ধানের শীষে ভোট দিয়ে আমার ছেলেকে মুক্ত করুন

34

ধানের শীষে ভোট দিয়ে চট্টগ্রাম-৯ আসনের বিএনপির প্রার্থী কারাবন্দী ডা. শাহাদাত হোসেনকে মুক্ত করার আহবান জানালেন তার মা শায়স্তা খানম। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় মেহেদীবাগস্থ ডা. শাহাদাতের বাসায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হয়রানির অভিযোগ এনে শায়েস্তা খানম বলেন, শাহাদাতের জন্য কে ভোট চাইবে? সবাইকে তো পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে। শুধু আমিই আছি। তাকে ধানের শীষে ভোট দিন আর গণতন্ত্র মুক্ত করে নিজের অধিকার ফিরিয়ে নিন।
তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, ধানের শীষে ভোট দিয়ে আপনারা আমার ছেলেকে মুক্ত করার সুযোগ দিন। ওরা আমার ছেলেকে অনেক নির্যাতন করছে। ওরা আমাদের ঘরে থাকতে দিচ্ছে না, বেরও হতে দিচ্ছে না। ধানের শীষে ভোট দিয়ে আমার ছেলেকে মুক্ত করুন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেনের নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান সমন্বয়কারী এডভোকেট বদরুল আনোয়ার বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রæতি দিলে দেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছিলো এবং অংশগ্রহণ করেছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আমরা মনে করেছিলাম সিইসি নুরুর হুদার অধীনে একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে চট্টগ্রাম-৯ আসনের প্রার্থী মহানগর বিএনপির সভাপতি কারাবন্দী ডা. শাহাদাত হোসেনও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনে চূড়ান্ত মনোনয়নপত্র পাওয়ার পর আমরা যখন প্রচারণায় নামি তখন প্রতি পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে থাকি।
তিনি বলেন, শত প্রতিকূলতার মাঝেও রাতে পোস্টার টাঙালে সকালে এগুলো দেখা যায় না। এগুলো ছিড়ে ফেলে ‘আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী’। ১৩ ডিসেম্বর আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম-৯ আসনে বড় ধরনের প্রচারণা ও গণসংযোগ শুরু করলে মাইকিং কর্মীকে মারধর করে। গত ১৩ ডিসেম্বর মাইকিং এর সময় পূর্ব বাকলিয়ায় যুবদল নেতা ইকবালকে ছুরিকাঘাত করে এবং মাইকের সরঞ্জাম লুট করে। এছাড়াও দেওয়ানবাজারে সমস্ত পোস্টার ছিড়ে ফেলে ও জ্বালিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। নগর যুবদল নেতা শাহেদ বক্স, সোনা মানিক, আমিনুল ইসলাম সাজু, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবদুল আওয়াল, শ্রমিকদল নেতা মহিউদ্দীন রণি, ছাত্রদলের সাজু, মুন্নাসহ কয়েক জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
কোতোয়ালী আসন থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ১৪ ডিসেম্বর বাকলিয়ায় মাইকিং করার সময় ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীরা’ চাক্তাই আমিন হাজী রোড়ে বিকাল ৫টার সময় মাইকিং ম্যান জামাল ও ইব্রাহীমকে ব্যাপক মারধর করে তাদের মোবাইল টাকা ও মাইকের সরঞ্জামাদি লুট করে। উভয় ঘটনায় চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর আমরা অভিযোগ দাখিল করেছি। এছাড়া এদিন দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মো. কাইয়ুম, মহসিন কলেজ ছাত্রদল কর্মী রায়হান ও ফরিদকে গ্রেপ্তার করে। ১৫ ডিসেম্বর চকবাজার এলাকায় গণসংযোগকালে ১৬নং ওয়ার্ড নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ও নগর বিএনপির সহ-সভাপতি সবুক্তিগীন মক্কীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আমাদের প্রার্থী কারাগারে রয়েছে তা সত্ত্বেও পুলিশ ১৬ ডিসেম্বর রাতে তার বাসায় তল্লাশির নামে তান্ডব চালায়। এছাড়াও ১৭ ডিসেম্বর পূর্ব বাকলিয়ায় ১ হাজারের অধিক পোস্টার ছিড়ে ফেলে ঐ এলাকার সন্ত্রাসীরা। মির্জাপুর এলাকা থেকে মো. ইসমাইল, দুলাল দাস, ১৭নং ওয়ার্ড থেকে আবদুল কাদির, চকবাজার থেকে আবু আহমেদ, ১৮ নং ওয়ার্ড থেকে জহিরুল ইসলাম, ২১নং ওয়ার্ড থেকে আশরাফুজ্জামান স্বপনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৮ ডিসেম্বর পুলিশ কর্তৃক বিভিন্ন নেতাকর্মীর বাসায় তল্লাশি, গ্রেপ্তার এবং বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার ছিড়ে ফেলা হয়। ২২ ডিসেম্বর পূর্ব বাকলিয়ায় নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থেকে নগর বিএনপি নেতা হাশেমকে (সওদাগর) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এছাড়াও নুরুউদ্দীন নুরু, ফারুক হোসেন বাবু, ইসহাক ও কুতুব উদ্দীনকে কাজীর দেউড়ি থেকে, শফিক আহমদ ও মহিউদ্দীনকে পূর্ব বাকলিয়া থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ২৪ ডিসেম্বর পূর্ব বাকলিয়া বিএনপি নেতা বেলালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২৫ ডিসেম্বর ওয়ার্ড মহিলা কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মনির নেতৃত্বে হাউজ ক্যাম্পেইন করার সময় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করে। এতে ২০/২৫ জন মহিলা দল কর্মী আহত হন। যা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে সরাসরি অবহিত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডা. শাহাদাতের নির্বাচন প্রচারণা সমন্বয়কারী একরামুল করিম, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাজিম উদ্দিন, বিএনপি নেতা ওহাব কাতেবী, এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।