধান নির্বাহী (সিইও) ফ্রাঙ্কোইস পিনাউল্ট ১০ কোটি ইউরোর প্রতিশ্রুতি দেন। তার কিছুক্ষণের মধ্যে বিলাসপণ্যে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বি গ্রুপ এলভিএমএইচ-এর সিইও ২০ কোটি ইউরো দেওয়ার ঘোষণা দেন। এনার্জি প্রতিষ্ঠান টোটাল ১০ কোটি ইউরোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কসমেটিক গ্রুপ লো’রিয়েল এবং বেত্তেনকোর্ট ফ্যামিলি জানিয়েঝছে তারা ২০ কোটি ইউরো দেবে। এছাড়া অন্যান্য সম্পদশালী গোষ্ঠীগুলো আরও দুই কোটি ইউরো দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
পুর্ননির্মাণে বিপুল অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলেও অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজের সময় নটর ডেম গির্জাকে অর্থ পেতে বেগ পেতে হয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলেও সংস্কার কাজের অর্থ বরাদ্দ কে দেবে তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ করেছে গির্জা কর্তৃপক্ষ এবং প্যারিস শহর কর্তৃপক্ষ। অবশেষে সোমবারের বিপর্যয়ের আগ পর্যন্ত শহর কর্তৃপক্ষ গির্জাটির সংস্কারে ৫ কোটি ও আঞ্চলিক সরকার এক কোটি ইউরো বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে তা থেকে পাওয়া গিয়েছিল মাত্র ২২ লাখ ইউরো।
পুর্ননির্মাণে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলেও গির্জাটিতে ব্যবহৃত উপকরণগুলো আর ফিরিয়ে আনা যাবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সংরক্ষণ গ্রুপ ফন্ডেশন দু প্যাট্রিমোইন এর ভাইস প্রেসিডেন্ট বার্ট্রান্ড দে ফেইদায়ু জানান, আগুনে পুড়ে যাওয়া জিনিসের মধ্যে রয়েছে অতিপ্রয়োজনীয় ছাদের অবকাঠমো। ফ্রান্সের একটি রেডিও-কে তিনি বলেন এই ছাদের দুই তৃতীয়াংশ বানাতে ব্যবহার করা হয়েছিল ওক গাছের কাঠ। প্রায় ৫ হাজার ওক গাছের কাঠ ব্যবহার হয়েছিল। তিনি জানান, এই কাঠের কোনও প্রতিলিপি বানানো সম্ভব না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ফ্রান্সে যেমাপের ওক গাছ পাওয়া যেত এখন তা পাওয়া সম্ভব না।