নগরবাসীকে রক্ষায় সাড়ে ৬ হাজার কর্মীর লড়াই

22

করোনা ভাইরাস আতঙ্কে কার্যত অচল চট্টগ্রামের অধিবাসীরা জীবন বাঁচাতে সময় কাটাচ্ছেন ‘ঘরবন্দি’ হয়ে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিল্প কারখানা সব বন্ধ। কেবল কিছু মানুষ মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে দিবারাত্রি লড়ছেন জীবাণুনাশকসহ নানা সরঞ্জাম নিয়ে। এ লড়াইয়ে শামিল রয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সাড়ে ছয় হাজার কর্মীও। যাদের নেতৃত্ব দিয়ে দিন-রাত কাজ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।
করোনা ভাইরাসের কারণে ২৬ মার্চ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারি, বেসরকারি ও আধা সরকারি অফিসের সবাই ছুটিতে থাকলেও সিটি করপোরেশনের ৪ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী দৈনিক রুটিন কাজের বাইরে গিয়ে সড়ক ও বাসাবাড়ির আশপাশে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন। কোথাও যাতে আবর্জনার ভাগাড় না হয়, সে ব্যাপারে মেয়রের নির্দেশনা বাস্তবায়নে নগরবাসীকে বাঁচাতে কাজ করে যাচ্ছেন অকুতোভয় এসব সেবক।
এ বিষয়ে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, করোনা আতঙ্কে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন নগরবাসীর সেবায় সব ধরনের কাজ করে যাবে। গতকাল রবিবার থেকে ৪১টি ওয়ার্ডে ৪ হাজার পরিবারকে চাল-ডাল প্রদান করা হচ্ছে। যেখানে সরকার প্রদত্ত পাঁচ কেজি চালের সাথে এক কেজি ডাল দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এছাড়া মেয়রের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৩ হাজার পরিবারকে নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান যীশু জানান, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চট্টগ্রামবাসীর পাশাপাশি কর্মরত সেবকদের হাত ধোয়ার স্যানিটাইজার ও মাস্ক দেওয়া হয়েছে। আগামী বুধবারের মধ্যে তাদের জন্য হ্যান্ড গ্লাভস্ও সরবরাহ করা হবে।
চসিক সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশন এলাকার প্রধান প্রধান সড়কে জীবাণুনাশক ছিটানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছে চসিকের যান্ত্রিক বিভাগ। ৪২ হাজার লিটার ক্ষমতা সম্পন্ন তিনটি ভাউজারে করে এসব জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে। এ সময় সিটি করপোরেশনের সকল কার্যক্রম সচল রাখতে কাজ করছে বিভাগটির চালকসহ ১ হাজার ২শ কর্মী।
চসিকের যান্ত্রিক বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুদীপ বসাক বলেন, গতকাল থেকে ৪১টি ওয়ার্ডে শুরু হয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার বিতরণ কর্মসূচি। এছাড়া সিটি করপোরেশনের সকল যান্ত্রিক সেবা নিশ্চিত করতে ঘোষিত সাধারণ ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তাছাড়া চসিকের ৪টি ভাউজারের সাথে সেনাবাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিসের ভাউজার যুক্ত হয়ে জীবাণুনাশক ছিটাবে কর্পোরেশন এলাকায়।
অন্যদিকে সারাদেশে প্রথমবারের মত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন করোনা রোগীদের ব্যয়ভার বহন করার ঘোষণা দেয়। এতে সিটি করপোরেশনের একটি জেনারেশন হাসপাতালসহ প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিউনিটি সেন্টার খোলা রেখেছে সংস্থাটি। তাই স্বাস্থ্য বিভাগের ৮শ কর্মকর্তা-কর্মচারীও সাধারণ ছুটির বাতিল করা হয়েছে।
করোনা রোগীসহ নগরবাসীকে সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা দিতে তারা নিবেদিত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চসিকের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম উদ্দীন। তিনি জানান, করোনায় সিটি করপোরেশনের কন্ট্রোলরুম দামপাড়া থেকে চসিক জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানে সার্বক্ষণিক ডাক্তার, নার্সসহ দায়িত্বেরতরা নগরবাসীর সেবায় নিয়োজিত থাকবেন। করোনা সংক্রমণ সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য কন্ট্রোলরুমের ০৩১-৬৩৪৫৮৪ নম্বরে জানানোর জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
অন্যদিকে করোনা আক্রান্তের সময় চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগের সাড়ে ৪শ কর্মীর ছুটিও বাতিল করা হয়েছে। নগরে আলোকায়ন নিশ্চিত করতে তারা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ।