নগরীতে কমেছে প্রাণচাঞ্চল্য

112

তিন দিন ছুটি পেয়ে ৩০ ডিসেম্বর ভোট দিতে নিজ নিজ এলাকায় ফিরছেন নগরীতে বসবাসরত জেলা-উপজেলার ভোটাররা। ফলে ঈদের ছুটির মতই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে নগরী। যান চলাচলও কমে গেছে। এদিকে পুলিশ মেস ও হোটেলগুলোতে নজরদারি বাড়িয়ে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী আজ শুক্রবার থেকে মোটরসাইকেল এবং কাল শনিবার হতে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ থাকবে।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, নগরীর তিনটি পূর্ণ ও একটি আংশিক আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১৫ লাখ ১৭ হাজার। এরমধ্যে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯০ হাজার ৩৬৩ জন, চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-ডবলমুরিং) আসনে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৬ জন, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে ৫ লাখ ৭ হাজার ৩৫৫ জন এবং চট্টগ্রাম-৮ আসনের চান্দগাঁও অংশে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার।
নগরীতে প্রায় ৭০ লাখ মানুষের বসবাস। এরমধ্যে ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষ নিজ নিজ এলাকায় ভোটার। এসব ভোটারদের মধ্যে অধিকাংশই বাড়ি যাচ্ছেন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে।
এক তথ্যে জানা যায়, নগরীতে বসবাসরতদের মধ্যে রাউজান, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুÐ, মিরসরাই, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, পটিয়া, বাঁশখালী, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়াসহ জেলার বিভিন্ন আসনের ভোটার রয়েছেন কয়েক লাখ। এরমধ্যে টেরিবাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকার লক্ষাধিক ব্যবসায়ী-কর্মচারী সাতকানিয়া-লোহাগাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার ভোটার।
জানা যায়, তিন দিনের সরকারি ছুটি শুরু হচ্ছে আজ শুক্রবার থেকে। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি, পরদিন রবিবার ভোটগ্রহণের দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে নির্বাচনকে ঘিরে তিন দিনের সরকারি পাচ্ছেন চাকুরিজীবীরা।
আজ শুক্রবার থেকে তিন দিনের ছুটি শুরু হওয়ার প্রেক্ষিতে লোকজন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার অফিস শেষে বাড়ি ফিরতে শুরু করেন লোকজন। যারা চট্টগ্রামের বাইরের জেলার লোক তাদের বেশিরভাগ বৃহস্পতিবার শহর ছাড়েন।
রিয়াজউদ্দিন বাজার, টেরিবাজারসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ব্যবসায়ীরা আজ শুক্রবার বাড়ি ফিরতে শুরু করবেন। দোকান কর্মচারীরাও যাওয়া শুরু করবেন। শনিবার দোকান খোলা রাখার কথা থাকলেও অধিকাংশই বন্ধ থাকবে বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের।
বিশেষ করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকরা তাদের দলীয় প্রার্থীকে ভোট দিতে নগর ছাড়ছেন।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম বলেন, জাতীয় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচন। নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা নৈতিক দায়িত্ব এবং সেটা তাদের মৌলিক অধিকার। ভোট দিতে হাজার হাজার মানুষ শহর ছাড়বে এটা স্বাভাবিক। নগরীতে ভোটার নয় এমন ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি চাকুরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষও নগরী ছাড়ছেন।
ফটিকছড়ির ভোটার মামুনুর রশীদ বলেন, পাঁচ বছর পর ভোট দেয়ার সুযোগ এসেছে। এ সুযোগতো হাতছাড়া করা যায় না। তাছাড়া আমার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করব। আমার একটা ভোটের জন্য প্রার্থী হেরেও যেতে পারেন।
সূত্র জানায়, দলীয় নেতারা তাদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। বাড়িতে গিয়ে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করছেন। অনেক ভোটার তাদের পরিবার পরিজন নিয়েই বাড়ি যাচ্ছেন।
রাউজানে মহাজোট মনোনীত প্রার্থী এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি বলেন, শহরে বসবাসরত আমার এলাকার ভোটাররা ভোট দিতে নিজ এলাকায় যাবেন। তারা ভোট দেয়া কখনো মিস করবেন না। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী সমর্থকরাতো অবশ্যই যাবেন।
হাটহাজারীতে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ধানের শীষে ভোট দিতে মানুষ উদগ্রিব হয়ে আছেন। শহরে বসবাসকারী হাটহাজারীর ভোটাররা ভোটের আগেই বাড়ি চলে যাবেন।
এদিকে নগরীর মেস ও হোটেলগুলোতে নজরদারি বাড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। কয়েকটি মেসে অভিযানও চালিয়েছে।
সিএমপি সূত্রে জানা যায়, তাদের কাছে খবর রয়েছে বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্ত্রাসীরা নগরীর বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান নিতে পারে। ভোটের দিন সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে তারা। একারণে হোটেলগুলোর দিকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
মেসগুলোতেও বহিরাগতরা অবস্থান নিয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। একারণে নজরদারি বাড়িয়েছে। কয়েকটি মেসে অভিযানও চালিয়েছে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার এস এম মোস্তাইন হোসাইন বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনও সন্ত্রাসী যাতে অবস্থান নিতে না পারে সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি। মেস ও হোটেলগুলোর দিকে নজর রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে শনিবার মধ্যরাত ১২টা থেকে ভোটের দিন ৩০ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত সবধরনের যানবাহন চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
তবে শুক্রবার মধ্যরাত (১২টা) থেকে ১ জানুয়ারি মধ্যরাত (১২টা) পর্যন্ত মোট চার দিন সারাদেশে মোটরসাইকেল চালানোয় নিষিদ্ধেধাজ্ঞা রয়েছে। শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন বিটে কর্মরত সাংবাদিকরা ইসির স্টিকার ব্যবহার করে বাইক চালাতে পারবেন।
শনিবার মধ্যরাত থেকে বেবিটেক্সি, অটোরিকশা, ইজিবাইক, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পোসহ স্থানীয় যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।