নগরীতে বহুল প্রতীক্ষিত সুইমিংপুলের যাত্রা শুরু

110

সুইমিংপুল হবে আর হতে পারবে না, এমন সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। সুইমিংপুল নির্মাণ বন্ধের দাবিতে ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ, মামলা, পক্ষে-বিপক্ষে নানান যুক্তিতর্ক দেশের আর কোথাও হয়েছে বলে জানা নেই। তবে, সঠিক সময়ে কাজ শুরু, মামলায় সাময়িক বন্ধ, আদালতের রায়ে আবার কাজ শুরু এবং মাস আটেক আগে চট্টগ্রাম সুইমিংপুল নির্মাণের কাজ সম্পন্ন। গত ২ মে সিজেকেএস সাঁতার প্রতিযোগিতা দিয়ে টেস্ট কেইস শেষে সেই বহুল আলোচিত সুইমিংপুলটি অবশেষে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো ১০ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার। বেলুন উড়িয়ে দৃষ্টিনন্দন সুইমিংপুলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহ্সান রাসেল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘শহরাঞ্চলের ছেলে-মেয়েরা সুইমিং কি জিনিস ভুলতে বসেছে। আমরা ছোটকালে বাসার আশে-পাশে অনেক পুকুর, ডোবা পেতাম যেখানে মনের সুখে সাঁতার কাটতাম। এখন সেসব হারিয়ে যাচ্ছে। আজকের ছেলে-মেয়েদের সুইমিং করার মতো জায়গা নেই। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগ নিয়েছেন দেশের সব জেলায় সুইমিংপুল নির্মাণের।’ তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি সুইমিংপুল নির্মাণের। নতুন এ সুইমিংপুল উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তাই এ দিনটা চট্টগ্রামের মানুষের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই সুইমিংপুল নির্মাণের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে।’
মানুষের জীবনে সাঁতারের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সাঁতার শুধু খেলা বা ব্যায়ামের জন্যই নয়, জীবনের নিরাপত্তা বিধানের জন্যও সাঁতার শেখাটা জরুরি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ইতিমধ্যে ২২টি সুইমিংপুল নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক জেলাতেই সুইমিংপুল নির্মাণ করা হবে। কিন্তু অনেক জায়গায় এই সুইমিংপুলের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নেই। সুইমিংপুল কিভাবে সুষ্ঠভাবে ব্যবহার করতে হবে তার জন্যও সকল প্রকার ব্যবস্থা রাখতে হবে।’
এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট ও জিমনেশিয়ামের সংস্কারের ব্যাপারে সিটি মেয়র মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি সিজেকেএস’র আবেদনের প্রেক্ষিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরবর্তী সভায় তা উপস্থাপনের ঘোষণা দেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন।
সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, অনেকে না বুঝে সুইমিংপুল নির্মাণের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু সুইমিং অনেকগুলো ক্রীড়ার মধ্যে লাইফলাইন হিসেবে কাজ করে। ফিটনেস যদি ধরে রাখতে হয় সুইমিং সবচেয়ে বড় ইভেন্ট। তাছাড়া চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থাই হলো একমাত্র সংস্থা যেখানে প্রতি বছর নিয়মিত ৩৪/৩৫টি ক্রীড়ার আয়োজন করে থাকে। বাংলাদেশের অন্য কোথাও এর দৃষ্টান্ত নেই।
এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের ফ্লাড লাইট কার্যকর ও জিমনেসিয়াম আধুনিকায়ন করে দিলে ৫ বছরে ভালো মানের খেলোয়াড় তৈরি করে দেবেন বলে ঘোষণা দেন সিটি করপোরেশন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
তিনি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহ্সান রাসেলকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, চট্টগ্রামের মানুষের জন্য স্বপ্নের সুইমিংপুল তৈরি করে দিয়েছি। আউটার স্টেডিয়ামের আশপাশে সৌন্দর্যবর্ধন করেছি। সবকিছু নিজেদের সামর্থে। আমাদের আলাদা কোনো অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন নেই। শুধু স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট কার্যকর ও জিমনেসিয়াম আধুনিকায়ন করে দিলে ১৫০ টাকার স্টাম্পে লিখিত দেবো, পাঁচ বছরে ভালো মানের খেলোয়াড় দেশকে উপহার দেব।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মাদ জাফর উদ্দিন বলেন, বর্তমান ক্রীড়া বান্ধব সরকারের আমলে সারা বাংলাদেশে নবজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। ক্রীড়া সংস্থা নিয়ে আমাদের ২০টি প্রজেক্ট ছিলো। নতুন করে আরো ৪১ টি যোগ হওয়ায় বর্তমানে ক্রীড়া সংস্থার অধীনে মোট ৬১টি প্রজেক্ট রয়েছে। এসময় তিনি সুইমিংপুল সুষ্ঠু ব্যবহার ও রক্ষনাবেক্ষণের জন্য আহব্বান জানান।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, আমাদের চট্টামবাসীর জন্য আজ শুভদিন। কারণ বহুল প্রতীক্ষিত সুইমিংপুল উদ্বোধন করা হবে। এই জায়গায় এক সময় মাদকসেবিরা মাদক সেবন করতো। আজ যেখানে সুইমিংপুল শোভা পাচ্ছে। চট্টগ্রামের আকর্ষণীয় জায়গাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নান্দনিক এলাকা হবে এটি।
সিজেকেএস’র অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীমের সঞ্চালনায় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) সহসভাপতি মোজাম্মেল হক, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক মো. শাহ আলম, সিজেকেএস সাঁতার কমিটির চেয়ারম্যান এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল।