নগরীর বদ্ধ খাল যেন ‘মশার কারখানা’

91

জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বন্ধ হয়ে গেছে প্রকল্পটির কাজ। এরইমধ্যে চলমান কাজের অংশ হিসেবে নগরীর কয়েকটি খালের মুখ বন্ধ রেখেছে সংস্থাটি।
ফলে খালের স্বাভাবিক পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। যেখানে থেকেই মশা ব্যাপকহারে জন্ম হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এছাড়া এসব প্রজননক্ষেত্র নষ্ট না করা গেলে শুধু ওষুধ ছিটিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় চাক্তাই খাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এসব কথা বলেন। অন্যদিকে সেনাবাহিনী বলছে কাজের কারণে অনেক জায়গায় পানির প্রবাহ বন্ধ করতে হয়েছে। কিন্তু সেখানে পানি চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়েছে।
অবশ্য গত মঙ্গলবার ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী নগরীর মশা মারার ব্যবস্থা করতে বললে মেয়র নাছির ১০ দিনের মধ্যে মশা সহনীয় পর্যায়ে আনা হবে বলে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীকে যে ১০ দিনের সময় দিয়েছেন তার মধ্যে মশা নিধন সম্ভব কিনা জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার মেয়র নাছির বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগ ও সিলেট বিভাগের ভিডিও কনফারেন্সিং হয়েছিল সেখানে প্রধানমন্ত্রী মশার বিষয়টা নিয়ে জানতে চেয়েছেন।সেখানে আমি উনাকে আশ্বস্ত করেছি, উনাকে কথা দিয়েছি। ইতিমধ্যে আমরা এ বিষয়টা বিবেচনায় নিয়েছি- কিভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। বহদ্দারহাট থেকে দু’মাইল রাস্তা পায়ে হেঁটে চাক্তাই খালের পাড় দিয়ে, আপনারাও দেখেছেন- এখানে পুরা খাল কিন্তু ভরাট। কোনো পানি চলাচল হচ্ছে না এবং এই বিষয়টা কিন্তু আমি বার বার দেড়-দু’মাস আগে থেকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), সে প্রকল্পের পূর্ত কাজ বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী।
মেয়র নাছির বলেন, প্রকল্পটির পরিচালকের সাথে সরাসরি একাধিকবার কথা বলেছি। আমাদের যিনি প্রধান প্রকৌশলী তিনিও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, ওনাকেও বলেছি। ওনারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, পানি যে স্থির হয়ে আছে, যেটা মশার একেবারে উর্বর প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করছে, সেটা বন্ধ করা হবে। উনারা আমাকে আজ থেকে ২০-২৫ দিন আগে নিশ্চিত করেছিলেন। সেটা হল যে, পাইপ বসিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করে উনারা পানিগুলো ছেড়ে দেবেন।
মেয়র নাছির আরও বলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্য করোনাজনিত কারণে গত ২৬ তারিখ থেকে কাজ পুরোপুরিভাবে বন্ধ। এ অবস্থা কতদিন চলবে জানি না। ফলে যে বিষয় আশ্বস্ত করেছিলেন পানিগুলো ছেড়ে দিবেন, সেটা কিন্তু হচ্ছে না। যার কারণে আমি হেঁটে হেঁটে দেখছি কি অবস্থা। তারপর উনাদের সাথে আলাপ করব। উনারা কি করতে পারেন আর আমরা কি করতে পারি। আমাদের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের সাথে বসব, জরুরি ভিত্তিতে কি করা যায় সেটা করব। কারণ শুধু ওষুধ ছিটিয়ে কখনও আসলে এই মশাকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না, যতদিন প্রজনন ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে ধ্বংস করতে না পারি।
খালের পানি চলাচল স্বাভাবিক করতে না পারলে শুধু ওষুধ ছিটিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় জানিয়ে নাছির বলেন, এটা আগেও বলেছি। ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম চলমান আছে। উত্তরোত্তর এটা আরও বেগবান করব। ইকুপমেন্টের অভাব ছিল, নতুন ইকুপমেন্ট ক্রয় করেছি। মশার ওষুধ কেনার জন্য আজও কথা বলেছি। ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছি। যে কোনো উপায়ে ওষুধ কিনব।
বিষয়গুলো নিয়ে পূর্বদেশকে মেয়র বলেন, মহেশখালে হেঁটে হেঁটে দেখেছি এবং সেখানেও একই অবস্থা। তাই রবিবার সেনাবাহিনীর সাথে বসব। এবং উনাদের সহযোগিতা চাইব। যেভাবে পারে এ ক্ষেত্রগুলো আমাদের ধ্বংস করতে হবে। এই দিকে ক্রাশ প্রোগামে দ্বিতীয় দিনে নগরীর ছোটপুল পুলিশ লাইনের সামনের মহেশখালের পাড় ঘেষে আগ্রাবাদ সিডিএ কলোনি ওয়ার্ড অফিস পর্যন্ত মশা নিধনের ওষুধ ছিটানো হয়েছে। পরিষ্কার ও বদ্ধ পানি এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র। তাই বাসাবাড়ির আশপাশে, ডাবের খোসায়, ফুলের টবে, ছা,ে ফ্রিজের নিচের ট্রেতে যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখার আহŸান জানিয়েছেন মেয়র।
এই বিষয়ে জলাবদ্ধতার মেগা প্রকল্পের সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক কর্নেল শাহ আলী বলেন, চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা অনেক বড় একটি সমস্যা। শুষ্ক মৌসুমে প্রকল্পের কাজ করার উপযুক্ত সময়। তাই আমরা গতবছরেও মে পর্যন্ত এক নাগাড়ে কাজ করেছি। তখনও যেখানে প্রয়োজন সেখানে খালের উপর রাস্তা তৈরি করে কাজ করতে হয়েছে। তবে পানির প্রবাহ একেবারে বন্ধ হয়নি। যদি হয়েও থাকে কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে আবার খোলে দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া যেখানে ড্রেনের কাজ চলছে, যেখানে আমাদের ড্রেন বন্ধ করতে হচ্ছে কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত। আর এই সময়টায় আমরা পাইপের মাধ্যমে বাসা-বাড়ির পানি বাইপাস করে দিচ্ছি। করোনা ভাইরাসের কারণে কাজ বন্ধ হয়েছে কথাটি সত্য নেই। আমরা শ্রমিক পাচ্ছি না, যেখানে শ্রমিক আসছে সেখানে কাজ চলছে। এখনও চারটির বেশি খালে পরিষ্কারের কাজ চলছে। তাই সিটি করপোরেশন মনে করবে আসলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে আছে, সেখানে আমরা পানি চলাচলের ব্যবস্থা করে দিব।