নগরীতে মেট্রোরেল চট্টগ্রামবাসীর জন্য আশাব্যঞ্জক

117

স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলী টানেলের মতো দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আরেক বিপ্লব হতে যাচ্ছে মেট্রোরেল। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকার মেট্রোরেলের কাজ দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। উড়াল সড়কের আদলে উত্তরা থেকে মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার মূল সড়কের প্রায় সর্বত্র শুরু হয়েছে পিলার স্থাপন ও স্লিপার লাইনের কাজ। চলতি বছরের মধ্যে প্রকল্পের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ এবং আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা। ইতোমধ্যে মেট্রোরেলের ১২০ মিটার উড়াল দৃশ্যমান। পুরো কাজ শেষ হলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে উড়াল পথে বিদ্যুৎ চালিত মেট্রোরেলের মাধ্যমে। আগামী বছরের শেষেই দেখা যাবে রাজধানী ঢাকায় ঘণ্টায় একশ’ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন দ্রুতগতির ট্রেন চলাচল করছে মানুষের মাথার ওপর দিয়ে। বর্তমান সরকারের যে ক’টি ফাস্ট ট্র্যাক মেগা প্রকল্প রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম এ মেট্রোরেল। ঢাকার এ প্রকল্প শেষ না হতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছায় চট্টগ্রামেও এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপের কথা গতকাল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বরাতে আমরা জানতে পারি। এটি চট্টগ্রামবাসীর জন্য বড় খোঁজখবর। চট্টগ্রামের প্রতি সরকার প্রধানের প্রীতি ও চট্টগ্রামের উন্নয়নে তাঁর অন্তরিকতার পুনঃবহিপ্রকাশ। এ জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। বেশ কয়েকবছর ধরে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্পের কথা শুনা যাচ্ছিল। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পৃথক পৃথক প্রকল্প প্রণয়নের কথাও আমরা শুনতে পেয়েছিলাম। এসব প্রকল্পগুলোর কী হাল তা জানা না গেলেও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি( সম্ভাব্যতা যাচাই) করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে আমরা জানতে পারি। গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন- চট্টগ্রামের মেট্রোরেল বা এমআরটি লাইনের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি শুরু করার জন্য। তার নির্দেশনা অনুযায়ী আমি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মেট্রোরেলের সাথে যারা জড়িত, তাদের বলেছি অবিলম্বে ফিজিবিলিটি স্টাডি শুরু করতে হবে; বন্দর নগরী চট্টগ্রামের জন্য।’
সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে প্রস্তাবিত মেট্রোরেল প্রকল্পে তিনটি এমআরটি লাইন করার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এমআরটি লাইন-১ এর দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ২৬ কিলোমিটার (২০টি স্টেশন), সিটি গেট থেকে নিমতলা হয়ে শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বর পর্যন্ত লাইন-২ এর দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার (১২টি স্টেশন) এবং অক্সিজেন থেকে ফিরিঙ্গিবাজার ও পাঁচলাইশ থেকে একেখান পর্যন্ত লাইন-৩ এর দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ১৪ কিলোমিটার (স্টেশন ১৫টি)। তিনটি লাইনের মোট দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ৫৪ কিলোমিটার, স্টেশন থাকবে মোট ৪৭টি। প্রতি কিলোমিটারে প্রায় ১ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রস্তাবে। তবে কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রস্তাবিত লাইন স্থাপনে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার ও নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে ‘প্রতিবন্ধক’ মনে করছে প্রাক-যোগ্যতা সমীক্ষাকারী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।
আমরা জানি, বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরীর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে যানজট। এটা বড় দুর্ভাবনারও বিষয়। এ সংকট মোকাবেলায় বহু উড়াল সেতু আন্ডারপাস নির্মাণ করা হলেও যানজট নিরসনে উল্লেখযোগ্য কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সরকার ২০১৪ সালে ঢাকায় মেট্রোরেল চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। যার বাস্তবায়ন এখন শেষপ্রান্তে। আমরা আশা করি, মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামে যানজট কমার পাশাপাশি অর্থনৈতিক গতিও বৃদ্ধি পাবে। বন্দর হবে অধিকতর সচল। মানুষের মধ্যে কর্মস্প্রিহাও বৃদ্ধি পাবে। তবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদ্যমান উড়াল সেতুসহ যেসব জটিলতা রয়েছে তা দূর করে প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতাও প্রয়োজন। রাজধানীতে মেট্রোরেল, পাতালরেলসহ আরও ফ্লাইওভার নির্মিত হতে যাচ্ছে। খুব ভাল কথা। তবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর ও সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম নগরীতে এসব প্রকল্প আরো ব্যাপকভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ জরুরি বলে আমরা মনে করি।