নগরজুড়ে তীব্র যানজট

40

রমজান শুরু হতে না হতেই নগরজুড়ে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে গতকাল দুপুরের পর তা আরো তীব্র হয়। বিমানবন্দর সড়কে একটানা কয়েক ঘণ্টা যানজট লেগেই ছিল। দিনের বেলায় পণ্যবাহী ট্রাক-লরি চলাচল, ট্রাফিক আইন না মানা সহ বিভিন্ন কারণে এ যানজট বলে অনেকে মনে করছেন। এতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছে।
আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। রোজা শুরুর আগের দিন নগরজুড়ে এ যানজট ছিল অসহনীয়। এতে নাকাল হয়ে পড়ে নগরবাসী। কোন রুটই যানজটমুক্ত ছিল না। নির্দিষ্ট সময়ে কেউ গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি। ক্ষেত্র বিশেষে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় কাটিয়েছেন যাত্রীরা। সকালে পরিস্থিতি কিছুটা ঠিকঠাক থাকলেও দুপুরের পর সেটা পাল্টে যায়। সব রুটই যানজটের কবলে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বহদ্দারহাট থেকে ষোলশহর দু’নম্বর গেট, জিইসি মোড়, বায়েজীদ বোস্তামি সড়ক, আগ্রাবাদ, বাদুরতলাসহ বিভিন্ন রুটে যানজট ছিল তীব্র। বহদ্দারহাট থেকে শাহ আনামত সেতু পর্যন্ত সড়কে দফায় দফায় যানজট লেগেই ছিল। এমনিতে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি, তার উপর ভাঙ্গাচোরা-সব মিলিয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে সড়কটি। রয়েছে একের পর এক গর্ত। যানবাহন চলাচল করেছে খুবই ধীরগতিতে। ২০ মিনিটের রাস্তা পার হতে দু’ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে গেছে। কোন কোন সময় ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল যানবাহন।
বহদ্দারহাট থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত হাইওয়ে সড়কে দফায় দফায় ছিল যানজট। ষোলশহর দুই নম্বর গেট ও জিইসি মোড় এলাকার যানজট যেন নিত্যচিত্র। কয়েক দফা যানজটে ২০ থেকে ৩০ মিনিট এমনকি এক ঘণ্টাও সময় নেয়। বিকালে তিন দফা যানজট লাগে এ সড়কে। সন্ধ্যা পর্যন্ত নাকাল অবস্থার সৃষ্টি হয়। দেওয়ানহাট মোড় থেকে বাদামতল হয়ে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত সড়কের অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বিকাল তিনটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যানবাহনের লাইন পড়ে যায়। এসময়ে দফায় দফায় যানজট লেগে থাকে। মোড়ে মোড়ে লোকজনকে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। কয়েকশ লোক অপেক্ষা করলেও দীর্ঘক্ষণ পর পর গণপরিবহন আসতে দেখা যায়। এ কারণে অনেকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে গেছেন।
আগ্রাবাদ বাদামতল থেকে বড় পোল পর্যন্ত এক্সেস রোডের অবস্থা আরো শোচনীয়। একেতো সড়কের অবস্থা খারাপ তার উপর যানজটে যাত্রীদের অবস্থা আরো করুণ হয়ে পড়ে। এক থেকে দেড় ঘণ্টায়ও পার হতে পারেনি এ সড়ক। পোর্ট কানেক্টিং সড়কটির অবস্থা আরো ভয়াবহ। মাটি খুঁড়ে রাখার কারণে যান চলাচল করতেই পারছেনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিমান বন্দর সড়কটি ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়ে। প্রতিনিয়ত এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান ওই রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা। জিইসি মোড় থেকে শাহ আমানত বিমান বন্দরের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। স্বাভাবিক গতিতে যানবাহনের মাধ্যমে এ পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট। কিন্তু যানজটের কারণে গতকাল এই রাস্তা তিন থেকে চার ঘণ্টায়ও পাড়ি দিতে পারেনি অনেকে। দুপুরের পর বিমান বন্দর সড়কে যানজট আরো তীব্র হয়। বারেক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা, সিইপিজেড, বন্দরটিলা হয়ে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত এলাকাটি যানজটের কবলে পড়ে। শত শত যানবাহন রাস্তায় আটকা পড়ে। এ সড়কে যানবাহন চলাচল করছে খুবই ধীরগতিতে। বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা পার হতে দু’ঘণ্টা সময় লেগে গেছে। অনেকে বলছেন, এ সড়কে যানজট নিত্য ঘটনা। যানজটে অনেক যাত্রী ফ্লাইটও মিস করেন। তিন ঘণ্টা আগে রওয়ানা দিয়েও বিমান বন্দরে পৌঁছতে পারেন না।
সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, নগরীকে যানজটমুক্ত রাখতে ট্রাফিক বিভাগ দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে। রমজানকে সামনে রেখে তা আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে। মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক বক্স বসানো হয়েছে। কোথাও যাতে যানজট সৃষ্টি হতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, দিনের বেলায় নগরীতে অবাধে ট্রাক-লরি, কাভার্ডভ্যান চলাচলের কারণে মূল সড়কগুলোতে যানজট লেগে যাচ্ছে। সিএমপি দিনের বেলায় ট্রাক-লরি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিলেও তা মানা হচ্ছে না। দিনের বেলায় নগরে চলছে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি। বন্দরে বিভিন্ন রপ্তানিপণ্য আনা নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত এসব ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি চলাচল করলেও ট্রাফিক বিভাগ কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এ ব্যাপারে সিএমপি কমিশনার বলেন, দিনের বেলায় কোনভাবেই ট্রাক-লরি নগরীতে চলাচল করতে পারবে না। কেউ আইন লংঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা আছে। এ ব্যাপারে ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নাই।
ট্রাক-মিনি ট্রাক লরি মালিক গ্রুপের সভাপতি মো. আবদুল মান্নান বলেন, বিধি লংঘন করে দিনের বেলায় ট্রাক লরি না চালানোর জন্য বলা আছে। জরুরি কাজে হয়ত দু’একটা চলতে পারে তবে তা খুবই সীমিত আকারে।
সিএমপি’র নিয়ম অনুযায়ী, দিনের বেলায় নগরে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ভোর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি প্রবেশ করা যাবে না বলে আদেশ জারি করে সিএমপি। তবে বন্দরে আসা ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি এবং বিজিএমইএ’র টোকেনে চলা যানবাহনের জন্য নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে পুলিশ।