নগরীর অর্ধশত স্থানে বসে জুয়ার আসর

58

চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিরাতেই অর্ধশত স্থানে বসে জুয়ার আসর। বাসা বাড়ির ছাদ থেকে শুরু করে অভিজাত ক্লাবেও বসে এসব আসর। মধ্যরাত এমনকি শেষ রাত পর্যন্ত আসর মেতে থাকে। এসব আসরে লেনদেন হয় লাখ লাখ টাকা। তবে ঢাকায় অভিযানের পর ভয়ে আপাতত বন্ধ হয়ে গেছে অধিকাংশ ক্লাবের জুয়ার কারবার। গা-ঢাকা দিয়েছেন হোতারা। এ ব্যাপারে নগর পুলিশও কঠোর অবস্থানে। এর মধ্যে অভিযানও চালিয়েছে। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রয়োজনে চট্টগ্রাম শহরেও অভিযান চালানো হবে। এদিকে গতকাল শুক্রবার রাতে কাজির দেউড়িস্থ আলমাস সিনেমা হল সংলগ্ন হ্যাংআউট ক্লাবে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এসময় মালিকের ছেলে ও কর্মচারিসহ ২৫ জনকে আটক করা হলেও পরে মালিকের ছেলে ও কর্মচারি ছাড়া অন্যদের ছেড়ে দেয়া হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক স্থানে প্রতিরাতেই জমজমাট জুয়ার আসর বসে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা, নানা পেশার লোকজন, জনপ্রতিনিধি, পুলিশ জুয়ায় মেতে উঠে।
নগরীর ফ্রেন্ডস ক্লাব, আবাহনী ক্লাব, মোহামেডান ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক ক্লাব, ওয়াজি উল্লাহ ইনস্টিটিউট, বন্দর রিপাবলিক ক্লাব, পুলিশ প্লাজা সহ বিভিন্ন স্থানে ক্লাবে বসে জুয়ার আসর।
এছাড়াও হাজারী লেনের একাধিক স্থানে প্রতিরাতে জুয়ার আসর বসে। খুলশী, অক্সিজেন, পাথরঘাটা, নালাপাড়া, হালিশহর, আগ্রাবাদ, বড়পোল, ছোটপোল, বিআরটিসি মার্কেট, পাহাড়তলী, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, বহদ্দারহাট, জামতলা বস্তি, ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন, বায়েজিদসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ক্লাবে, বাসা বাড়িতে জুয়ার আসর বসে। পাড়া মহল্লায়ও জুয়ার আসর বসে আসছে।
দিনের বেলায় কোন লোকই থাকে না। সন্ধ্যার পর থেকে ধীরে ধীরে লোকজন আসতে শুরু করে। এক পর্যায়ে জমজমাট হয়ে উঠে। স্তরে স্তরে বসে যায় জুয়ারিরা। চেয়ার-টেবিল নিয়ে কয়েকভাগ হয়ে তারা বসে পড়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে জুয়া খেলা। কিছুক্ষণ পর পর চা এনে দেয় বয়রা।
জানা যায়, এসব জুয়ার আসরে প্রতিরাতে লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়। কেউ রাতারাতি লাখপতি বনে গেলেও কেউ কেউ নিঃস্ব হয়ে ঘরে ফিরে। পরদিন আবারো টাকা যোগার করে নেমে পড়ে জুয়া খেলায়। তবে বেশিরভাগই কোটিপতিরা জুয়ার আসরে আসেন।
বেশ কয়েকটি ক্লাব জুয়ার আসর থেকে রাতে লাখ টাকা আয় করে। আবার কোন কোন ক্লাব ২০ থেকে ৫০ হাজারও আয় করে। ক্লাব ভেদে মাদক কারবারও চলে।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, একটি উন্নত রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন। যারা অনিয়ম করে তারা দেশকে পিছিয়ে দেয়। তাই অনিয়ম ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে চট্টগ্রাম শহরেও অভিযান চালানো হবে।
তিনি গতকাল শুক্রবার থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আন্তঃস্কুল জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিয়োগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
দীর্ঘদিন ধরে এসব ক্লাব ও বাসাবাড়িতে জুয়ার আসর চলে আসছে। থানা পুলিশের জ্ঞাতসারেই জুয়ার আসর বসে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নিয়মিত মাসোহারা পায় বলেও জানা গেছে।
সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, কোন ধরনের জুয়ার আসর বসতে দেয়া হবে না। ক্লাব বা বাসাবাড়িতেও জুয়ার আসর বসার কোন সুযোগ নেই। পুলিশ সব ধরনের জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে। জুয়ার আসরে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকায় জুয়াবিরোধী অভিযান শুরু পর চট্টগ্রামেও দেখা দেয় আতংক। বন্ধ হয়ে গেছে অধিকাংশ ক্লাবের জুয়ার আসর। বুধবার ঢাকায় অভিযান শুরু হলে চট্টগ্রামের জুয়ার আসর ভেঙ্গে কেটে পড়ে জুয়ারিরা। বৃহস্পতিবারও কোন ক্লাবে জুয়ার আসর বসেনি। বর্তমানে সব স্থানেই জুয়ার আসর বন্ধ রয়েছে। গা ঢাকা দিয়েছেন হোতারা। ক্লাব কর্মকর্তারা আর ক্লাবে যাচ্ছেন না। জুয়ার আসর পরিচালনায় জড়িতরা আর ক্লাবমুখী হচ্ছেন না। অনেকে গ্রেপ্তার আতংকে রয়েছেন।
সূত্র জানায়, এসব জুয়ার আসরের সাথে প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতারাও জড়িত রয়েছেন।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মোস্তাক হোসাইন বলেন, আমরা কোথাও জুয়ার আসর বসতে দেব না। এটি একটি অবৈধ পন্থা। তিনি বলেন, প্রতিনিয়তই আমরা জুয়ার আসরে অভিযান চালাই। জুয়ারিদের ধরে আইনে সোপর্দ করি।
সিএমপি সূত্রে জানা যায়, একাধিক ক্লাবে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তবে আগেই গা ঢাকা দেয়ায় কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, কোনভাবেই জুয়ার আসর বসতে দেয়া হবে না। সর্বত্র আমাদের নজরদারি রয়েছে। অভিযান চলছে।