নগরীতে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস উদ্যাপন

33

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যানজট মুক্ত রাখতে সপ্তাহে একদিন ব্যক্তিগত গাড়ি মুক্ত রাখা হয়। যানজট কমানো ও ব্যয় কমাতে সরকারি ছুটি দুই দিন ঘোষণা করা হলেও সমাধান আসেনি। এর মূল কারণ পুরো সড়ক জুড়ে ব্যক্তিগত গাড়ির আধিপত্য এবং গণপরিবহনের বেহাল দশা।
গতকাল বুধবার নগরীর রউফাবাদ এলাকায় আইএসডিই বাংলাদেশ এর উদ্যোগে কার ফ্রি এলায়েন্স বাংলাদেশ ও ইনস্টিটিউট অব ওয়েল বিং এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এসব কথা জানান বক্তারা।
বক্তারা বলেন, পুরাতন ও জীর্ণ বাসগুলির কারণে গণপরিবহনে যাতায়ত করা কঠিন। অন্যদিকে বাস শ্রমিক ও মালিকদের স্বেচ্ছাচারী ও অশালীন আচরণের কারণে নারী যাত্রীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। প্রতিনিয়তই বাস শ্রমিক ও মালিকদের অমানবিক আচরণে সাধারণ যাত্রীরা অসহায় ও জিম্মি। চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও চট্টগ্রামের একজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দুর্ঘটনায় নিহত হলে তার পরিচয় মুছে ফেলতে মুখমন্ডল থেতলে বিকৃত করে দেবার মতো ঘটনা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।
নারী যাত্রীরা প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ও নানা সহিংষতার শিকার হচ্ছে। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত, কলকারখানা বিভিন্ন জায়গায় যাতায়তে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বাড়ছে। যার ফলশ্রুতিতে যানজটে আকাল পুরো নগরজীবন। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শ্রমঘণ্টা যেমন নষ্ঠ হচ্ছে, তেমনি নির্ধারিত সময়ে মানুষ গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না। এ অবস্থায় পৃথিবীর উন্নত দেশের আদলে সপ্তাহে একদিন ব্যক্তিগত গাড়ি মুক্ত রাখা, গণপরিবহনগুলির আধুনিকায়ন, যাত্রীদের প্রতি মর্যদাপূর্ণ আচরণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের উদ্ধুদ্ধকরণ করার দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত র‌্যালী ও মানববন্ধনে।
বক্তরা আরো বলেন, প্রতিদিন যানজটের কারণে হাজার হাজার কর্মঘণ্টা অপচয়ের ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে। সড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে। সময় অপচয়ের কারণে অনেকেই পরিবারের সদস্যদের সময় দিতে পারছে না। নেই অবসর-বিনোদনের জন্য যথেষ্ট সময়। যানজটে বসে থাকা যানবাহনগুলিতে পুড়ছে মূল্যবান জ্বালানী। যানবাহন হতে নির্গত বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ মারাত্মক দূষণ সৃষ্টি করছে। প্রচন্ড শব্দ ও বিষাক্ত ধোঁয়ায় মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন জটিল রোগে। রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যার বাৎসরিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এভাবে চলতে থাকলে ২০২৫ সাল নাগাদ যানবাহনের গড় গতি দাঁড়াবে ঘন্টায় ৪ কি.মি.। যান্ত্রিক যানের আধিক্যের কারণে বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, সময় অপচয়, খোলা জায়গার সংকট এবং সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অবস্থা যদি আমাদের নগর জীবনে হয় তাহলে আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর ও নিরাপদ নগরী বিনির্মাণ করা অসম্ভব। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন শহরে বিআরটিসির বাস থাকলেও চট্টগ্রাম নগরীতে ত্রুটিপূর্ণ বাসের কারণে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। এছাড়াও বৃহৎ শিল্প ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির নিজস্ব বাস সার্ভিস না দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে। ফলে যানজট প্রতিনিয়তই বাড়ছে। অন্যদিকে সকালে ও সন্ধ্যায় অফিস যাতায়াতে গণপরিবহনের বাসগুলিতে তীব্র সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। তাই যাত্রীদের জন্য নিরাপদ চলাচল ও সুন্দর নগর প্রতিষ্ঠায় গণপরিবহনের আধুনিকায়ন জরুরি। একই সাথে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করার ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করা প্রয়োজন।
ক্যাব পাঁচলাইশের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ও ক্যাব বিভাগীয় সংগঠক জহুরুল ইসলামে সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন সমাজ সেবা কর্মকর্তা নবিউল ইসলাম, ক্যাব মহানগরের যুগ্ন সম্পাদক জানে আলম, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি চৌধুরীকে এনএম রিয়াদ, আইএসডিই বাংলাদেশের রহিমা আখতার, ক্যাব চান্দগাঁওয়ের সেলিম সাজ্জাদ, ক্যাব পাঁচলাইশের সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব ডিপিও শাম্পা কে নাহার, জেড এইচ শিহাব, শাকিল আহমেদ মুন্না, জাবেদ আলম শাহীন, রেশমী আখতার, মুক্ত শেখ মুক্তি, দীপ্ত ঘোষ প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি