নগরীর ৮০% পানির চাহিদা মেটানোর দাবি ওয়াসার

50

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং আছে এক লক্ষ ৭৫ হাজার। আর চট্টগ্রাম ওয়াসার গ্রাহক আছে সবমিলিয়ে ৭৫ হাজার। সে হিসেবে এখনো নগরীর এক লক্ষ হোল্ডিংয়ে ওয়াসার সংযোগ নেই। অর্ধেকেরও বেশি বাসাবাড়ি বিভিন্ন উৎস থেকে পানি ব্যবহার করে। এরপরও নগরীর ৮০ শতাংশ পানির চাহিদা মেটানোর দাবি করছে ওয়াসা। তাদের এ দাবির পক্ষে উপযুক্ত কোনো তথ্য-প্রমাণ না থাকায় অবান্তর বলে মন্তব্য করেছেন স্বয়ং বোর্ড সদস্যরাও।
গতকাল ওয়াসার বিশেষ বোর্ড সভায় এমন বেশ কিছু প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহকে। সরাসরি উত্তর না আসায় এসব বিষয় আগামী বোর্ড সভার এজেন্ডায় আনতে ওয়াসা চেয়ারম্যান নির্দেশ দিয়েছেন বলে একাধিক বোর্ড সদস্য নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সদস্য ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল ফজল কবির আহমেদ মানিক বলেন, আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং সংখ্যা ১ লক্ষ ৭৫ হাজার। আর ওয়াসার গ্রাহক আছে ৭৫ হাজার। তাহলে ওয়াসা ৮০ শতাংশ মানুষকে পানি সরবরাহ করে বলে যে পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে সেটার ভিত্তি কি? এটার কোনো উত্তর পাইনি। চেয়ারম্যান মহোদয় নির্দেশনা দিয়েছেন, আগামী বোর্ড সভায় বিষয়গুলো এজেন্ডায় রাখতে এবং প্রত্যেকটা হিসেব দিতে।
তিনি বলেন, বোর্ড সভায় দুটি এজেন্ডা ছিলো। সেগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া মানুষের দুর্ভোগ, বিভিন্ন জায়গায় পানি না পাওয়া, রমজানের পানি সরবরাহ নিশ্চিত করাসহ বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
জানা যায়, ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের ব্যয় অনুমোদন ও ঠিকাদার নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং ওয়াসার অকেজো মোটরসাইকেল নিলামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিশেষ বোর্ড সভার আহবান করা হয়। গতকাল বুধবার বোর্ড সভায় আলোচ্য বিষয় দুটি অনুমোদন দেওয়া হয়। আলোচ্য বিষয়ের বাইরে বোর্ড সদস্যরা সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন এলাকায় পানি না পাওয়া, ওয়াসা নাইট নামের বিশাল ব্যয়বহুল আয়োজন, গ্রাহকদের না জানিয়ে সমাবেশের আয়োজন, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে দুর্ভোগ, আসন্ন রমজানে সব জায়গায় পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ কয়েকটি বিষয় উপস্থাপন করেন। এরমধ্যে ওয়াসা নাইট, গ্রাহক সমাবেশ ও প্রকল্পের সুবিধা না পাওয়া নিয়ে বোর্ড সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ সময় ওয়াসা চেয়ারম্যান সবগুলো বিষয় আগামী বোর্ড সভার এজেন্ডায় রাখা এবং সঠিক হিসেবে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন বলে জানিয়েছেন কয়েকজন বোর্ড সদস্য।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াসার এক বোর্ড সদস্য বলেন, ব্যয় বৃদ্ধির পরও ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের ব্যয় ও ঠিকাদার নিয়োগ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বোর্ড সদস্যরা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের এককভাবে বিশাল বাজেটে ওয়াসা নাইট ও গ্রাহকদের না জানিয়ে সমাবেশ করার বিষয়ে সমালোচনা করেন। এমডি এ বিষয়ে কোনো জবাব দেননি। গ্রাহকদের বিভিন্ন সমস্যা, জনদুর্ভোগ, বিভিন্ন এলাকায় পানি না পাওয়া, পানি না পেয়েও বিল দেওয়া নিয়ে সভায় তোপের মুখে পড়েন এমডি। এসব বিষয় আগামী বোর্ড সভার এজেন্ডায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাছাড়া আগামী রমজানে যাতে মানুষ পানির কষ্টে না থাকে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা হলে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, বোর্ড সভায় নির্ধারিত বিষয় ছিলো দুটি। ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের অনুমোদন আর কিছু গাড়ির নিলামের বিষয়। ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের ব্যয় ও ঠিকাদার নিয়োগ অনুমোদন হয়েছে। সেটা আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিব। মোটরসাইকেল নিলামের বিষয়টিও অনুমোদন হয়েছে। তাছাড়া আরো অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, যেগুলো এজেন্ডাভুক্ত নয়। বৈঠকে বসলে সেখানে অনেক বিষয়েই আলোচনা হয়।