নগরীতে ভয়ঙ্কর অপহরণচক্র!

82

চট্টগ্রাম মহানগরীতে ভয়ঙ্কর অপহরণকারীচক্রের তৎপরতা বেড়ে গেছে। গতকাল সরকারি মুসলিম হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রকে ওই চক্র ‘বাবা পাঠিয়েছে’ বলে তাদের গাড়িতে তুলে নেয়। তারপর গাড়ি থেকেই ওই ছাত্রের বাবাকে ফোন দিয়ে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। বাবার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তিন ঘণ্টার মধ্যে তাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।
অপহরণের শিকার হওয়া ওই ছাত্রের নাম সাইদুল ইসলাম শামীদ (১১)। গতকাল বিকেল ৩টার দিকে ঘাটফরহাদবেগ এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। তবে অপহরণকারীদের কাউকে আটক করতে পারেনি। শামীদ রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী শামসুল ইসলামের ছেলে।
গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে শামীদকে উদ্ধারের বিষয়টি অবহিত করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, পুলিশের তৎপরতায় অপহরণের মাত্র ৩ ঘণ্টার মাথায় শিশু শামীদকে উদ্ধার করা হয়েছে। অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
জানা যায়, রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী মো. সামশুল ইসলামের ছোট ছেলে সাইদুল ইসলাম শামীদকে গতকাল স্কুল ছুটির পর নিতে আসেন তার মা। কিন্তু স্কুল ক্যাম্পাসে শামীদকে না পেয়ে তিনি বিষয়টি শামীমের বাবাকেক মোবাইলে জানান। ছেলেকে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে সামশুল ইসলামের মোবাইলে একটি ফোন আসে। এতে তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অজ্ঞাতনামা অপহরণকারীরা। বেলা ১২টার দিকে কোতোয়ালী থানা পুলিশকে তিনি বিষয়টি অবহিত করেন। পুলিশ তৎপরতা শুরু করলে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শামীদকে ঘাটপরহাদবেগ এলাকায় ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায় অপহরণকারীরা।
অপহরণের শিকার শামীমের বাবা শামসুল ইসলাম বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মুসলিম হাইস্কুলের সামনে থেকে শামীদকে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। পরে আমাকে ফোন দিয়ে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। আমি টাকা দিতে পারবো না জানিয়ে দিই তাদের এবং পুলিশকে বিষয়টি জানাই। পরে শামীদকে ঘাটফরহাদবেগ এলাকা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
সাইদুল ইসলাম শামীদ জানায়, ‘স্কুল ছুটি হওয়ার পর দুইজন লোক এসে বলে বাবা তাদেরকে পাঠিয়েছে আমাকে নেওয়ার জন্য। তখন আমি গাড়িতে উঠি। রাস্তায় জ্যাম আছে বলে তারা আমাকে নন্দনকানন বাসার দিকে না নিয়ে আন্দরকিল্লার দিকে নিয়ে গেলে আমি চিৎকার করি। তখন তারা আমার গলায় ছুরি ধরে এবং মুখ বেঁধে ফেলে। পরে আর কিছু দেখিনি।’
শামীদ আরও জানায়, ‘অনেকক্ষণ গাড়িতে থাকার পর তারা আমার বাবার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে। গাড়িতে আমাকে নিয়ে অনেকক্ষণ ঘুরে তারা। তাদের মোবাইলে অনেকগুলো কল আসে। পরে আমাকে গাড়ি থেকে কোথায় জানি তারা নামিয়ে দেয়।সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শাহ মুহাম্মদ আবদুর রউফ, সিনিয়র সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা, কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্কুলছাত্রকে কৌশলে তুলে নিয়ে বাবার কাছে মুক্তিপণ দাবির মতো ঘটনা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। এ ধরনের অপহরণের ঘটনা নগরীতে এর আগে খুব বেশি ঘটেনি। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়েও অভিভাবকদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।