ধূমপায়ীদের কি করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি?

51

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কিছু দিক এখন ধীরে ধীরে বিজ্ঞানীদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যদিও এগুলোর প্রকৃত কারণ এখনো অজানা। এর একটি হলো : করোনাভাইরাসে যারা মারা গেছেন তার মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু এর কারণ কি ধূমপান?
চীনে এক জরিপে দেখা গেছে করোনাভাইরাস সংক্রমিত প্রতি একশ’ জন পুরুষদের মধ্যে মৃত্যু হয় ২ দশমিক ৮ জনের। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ জন আক্রান্তের মধ্যে মারা যাচ্ছেন ১ দশমিক ৭ শতাংশ – অর্থাৎ অনেকটা কম।
একই প্রবণতা দেখা গেছে ইতালিতেও । ইতালির স্বাস্থ্য গবেষণা এজেন্সি বলছে, কোভিড নাইনটিনে মৃতদের ৭০ শতাংশই পুরুষ। এ ব্যাপারে একটা তত্ত্ব দেয়া হচ্ছে যে এর পেছনে ধূমপান একটি বড় কারণ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যারা ধূমপান করেন তাদের কোভিড নাইনটিন সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি হবার সম্ভাবনা আছে। এর কারণ হিসেবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সিগারেট খাবার সময় হাতের আঙুলগুলো ঠোঁটের সংস্পর্শে আসে এবং এর ফলে হাতে (বা সিগারেটের গায়ে) লেগে থাকা ভাইরাস মুখে চলে যাবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
ধূমপায়ীদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার আগে থেকেই ফুসফুসের রোগ থাকতে পারে, অথবা ফুসফুসের কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে যা তার গুরুতর অসুস্থ হবার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।
যারা হুঁকো বা শিশায় ধূমপান করেন তারা অনেক সময় একাধিক লোক মিলে একটি হুঁকো বা নল ব্যবহার করেন- যার মাধ্যমে খুব সহজেই কোভিড নাইনটিন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তা ছাড়া যেসমস্ত অসুখে রোগীর শরীরে বেশি অক্সিজেন দরকার হয়, বা অক্সিজেন গ্রহণ করার ক্ষমতা কমে যায়- সেগুলো মানবদেহে নিউমোনিয়ার মতো গুরুতর ফুসফুসের রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
যুক্তরাজ্যে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক একটি দাতব্য সংস্থা অ্যাশের প্রধান নির্বাহী ডেবোরা আর্নট বলছেন, যারা ধূমপান করেন তাদের উচিত করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে ধূমপান কমিয়ে ফেলা কিম্বা পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া। ধূমপায়ীদের শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। তাদের নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যারা ধূমপান করেন না তাদের দ্বিগুণ।
তিনি বলেন, ধূমপান ছেড়ে দেওয়া নানা কারণেই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। করোনাভাইরাসের কথা মাথায় রেখেই তাদের উচিত ধূমপান ছেড়ে দেওয়া। এতে তার দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তবে ধূমপানই যে করোনাভাইরাসে পুরুষদের বেশি সংখ্যায় মৃত্যুর কারণ তা নির্দিষ্টভাবে বলা যায় না। এমন হতে পারে যে নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্ভবত পুরুষদের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর বলেই মহিলাদের এ ভাইরাসে মৃত্যু অপেক্ষাকৃত কম। কিন্তু এ নিয়ে গবেষণা সবেমাত্র শুরু হয়েছে।
কেউ করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হলে মোটামুটি দুসপ্তাহের মধ্যে তার জ্বর, শুকনো কাশি, মাংসপেশীর ব্যথা এবং শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। যাদের দেহে ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ দেখা গেছে – তাদের থেকে এ রোগ অন্যের দেহে ছড়াতে পারে। কিন্তু যাদের ক্ষেত্রে কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না – তারা ঠিক কিভাবে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে?
এমন অনেকে আছেন যারা প্রাপ্তবয়স্ক এবং করোনাভাইরাস বহন করছেন – কিন্তু তারা তা বুঝতে পারেন না, জানতেও পারেন না যে তাদের সংস্পর্শে এসে অন্যরা সংক্রমিত হচ্ছেন। শিশুরাও করোনাভাইরাস বহন করতে পারে এবং প্রায়ই তাদের দেহে কোন লক্ষণ দেখা যায় না। হয়তো তারাও করোনাভাইরাস ছড়ানোয় একটা ভূমিকা রাখছে – কিন্তু বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত নন।