নগরীতে এবার মেট্রোরেল স্থাপনের উদ্যোগ সিডিএ’র

36

দুই বছর আগে চট্টগ্রাম নগরে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহের কথা জানিয়েছিল চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সাইনোহাইড্রো ব্যুরো অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানিটির কর্মকর্তারা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সাথে সাক্ষাৎ করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেন। সম্ভাব্যতা যাচাইসহ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পাঁচ বছর সময়ের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছিলেন কোম্পানির কর্মকর্তারা। কিন্তু দীর্ঘ দুইবছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও আলোর মুখ দেখেনি প্রকল্পটি। সম্প্রতি মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সিডিএ’র সাথে চীনা একটি কোম্পানির এ নিয়ে বৈঠকও হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, যে কোনো শহরের জনসংখ্যা ২০ লাখের বেশি হলে মেট্রোরেলের প্রয়োজন হয়। যানজট নিরসন ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য মেট্রোরেলকে নিয়ামক হিসাবেই দেখা হয়। বর্তমানে নগরীতে চলাচলরত যানবাহানের গড় গতি ঘণ্টায় ১২ থেকে ১৫ কিলোমিটার। মেট্রোরেল হলে এ গতি আরো বাড়বে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় মেট্রোরেল অভাবনীয় সুযোগ এনে দিবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড ট্রেন চালুর পরিকল্পনা করছে সরকার। হাইস্পিড ট্রেন চালুর সাথে সাথে নগরীর মধ্যেও যোগাযোগ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। অন্যথায় হাইস্পিড ট্রেন চালু করেও কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। বিষয়টিকে মাথায় রেখে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দুই পক্ষই মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের পক্ষে রয়েছে। সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে যানজট নিরসনসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি বিশিষ্টজনদের।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্প নিয়ে আমরা চীনের সাথে বৈঠক করেছিলাম। এ ধরনের প্রকল্পগুলো মূলত দুইভাবে হয়। একটা হলো প্রকল্প আকারে গ্রহণ করে সেটা বাস্তবায়ন করা। আরেকটা হলো সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) প্রকল্প বাস্তবায়ন। চায়না থেকে যারা আসেন তারা জিটুজি নিয়ে আসেন। আমাদেরকে বলেছেন, আমরা চিন্তাভাবনা করে অগ্রসর হবো। এটা নির্ভর করবে ফিজিবিলিটি স্টাডির উপর। তারপর কোন সংস্থা বাস্তবায়ন করবে সেটা তখন দেখা যাবে। সত্যিকার অর্থে আমাদের গণপরিবহন সেবার বৃদ্ধি প্রয়োজন।
উন্নত বিশ্বে নগর যোগাযোগের দ্রæত ও জনপ্রিয় মাধ্যম মেট্রোরেল। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীতে ৬০ লাখ মানুষের বসবাস। বিপুল এ মানুষের মধ্যে প্রতিদিন বাইর থেকে দুই লাখ মানুষ নগরীতে প্রবেশ করে। যাতায়াতরত এসব মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ করতে ভূমিকা রাখবে মেট্রোরেল। তাছাড়া আগামীতে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম আরো বৃদ্ধি পাবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড রেল চালু হবে। এ কার্যক্রমে যুক্ত হতে হলে চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরাও।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, আমাদের বর্তমান অবকাঠামো পর্যাপ্ত নয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার বিকল্প চিন্তা করতে হবে, আরো সহজ করতে হবে। ঢাকায় মেট্রোরেল কাজ শেষের পথে, চট্টগ্রাম কেন বসে থাকবে। তাই কালক্ষেপণ না করে জনগণের আশা আকাক্সক্ষা পূরণে মেট্রোরেল নির্মাণের আগ্রহ দেখিয়েছি। অভিজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করা হয়েছে। ফিজিবিলিটি স্টাডি করার জন্য সবাই সম্মতি দিয়েছে। আগামী সপ্তাহে চায়না প্রতিনিধি দল আসবে। সবকিছু ঠিক থাকলে তাদের সাথে এমওইউ সাইন করবো। সিডিএ বোর্ডও এটি সম্মতি দিয়েছে। এটি বিশাল কাজ, শুধু ফিজিবিলিটি স্টাডি করতেই তিন বছর সময় লাগবে।
নগর ভবনে ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মেয়রের সাথে বৈঠকে চীনের সাইনোহাইড্রে ব্যুরো অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের বাংলাদেশ কান্ট্রি ম্যানেজার হোয়াং জিং বলেছিলেন, সম্ভাব্যতা যাচাইসহ পাঁচ বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরে মেট্রোরেল বাস্তবায়ন সম্ভব। মেট্রোরেল করা হলে নগরীতে যানজট নিরসনসহ যোগাযোগ ব্যবস্থায় গতি আসবে।
নগর পরিকল্পনাবিদ জাহিদ আবছার চৌধুরী বলেন, আমরা বাণিজ্যিক শহরে বসবাস করছি। এখানে যানজট কোনোভাবেই কাম্য নয়। মেট্রোরেল যাতায়াতের জন্য সহজ ও যানজটমুক্ত মাধ্যম হতে পারে। প্রকল্প যেই করুক, সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। সমন্বিত কাজ না হলে মাঝপথে জনগণের ভোগান্তি বাড়বে।