নগরীর পশুরহাট শেষ সময়ে দাম কমার আশায় ক্রেতারা

40

প্রতিটি পশুর হাটে গত শুক্রবার থেকেই ক্রেতাদের চাপ বেড়েছে। অনেকেই গরু কিনে বাড়ি ফিরলেও অসংখ্য ক্রেতা এখনও দরদাম করতেই ব্যস্ত সময় পার করছেন। হাটে প্রচুর গরু থাকলেও দাম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা। অন্যদিকে মাংসের দাম বৃদ্ধি ও গো-খাদ্যের সাথে দাম সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিক্রেতারা।
আজ বাদে কাল কোরবানির ঈদ। দিনটি একেবারে নিকটে আসায় প্রতিটি বাজারে উপছে পড়া ভিড় লেগেই আছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিড় সামলাতে হচ্ছে বাজার ইজারাদারদের। নগরীর ৮টি পশুর হাটে ক্রেতাদের সরব উপস্থিতি বিক্রেতাদেরও উৎসাহিত করে তুলেছে। গত এক সপ্তাহ দেশের সীমান্তবর্তী উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন কয়েকশ করে গরু বোঝাই ট্রাক চট্টগ্রামে প্রবেশ করলেও, বিক্রি তেমন একটা ছিল না। অলস সময় কাটছিল বিক্রেতা-বেপারীদের। কিন্তু শুক্রবার থেকে ক্রেতাদের ব্যাপক আনাগোনায় মুখর নগরের সবগুলো পশুর হাট। তবে পশুর হাটে প্রচুর লোকসমাগম হলেও ক্রেতার সংখ্যা কম বলে মনে করছেন বিক্রেতারা। প্রতিটি হাটে এখনও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ট্রাকে ট্রাকে গরু আসছে।
এদিকে গরু বেশি আসায় অনেক ক্রেতা দাম কমার আশায় আছেন। সকাল থেকে শুরু করে সারা রাতব্যাপী চলছে বেচাবিক্রি। নির্বিঘ্নে বেচাকেনা করার জন্য হাট ইজারাদারদের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। প্রতারণা ঠেকাতে প্রতিটি হাটে পুলিশ ও নিজস্ব সিকিউরিটি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়োজিত রাখা হয়েছে ভেটেরিনারি ডাক্তার।
বিবিরহাটে রাজশাহী থেকে গরু নিয়ে এসেছেন হারুন বেপারী। তিনি গতকাল বলেন, ঈদের সময় আছে আর মাত্র একদিন। এখন প্রচুর বেচাবিক্রি হওয়ার কথা। বাজারে প্রচুর মানুষের উপস্থিতি আছে, বেচাবিক্রিও আছে। কিন্তু যেভাবে বিক্রি হওয়ার কথা কথা, সেভাবে বিক্রি নেই। প্রায় মানুষ শেষ সময়ে গরু কেনার জন্য বসে আছেন।
নগরের বিবিরহাট থেকে কোরবানির পশু কিনে বাড়ি ফিরছেন কাজির দেউড়ি এলাকার নুরুল ইসলাম পিয়ারু। তিনি বলেন, প্রচুর গরু, তবে দাম বেশি। অনেকগুলো পছন্দ হলেও দরদামে হচ্ছে না। গতবার যে গরু কিনেছিলাম ৯০ হাজার টাকায়, এবার সে ধরনের গরুর দাম দেড় লাখ টাকা। পছন্দ হওয়ায় এক লাখ ১০ হাজার টাকায় কিনে নিলাম।
হাট ইজারাদার ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারে প্রচুর গরু রয়েছে। এছাড়া আরও অনেক গরু আসার পথে। শনিবার রাতেও গরু আসবে। বেশি গরু আসায় দামও আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছে। হাটগুলোতে ভারতীয় গরুর চেয়ে দেশি গরুর সংখ্যা বেশি। তবে সীমিত আকারে ভারত, মিয়ানমার ও নেপালি গরু এসেছে।
কুষ্টিয়া থেকে কর্ণফুলী পশুর হাটে গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আজিজ বলেন, কুষ্টিয়া থেকে দুই ট্রাক গরু নিয়ে শুক্রবার সকালে বাজারে আসি। বাজারে প্রচুর গরু আছে, দাম ও বেচাবিক্রি মোটামুটি। কাস্টমার সব সময় কম দিতে চায়। কিন্তু লোকসান দিয়ে তো কেউ গরু বিক্রি করবে না।
ফরিদপুর থেকে আসা রমজান মোল্লা বলেন, ৩০টি গরু নিয়ে শুক্রবারে বাজারে এসেছি। প্রথমদিকে তেমন ক্রেতা ছিল না। সবাই শুধু দেখছে। এখন বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। কোরবানির দিন ঘনিয়ে আসায় সবাই গরু পছন্দ হলেই কিনে নিচ্ছেন।
ক্রেতাদের অভিযোগের বিষয়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থেকে আসা বেপারী মুন্সি মিয়া বলেন, খামারিরা গরু লালন-পালন করেন কিছু লাভের জন্য। এখন সবকিছুর দাম বৃদ্ধি। গো-খাদ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। সে হিসাবে গরুর দামও বাড়তি থাকবে। এটা মেনে নিতে হবে।
৯০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনে বাড়ি ফেরার পথে কথা হয় কাট্টলী এলাকার বাসিন্দা শহীদ ইকবালের সাথে। তিনি বলেন, প্রচুর ঠেলাঠেলির মধ্যে গরু কিনতে হয়েছে। বেশি দামাদামি করার সুযোগ নেই। বারবার আসা অনেক ঝামেলার। পছন্দ হওয়ায় ৯০ হাজার টাকা দিয়ে গরুটা কিনলাম। কোরবানির পশু, তাই মাংসের হিসাব করলে চলবে না। তবে বাজারে যে হারে গরু এসেছে, দাম কিছুটা কমার সম্ভাবনা আছে।
কর্ণফুলী পশুর বাজারের ইজারাদার মো. সাইফুল আলম বলেন, বাজারে যথেষ্ট গরু এসেছে। বাজার জমে গেছে। প্রচুর বেচাবিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। এখনও অনেক গরু বাজারে প্রবেশ করছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় দুটি স্থায়ী বাজার ছাড়াও ছয়টি অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। স্থায়ী পশুর হাট দুটি হল সাগরিকা ও বিবিরহাট। অস্থায়ী হাটগুলো হল কর্ণফুলী পশুর হাট (নুরনগর হাউজিং), স্টিল মিল বাজার, পতেঙ্গা সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, সল্টগোলা রেলক্রসিং মাঠ, পোস্তারপাড় স্কুল মাঠে ছাগল বাজার ও হালিশহর (বড়পুল) বাজার।