নগরীতে এখনও সাড়ে তিন হাজার মেয়াদোত্তীর্ণ ট্যাক্সি

100

মনিরুল ইসলাম মুন্না
নগরীতে চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ ৩ হাজার ৭৫৫টি সিএনজি চালিত ট্যাক্সি। এসব মেয়াদোত্তীর্ণ ট্যাক্সির সিলিন্ডারগুলো যে কোনো মুহূর্তে বিস্ফোরিত হয়ে ঘটতে পারে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ইতোমধ্যে নগরীতে এ ধরনের বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও সংশ্লিষ্টদের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে এসব গাড়ি চলাচল করছে।
পুলিশ বলছে, মেয়াদোত্তীর্ণ ট্যাক্সি চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমরা এসব গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। বিআরটিএ বলছে, মেয়াদোত্তীর্ণ ট্যাক্সির বিষয়ে আমরা সদর দপ্তরে জানিয়েছি, পরবর্তী আদেশের অপেক্ষায় আছি।
জানা যায়, এরমধ্যে ২০০৪ সালে তৈরিকৃত ট্যাক্সি রয়েছে ৩ হাজার ৬১৬টি, ২০০৩ সালে তৈরিকৃত ৪৪টি এবং ২০০২ সালে তৈরিকৃত ৯৫টি। সবগুলো ট্যাক্সির লাইফ টাইম রয়েছে ১৫ বছর করে। এরমধ্যে ২০০৪ সালে তৈরি ও নিবন্ধিত গাড়ির মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শেষ হলেও ২০০২ এবং ২০০৩ সালের ট্যাক্সিগুলো অজানা কারণে স্ক্র্যাপের আওতায় আনেননি ট্যাক্সি মালিকরা।
বিআরটিএ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ৪টি সিএনজি ট্যাক্সির সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এতে ৩ জন প্রাণ হারান এবং বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞপন জারি না হওয়াতে এখনো রাস্তায় চলছে এসব গাড়ি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কিছুদিনের মধ্যে ওসব গাড়ি স্ক্র্যাপ করার ঘোষণা আসতে পারে।
যাত্রীরা বলছেন, আমরা এখন ভয়ের মধ্যে আছি, কোন সময় বিস্ফোরণ ঘটে তার কোনো ঠিক নেই। সরকারের উচিত গাড়িগুলোকে স্ক্র্যাপ করা। তা নাহলে পুনরায় রি-টেস্ট করে রাস্তায় চলাচলের উপযোগী করা। একটি জীবনের মূল্য তো সরকার দিতে পারবে না। সুতরাং দ্রুত একটি ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
সিএনজি ট্যাক্সি চালক মো. সালাউদ্দিন বলেন, আমরা ট্যাক্সিগুলো ভালভাবেই চালাচ্ছি, কোনো সমস্যা দেখা দিচ্ছে না। সমস্যা হলে মিস্ত্রিরা ঠিক করে দিচ্ছেন। সিলিন্ডার টেস্ট এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিলিন্ডারে ঠিকঠাক গ্যাস ভর্তি করলে কোনো সমস্যা নেই। যদি কেউ অতিরিক্ত নেয়, তবে সেটি গাড়ির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
বিস্ফোরণ হলে কি করবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কপালে যা আছে তাই হবে। এখানে হাজার হাজার গাড়ি সিলিন্ডার টেস্ট না করে চলছে ।
যাত্রী মিনহাজ উদ্দিন মুহি বলেন, শহরের প্রত্যেকটি সিএনজি ট্যাক্সি বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে রাস্তায় চলাচল করে। কেউ পুলিশকে মাসোহারা দেয় আবার কেউ বড় নেতাদের মাসোহারা দেয়, যাতে কেউ বিরক্ত না করে। তা নাহলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চলাচল করতে দিতো না।
যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর এবং জেলায় ইতোপূর্বে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকজনের প্রাণহানিসহ আহতের ঘটনা ঘটে। আমরা চাই পরবর্তীতে আর কোনো মায়ের কোল যেন খালি না হয়। বর্তমানে যেসব সিএনজি ট্যাক্সি রাস্তায় চলাচল করছে সেগুলোকে চুয়েট থেকে পরীক্ষা করে একটি প্রতিবেদন দিতে হবে। অন্যথায় এগুলোকে স্ক্র্যাপের ঘোষণায় এনে রাস্তায় চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যদি মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়িতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তার দায়ভার বিআরটিএ’কে নিতে হবে। কারণ গাড়ির অনুমতি দেয়া এবং বন্ধ করার এখতেয়ার একমাত্র বিআরটিএ’র। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) এস এম মোস্তাক আহমেদ খান বলেন, নিষিদ্ধ ট্যাক্সিগুলোর বিষয়ে বিআরটিএ’কে জানানো হয়েছে। আমরা বিআরটিএ’র সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। তাছাড়া সিএমপি’র পক্ষ থেকে নগরীর সড়কে নিষিদ্ধ ট্যাক্সিগুলোকে চলাচল করতে দিচ্ছি না। প্রতিনিয়ত এসব গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছি।
এ ব্যাপারে বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ পূর্বদেশকে বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ট্যাক্সিগুলোকে স্ক্র্যাপের আওতায় আনতে আমরা সদর দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছি, পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছি।