ধসে পড়েছে একযুগ আগে ঝুঁকিতে চলছে যানবাহন

57

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের শিকলঘাট সেতু। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্মিত এ সেতু দিয়েই এক সময় চলাচল করতো চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সকল ধরনের যানবাহন। প্রায় এক যুগ আগে ধসে পড়া এ সেতু সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে চরমঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন।
তবে মহাসড়ক অন্যত্র সরিয়ে ফেলায় এ সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের চাপ কমলেও লক্ষ্যারচর এবং কৈয়ারবিল ইউনিয়নের সব আভ্যন্তরীণ যানবাহন এখনও চলছে এ সেতুদিয়ে।
দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি সংস্কার বিহীন অবস্থায় পড়ে থাকায় বর্তমানে সেতুর নাট-বল্টু খুলে পড়ছে। নড়বড়ে হয়ে পড়েছে সেতুর রেলিং ও পাটাতন। যে কোন যানবাহন সেতুতে হেলে-দুলে উঠে। সেতুর পুরো অংশজুড়ে বড় বড় গর্ত এবং অনেক সময় সেতুর ওপরই যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে যানবাহন। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রী ও চালকদের।
কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের চকরিয়া উপ-বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের শিকলঘাট স্টেশন এলাকায় বইশ্যারছড়ার খালের উপর এক সময় পাকা সেতু ছিল। কিন্তু ২৫ বছর আগের সেতুটি প্রায় ১২ বছর আগে ধসে পড়লে পরবর্তীতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ওইস্থানে ৬০ ফুট দীর্ঘ একটি বেইলি সেতু নির্মাণ করে। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে সেতুটি বর্তমানে নড়বড়ে হয়ে যানবাহন চলাচলে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কোন যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন সেতুর উপর উঠলেই হেলেদুলে পড়ছে সেতুটি। তারপরও চরম ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে যানবাহন। সেতুর উপর পাটাতনের ফুটো সারাতে ওপরে দেওয়া হয়েছে পিচ ঢালাই। আবার সেতুর এক পাশে পিচ ঢালাই উঠে গিয়ে উচুঁ-নিচু হয়ে পড়েছে সেতুটি। এছাড়া পিচঢালাই অংশে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্তের। এমন বেহাল অবস্থার মধ্যে চরম ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে বিভিন্ন যানবাহন। তবে ভারী যানবাহন চলাচল কমেছে।
স্থানীয় সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক আবুল ফজল জানায়, চকরিয়া উপজেলা সদরে যেতে লক্ষ্যারচর ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৬০ হাজার জনসাধারণ সেতুটি ব্যবহার করেন। গাড়ি নিয়ে সেতুতে উঠলে বুক কেঁপে উঠে, কখন ধসে পড়বে এ আশঙ্কায়। বর্ষা মৌসুমে সেতুর মাঝখানে গর্তের মধ্যে পানি জমে থাকলে ঝুঁকির পরিমাণ আরও বেড়ে যায়।
স্থানীয় লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম সেলিম বলেন, প্রায় এক যুগ ধরে শিকলঘাট সেতুটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে সেতু পার হচ্ছে অনেক গাড়ি। এটি যে কোন মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে।
লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কাইছার বলেন, কক্সবাজার ১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাংসদ জাফর আলম সম্প্রতি সেতুটি পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সড়ক বিভাগকে কয়েকবার লিখিত আবেদন করে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটির বিষয়ে জানানো হয়েছে। তারপরও কেন একটি নতুন সেতু নির্মিত হচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের চকরিয়া উপ-বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আবু এহেছান মুহাম্মদ আজিজুল মোস্তফা বলেন, শিকলঘাট সেতুটি পুরনো হওয়ায় এটি সংস্কার করেও ঝুঁকিমুক্ত করা যাচ্ছে না। সেতুটি নির্মাণে কয়েকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাংসদ ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম বলেন, শিকলঘাট সেতুটি নিয়ে সড়ক বিভাগের কাছে চাহিদাপত্র পাঠানো হবে। গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে আছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সেতু যাতে নির্মাণ হয়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।