নগরীর মোড়ে মোড়ে ‘নরকযন্ত্রণা’

116

শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন, সরকারের কঠোর অবস্থান, বিআরটিএ ও ট্রাফিক বিভাগের অভিযান, জরিমানা-কোন কিছুই কাজে আসছে না। নগরীর সড়ক পরিস্থিতি আগের মতই। কিছুদিন ঠিক থাকার পর আবারও ১৮ মোড় নরক যন্ত্রনায় পরিণত হয়েছে। আইন-কানুনের তোয়াক্কা করছে না চালকরা। এ কারণে যানজট ও দুর্ঘটনা নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, গত আগস্ট মাসে ঢাকায় বাস চাপায় মারা যায় দুই শিক্ষার্থী। এরই প্রেক্ষিতে প্রথমে ঢাকায় শুরু হয় নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন। শিক্ষার্থীরাই এ আন্দোলন শুরু করে। পরে পুরো ঢাকা শহরে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন। এক পর্যায়ে তা চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রামে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাস্তায় নামে। তারা নিজেরাই গাড়ি ও চালকদের কাগজপত্র চেক করতে থাকে। শৃঙ্খলা ফিরে আসে যান চলাচলে। তীব্র আন্দোলনের মুখে সরকার তাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। এরপর তারা ঘরে ফিরে যায়।
আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গাড়ি ও চালকদের কাগজপত্র ঠিক করার হিড়িক পড়ে যায় বিআরটিএতে। ট্রাফিক বিভাগ, বিআরটিএ রাস্তায় নামে। শুরু করে কাগজপত্রবিহীন, অবৈধ কাগজপত্রধারী যানবাহনের বিরুদ্ধে। চালকদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালায়। কয়েকশ’ গাড়িকে জরিমানা করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেই শৃঙ্খলা বেশিদিন টিকেনি। আবারও ফিরে গেছে আগের অবস্থায়। ফের সেই অরাজকতা। বিশেষ করে মোড়গুলোর অবস্থা মারাত্মক আকার দারণ করেছে।
দেখা যায়, নগরীতে ১৮টি মোড় রয়েছে। প্রতিটি মোড়ই গুরুত্বপূর্ণ। এসব মোড় বর্তমানে যেন নরক যন্ত্রনা। এর মধ্যে অক্সিজেন মোড়, জিইসি মোড়, বহদ্দারহাট মোড়, আন্দরকিল্লা মোড়, দেওয়ানহাট মোড়, বাদামতলী মোড়, বারেক বিল্ডিং মোড়, নিউ মার্কেট মোড়, কোতোয়ালী মোড়, চকবাজার মোড়, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর মোড় অন্যতম।
অক্সিজেন মোড়ে দেখা যায়, সেখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, নাজিরহাট-রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি থেকে আসা যানবাহন এলোপাথারিভাবে রাখা হয়েছে। কোন শৃঙ্খলা নাই, চালকদের ইচ্ছানুযায়ী গাড়ি রাখা হয়েছে। এমনভাবে রাখা হয়েছে, ট্যাক্সি-রিকশা বা রোকজন যাওয়ার জায়গাও নেই।
সেখানকার দোকানদার আমজাদ মিয়া জানান, এটা সেখানকার প্রতিদিনকার চিত্র। সকাল থেকে রাত অবধি একই দৃশ্য দেখা যায়। প্রতিবার ১০ থেকে ৩০ মিনিট স্থায়ী হয় এ ধরনের অবস্থা।
জিইসি মোড় খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মোড়। এ মোড়ে চারিদিকের গাড়ি এসে মিলিত হয়। এ মোড়টি বিপজ্জনক মোড়ে পরিণত হয়েছে। দেখা যায়, এলাপাথারিভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় যানবাহন। উভয়দিক থেকে আসা গণপরিবহণ এক স্থানে মিলিত হয়। উভয় পাশেই পুরো রাস্তা জুড়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। কার আগে কে যাবে তার প্রতিেিযাগিতা চলে। দ্রæত গতিতে ওভারটেক করার চেষ্টা চালায়। যাত্রী নিতেও প্রতিযোগিতায় নামে চালকরা।
দুই নম্বর গেটের পরিস্থিতিও একই রকম। চতুর্মুখি এ মোড়ে জঞ্জাল নিত্য ঘটনা। চারিদিক থেকে গাড়ি এসে মিলে এখানে। চারদিক থেকে আসা ৭/৮টি বাস রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। যানবাহন এমনকি লোক চলাচলেও কোন অবস্থা থাকে না।
আন্দরকিল্লা মোড়ের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। রাস্তার অর্ধেক জুড়ে দখল করে থাকে প্রাইভেট কার, ট্যাক্সি ও রিকশা। এছাড়া বাস, ট্রেস্পু, হিউম্যান হলার প্রতিযোগিতা চালায় কার আগে কে যাত্রী নেবে।
সিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান বলেন, যান চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মোড় গুলোতে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে। ট্রাফিক বক্স স্থাপন করা হয়েছে। সার্জেন্ট ও ট্রাফিক সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। দাািয়ত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে মামলা হচ্ছে।
উত্তর জোনের (সদরঘাট) টিআই (প্রশাসন) সুভাষ চন্দ্র দেব জানান, ট্রাফিক আইন মেনে চলতে বাধ্য করা হচ্ছে। আইন অমান্য করলেই ব্যবস্থা। এতে কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। প্রতিদিনই জরিমানা আর মামলা হচ্ছে।
দেখা যায়, দেওয়ানহাট মোড়, বাদামতলী মোড়, বারেক বিল্ডিং মোড়, নিউ মার্কেট মোড়, কোতোয়ালী মোড়, চকবাজার মোড়সহ সবকটি মোড়েই চলছে এক প্রকার নৈরাজ্য।
দেখা যায়, রুটে চলাচলের সময়ও ট্রাফিক আইন মানছে না গণপরিবহনগুলো। যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করা হচ্ছে। হাত দেখালেই দাঁড় করা হচ্ছে গাড়ি। বাস, হিউম্যান হলার, টেম্পু-সবগুলোর একই অবস্থা। রাস্তায় চলাচলের সময় আগে যেতে ওভারটেক করার চেষ্টা করছে গাড়িগুলো।