নগরে বাড়ছে জনসমাগম সড়কে যানবাহনের চাপ

45

করোনার কারণে দীর্ঘদিন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। করোনার আক্রমণ থেকে বাঁচতে মানুষ ঘরে বসে সামাল দিয়েছেন বেশিরভাগ কাজ। এভাবে ঘরবন্দী হয়ে তো আর বেশিদিন থাকা যায় না। অবশেষে ধীরে ধীরে নগরীতে বাড়ছে জনসমাগম। সড়কগুলোতে বেড়েছে যানবাহনের চাপ। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব। এতে করোনা সংক্রমণের প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর বহদ্দারহাট, জিইসি, দেওয়ানহাট ও আগ্রাবাদ এলাকায় স্বরূপে ফিরেছে ফুটাপাতের দোকানিরা। এসব দোকানে ভিড় জমিয়েছে সাধারণ মানুষ। এদের বেশিরভাগের মুখে নেই মাস্ক, নেই কোনো ধরনের সুরক্ষা সামগ্রী। এমনকি সড়কের কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজট। গণপরিবহনগুলোতে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি না মেনে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত যাত্রী।
অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সোহাগ নামে এক হেল্পার বলেন, আমরা ইচ্ছা করে অতিরিক্ত যাত্রী নিচ্ছি না। স্টেশনে যাত্রী নামানোর জন্য গাড়ি থামালেই মানুষ উঠে যাচ্ছে, এতে আমাদের কোনো দোষ নেই।
ইমতিয়াজ নামে এক পথচারী জানান, সাধারণ মানুষের ধারণা দেশে এখন করোনার প্রকোপ আগের চেয়ে কমেছে। তাই মানুষ আগের চেয়ে বেশি ঘর থেকে বের হচ্ছে। এছাড়া টেলিভিশন ও পত্রিকার প্রতিদিন করোনার আপডেট শুনতে শুনতে মানুষ করোনাকে স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে নিচ্ছে। ফলে পরোক্ষভাবে চারিদিকে বাড়ছে জনসমাগম।
তবে সিভিল সার্জন কার্যালয় হতে প্রাপ্ত গত পাঁচ দিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিদিন তুলনামূলক হারে বাড়ছে সংক্রমণের সংখ্যা। গত ৩ জুলাই চট্টগ্রামে এক হাজার ২৩৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৮২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়, ৪ জুলাই এক হাজার ৫০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২২০ জনের করোনা শনাক্ত হয়, ৫ জুলাই এক হাজার ৩১৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৯২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়, ৬ জুলাই এক হাজার ৩৬০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৯৭ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয় এবং ৭ জুলাই এক হাজার ২৩৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৮২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়।
এছাড়া চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৭৭২ জন। করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২০৪ জন এবং করোনা থেকে সুস্থ হয়েছে এক হাজার ২৭৯ জন।
এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি আহব্বায়ক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, মানুষের ঘর থেকে বের হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ ক্ষুধা। যারা ঘর থেকে বের হচ্ছে তাদের বেশির শ্রমজীবী মানুষ। ফলে পেটের দায়ে তাদের ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে। তবে বের হওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের উচিত জনগণের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের পাশাপাশি মাস্ক ও ফেসশিল্ড ব্যবহারে আগ্রহী করে তোলা। দেশে করোনার প্রকোপ কমেছে বা বেড়েছে এটা গবেষণার বিষয়। সাধারণ মানুষের এমন ধারণা তাদেরকে আরও হুমকির মুখে ফেলবে।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, সার্বিকভাবে চট্টগ্রামের করোনা পরিস্থিতি আগের মতোই আছে। প্রতিদিন প্রায় তিনশ জনের মতো করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তবে আগের চেয়ে পরীক্ষা করানোর হার বৃদ্ধি পেয়েছে। আস্তে আস্তে মানুষের মাঝে ধৈর্য কমে যাচ্ছে। ফলে মানুষ অসচেতন হচ্ছে। পরোক্ষভাবে মানুষ আগের চেয়ে বেশি ঘর থেকে বের হচ্ছে। আমরা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। আগামীতে আমরা প্রশাসনের নজরদারি আরও জোরদার করব।