নগরীর মূল সড়ক ফাঁকা-নিস্তব্ধ

134

করোনাযুদ্ধে নগরীর মূল সড়কগুলো ফাঁকা-নিস্তব্দ। বন্ধের সময়েও ছুটি নেই যেসব কর্মজীবীর- তারাই শুধু আছেন সড়কে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ভ্যান, কাজ শেষে ঘরে ফেরা দুয়েকজন মানুষই যেন পথের সঙ্গী।
তবে ঘরে থাকার নির্দেশনা অমান্য করে মাঝেমধ্যে অলি-গলিতে জনসমাগমও দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে মানুষ গলিতে নামছে। দোকানপাটও খোলা। বাজারগুলোতেও ক্রেতা বিক্রেতার দেখা মিলে।
বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে করোনা ভাইরাস। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৫ জন। করোনা ঠেকাতে সরকার ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এ সময় জনসাধারণকে ঘরে থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
শুরুতে দুই-তিন দিন মোটামুটি সরকারি নির্দেশনা মেনে চললেও বর্তমানে সেটি আর দেখা যাচ্ছে না। লোকজন ঘর হতে বের হতে শুরু করেছে। প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে লোকজনের দেখা মিললেও অলি-গলি, আবাসিক এলাকাগুলোতে লোকজন ভিড় করছে। কেউ মানছে না কারো কথা।
নগরীর পাথরঘাটা, নালাপাড়া, খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, আগ্রাবাদ বেপারিপাড়া, হেমসেন লেইন, ব্যাটারিগলি, মোগলটুলি, সিডিএ আবাসিক এলাকাসহ কয়েকটি এলাকায় দেখা যায়, প্রতিটি এলাকায় জনসমাগম কয়েকদিনের তুলনায় বেড়েছে।
গত রবিবার রাতে আগ্রাবাদ বেপারিপাড়া ও মোটলটুলি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শত শত মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে গল্প করছে। দোকান থেকে নানা পণ্য কিনে নিচ্ছে। অযথা সড়কে হাঁটা-চলাচল করছে মানুষ।
অলি-গলিগুলোতে সব বয়সী লোকজন গল্প করছে। দোকানে ভিড় করে বাজার সওদা করছে। দোকানে তিন ফুট দুরত্বে দাঁড়াতে বলঅ হলেও তা কেউ মানছে না। এক সাথে ১০ থেকে ১৫ জন পর্যন্ত দাঁড়িয়ে পণ্য কেনার অপেক্ষা করছে। ছোট ছোট শিশু-কিশাররাও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে রাস্তায় দেখা গেছে।
দেখা যায়, সরকার ফার্মেসি, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া অন্য সব দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিলেও অলি-গলির কোন দোকানই বন্ধ নেই। সব দোকানই খোলা রাখা হয়েছে। প্রতিটি দোকানের সামনেই ক্রেতাদের জটলা।
এমন অবস্থা যেন বাসা থেকে সবাই হুমড়ি খেয়ে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। রাস্তার পাশে বসে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে। অলি-গলি হওয়ায় পুলিশের গাড়ি সেসব এলাকায় প্রবেশ করে না। এ অবস্থা মধ্যরাত অবদি চলতে থাকে।
অলি-গলিতে লোকজন ভিড় করলেও প্রধান প্রধান সড়কে নিস্তব্দতা বিরাজ করছে। তবে আগের তুলনায় গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। নগরীর আন্দরকিল্লা মোড়, চেরাগি মোড়, জামালখান, নিউ মার্কেট, আগ্রাবাদ, বাদামতলী, এক্সেস রোড, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, ওয়াসা, জিইসি মোড়সহ মূল সড়কগুলোতে লোকজন কম। বেশিরভাগ এলাকাই ফাঁকা।
দেখা যায়, এসব সড়কগুলোতে দু-চারজন লোক চলাচল করছে। মাঝে মধ্যে চলছে রিকশা এবং প্রাইভেটকার। রাতে লোকজন থাকে না বললেই চলে।
সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান গতকাল সোমবার পূর্বদেশকে বলেন, সরকার ঘোষিত ঘরে থাকার নির্দেশনা সকলকে মেনে চলা উচিত। নিজের স্বার্থে, পরিবার-স্বজন ও দেশের স্বার্থে এ নির্দেশনা সকলের মেনে চলা উচিত। তিনি বলেন, কারো কিছু প্রয়োজন পড়লে পুলিশকে ফোন করলেই বাসায় পৌঁছে যাচ্ছে। তাহলে আর বের হওয়ার দরকার কি। অতি প্রয়োজন ছাড়া সবার উচিত ঘরে থাকা। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কাজ করছে। অসহায় মানুষদের খাবার দেয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর পূর্বদেশকে বলেন, করোনা ভাইরাস একটি মারাত্মক ছোঁয়াছে রোগ। সহজেই একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায়। এজন্য কোয়ান্টোইন মেনে চলা উচিত। স্বজন, সমাজ এবং দেশের স্বার্থে আমাদের সরকারি নির্দেশনা মানতে হবে। তিনি সকল নাগরিককে ঘরে থাকার অনুরোধ জানান।
এদিকে বাজারগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যাও বেড়েছে। নির্দেশনা অমান্য করে ভিড় করছে তারা। রিয়াজুদ্দিন বাজারে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ১৮০টি মার্কেটের অবস্থান। এখানকার চৈতন্য গলিতে ১৫০টিরও অধিক কাঁচামালের আড়ত রয়েছে।
দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখনও ট্রাকভর্তি কাঁচা শাক সবজি নিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। দিনের বেলায় এখানে ভিড় না থাকলেও রাতে সরগরম থাকে গলি। রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক শিবলীর উদ্যোগে করোনারোধে জনসমাগম এড়াতে দুয়েকবার মাইকিং করেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
আড়তগুলোতে শত শত শ্রমিক কাজ করছে। আবার সেখান থেকে পাইকাররা কিনছে। একারণে ব্যাপক লোকসমাগম হয় সেখানে। বিআরটিসি থেকে শুরু করে তিন পোলের মাথা পর্যন্ত চৈতন্য গলিতে প্রতিদিন রাতে শতাধিক গাড়ি প্রবেশ করে। এসব গাড়ির পণ্য খালাসের পর উচ্ছিষ্ট গলিতে ফেলে গাড়ি পরিষ্কার করা হয়। পর্যাপ্ত ডাস্টবিনও নেই। রিয়াজুদ্দিন বাজারে আড়ত ও দোকানে অসংখ্য লোকজন ভিড় করছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর সেটি বেড়ে দ্বিগুণ হয়।