নজরদারি ডলার ও হুন্ডি কারবারীদের ওপর

50

দুর্নীতিবিরোধী চলমান অভিযানকে কেন্দ্র করে হুন্ডি ও ডলার কারবারীদের উপর নজরদারি বাড়িয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। র‌্যাব-পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ এ দুই কারবারীদের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করছেন। এদিকে ডলারের দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে খোলা বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়ছে।
বর্তমানে দেশে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকায় ক্যাসিনো দিয়ে এ অভিযান শুরু হয়। এ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট, বিসিবি’র পরিচালক লোকমান হোসেন, ঠিকাদার জি কে শামীম, যুবলীগ নেতা আরমানসহ কয়েকজনকে। শামীমের অফিস থেকে জব্দ করা হয়েছে সোয়া কোটি টাকা। গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের দুই নেতা এনু ও রুপনের বাসা থেকে জব্দ করা হয় সোয়া পাঁচ কোটি টাকা। এছাড়া ঢাকা থেকে দুই পিকআপ ভর্তি টাকা চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।
র‌্যাবের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, দুর্নীতিবাজ অনেকের বাসায় নগদ কোটি কোটি টাকা রয়েছে। ব্যাংকে রাখতে না পেরে তারা বাসায় রেখেছেন এসব টাকা। শুধু ঢাকা নয়, চট্টগ্রামেও বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে কোটি কোটি টাকা জমা থাকার কথা জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।
এসব নগদ টাকা এখন বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা না পারছে রাখতে, না পারছে ফেলতে। বিপদে পড়ার আশংকায় কোন আত্মীয়-স্বজনও টাকা রাখতে রাজি হচ্ছেন না। বিদেশ যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইমিগ্রেশনও পার হতে পারছেন না।
চট্টগ্রামে শক্তিশালী হুন্ডি সিন্ডিকেট রয়েছে। রেয়াজউদ্দিন বাজার, হাজারী লেন, খাতুনগঞ্জ ভিত্তিক সিন্ডিকেট তৎপর রয়েছে। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্বাভাবিক সময়ে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যায়। শুধু রেয়াজউদ্দিন বাজার সিন্ডিকেট কয়েকশ’ কোটি টাকা মাসে পাচার করে। চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে সতর্ক রয়েছেন অবৈধ টাকার মালিকরা। তারা বাসাবাড়িতে থাকা নগদ টাকা ও নিজেকে রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এজন্য নিচ্ছেন নানা কৌশল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেকে হুন্ডি কারবারীদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। তারা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা বিদেশে পাচারের চেষ্টা করছেন। শীর্ষ হুন্ডি ব্যবসায়ীদের নিকটও যোগাযোগ করছেন অনেকে। মধ্যপ্রাচ্যের আমিরাত, সৌদিআরব, ওমান, ইউরোপের একাধিক দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতে পাচার করার চেষ্টা করছেন অনেকে। সেখানে থাকা আত্মীয় স্বজন বন্ধুদের কাছেই পাঠাতে চাচ্ছেন তারা। কিন্তু অনেক হুন্ডি কারবারী সন্ত্রস্ত অবস্থায় আছেন।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার এস এম মোস্তাইন হোসাইন জানান, হুন্ডি কারবার অবৈধ। হুন্ডি কারবারীরা যাতে কোন ধরনের কর্মকান্ড চালাতে না পারে সেজন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজরদারি চালাই। পুলিশ কমিশনার বিষয়টি খুবই গুরুত্ব দিয়েছেন। হুন্ডি নিয়ে তিনি কঠোর অবস্থানে। আমাদের টিম বিভিন্ন এলাকায় কঠোরভাবে তদারক করছে।
ডলার নিয়েও চলছে কারসাজি। অবৈধ টাকার মালিক অনেকে ডলারের দিকেও ঝুঁকে পড়েছেন। তারা নগদ টাকাকে নিরাপদ করতে টাকার বিনিময়ে ডলার কিনে রাখার চেষ্টা করছেন। তাদের ধারণা, নগদ টাকা রাখা ঝুঁকি। যে কোন সময় অভিযান চালিয়ে জব্দ করতে পারে নগদ টাকা। কিন্তু ডলার করে রাখলে সে সম্ভাবনা আর থাকে না। কারণ ডলার করলে সংখ্যায় কমে যায় এবং যে কোন স্থানে রাখা যায়। আবার কেউ কেউ বিদেশে যাওয়ার চেষ্টায় ডলার কিনছেন।
র‌্যাবের সহকারি পরিচালক মাহমুদুল ইসলাম জানান, হুন্ডি কারবার মানেই অবৈধ কারবার। তাদের উপর আমাদের নজরদারি রয়েছে। কেউ যাতে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করতে না পারেন বিষয়টি আমরা সবসময় দেখছি। গুরুত্ব দিয়েই দেখছি। হুন্ডিরোধে আমাদের কৌশলও রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে ডলারের দাম বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তার চাইতে আরো ২ থেকে ৩ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ করে খোলাবাজারেও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতি ডলার কিনতে ব্যয় করতে হচ্ছে সাড়ে ৮৬ টাকা থেকে ৮৭ টাকা। ক্ষেত্র বিশেষে তার চাইতেও বেশি দাম হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।
ব্যাংক থেকে কিনতে কাগজপত্র দাখিল করতে হয় বিধায় তারা খোলা বাজার থেকেই কিনে নিচ্ছেন ডলার। মানি এক্সচেঞ্জগুলোতেও ডলারের চাহিদা বেড়েছে। এক মানি এক্সচেঞ্জ মালিক জানান, আমরা বিধির বাইরে ডলার বিক্রি করতে পারি না। তবে কয়েকদিন থেকে ডলারের চাহিদা বেড়েছে বলে তিনি জানান।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, হুন্ডি নিয়ে আমাদের অবস্থান পরিস্কার। এটা অবৈধ একটি কারবার। অবৈধ কারবার রোধে সার্বক্ষণিক পদক্ষেপ রয়েছে আমাদের।
জানা যায়, হুন্ডি ও ডলার কারবারীদের উপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। হুন্ডি সিন্ডিকেটের অবস্থান সনাক্ত করে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। একই সাথে ডলার কারবারীদের উপর নজরদারি করছে র‌্যাব-পুলিশের গোয়েন্দারা।