দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রশাসনের অভিযান

109

সরবারহ কমে যাওয়ার আশষ্কায় বান্দরবানে নিত্যপণ্য কেনার হিড়িক পড়েছে। আর এই সুযোগে প্রায় প্রতিটা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নজরদারি আরো বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। করোনা আতঙ্কে অস্থির বান্দরবানের নিত্যপণ্যের বাজার। গত কয়েকদিনে চাহিদা বেড়েছ কয়েকগুণ, দাম বেড়েছে প্রতিটা পণ্যের। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পণ্য কিনছে অনেকেই। দেশের অনেক এলাকার মত বান্দরবানে প্রতি বস্তা চালের দাম বেড়েছে (১শ থেকে ২শ টাকা)। শুধু চালই নয়, নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। বাজারে কয়েকদিন আগে যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫-৪০ টাকা এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়। আলু, আদা, রসুনের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫-১০ টাকা। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষেরা।
বাজার করতে আসা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বান্দরবান বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এখন বাজারে পেঁয়াজ ও চালের দাম সবচাইতে বেশি। বাজার করতে আসা রোজি আক্তার ও উত্তম দাশ বলেন, প্রশাসনের জোর তদারকি করা দরকার এই মুহূর্তে। কেননা, বান্দরবান বাজারে এক দোকানে পেঁয়াজ ৭০ টাকা আরেক দোকানে ৮০ টাকা। চালের দোকানে প্রতি বস্তা চাল ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা বেশি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে অতিরিক্ত চাপের কারণেই দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতি, আবার অনেকে দাম বাড়ার গুজবের কারণে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত মালামাল মজুদ করে রাখছেন।
বান্দরবান বাজারের বিসমিল্লাহ স্টোরের মালিক জানান, বান্দরবানে হঠাৎ করে দ্রব্যের মূল্য বেড়েছে, তবে আমাদের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। তিনি আরো বলেন, ক্রেতারা হঠাৎ করে বান্দরবানে বিভিন্ন দ্রব্য বেশি কেনা শুরু করে দিয়েছেন। আর এতে সরবরাহ কমে যাচ্ছে এবং দাম ঊর্ধ্বগতি দেখা দিচ্ছে। বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে গতকাল শনিবার সকালে বান্দরবান বাজারের বিভিন্ন দোকান ঘুরে ঘুরে দ্রব্যমূল্যের দাম যাচাই এবং ব্যবসায়ীদের বেশি দামে পণ্য বিক্রি না করতে নিষেধ করছেন বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা ও মুদি ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ।
মনিটরিং কর্মকর্তা ও মুদি ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ বলছেন, বাজারে কোন জিনিসের সংকট নেই। তারপরও ক্রেতারা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি জিনিসপত্র কেনায় বাড়ছে দাম। তারা আরো জানান, কেউ যাতে ভোক্তাদের ঠকাতে না পারে আর মালামাল মজুদ করে বেশি মুনাফা নিতে না পারে তার জন্য প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অতিরিক্ত মুনাফালোভীদের শাস্তি দেওয়া হবে।
বাজার মুদি দোকান ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি দাশ বলেন, আমরা সবসময় বান্দরবান বাজারের দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি, যাতে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তিনি আরো বলেন, কেউ যাতে ভোক্তাদের ঠকাতে না পারে আর মালামাল মজুদ করে বেশি মুনাফা নিতে না পারে তার জন্য আমাদের সমিতির পাশাপাশি প্রশাসনের আরো নজরদারি বাড়ানো দরকার।
জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা বিজয় ধর জানান, আমরা সবসময় বাজারের অবস্থা মনিটরিং করি। তারপরেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দাম ঠিক রাখে না, মূল্যতালিকা প্রকাশ করতে চায় না আর এতে ভোক্তাদের প্রতারিত হতে হচ্ছে। তবে আমরা অসাধু ব্যবসায়ীদের কোন ছাড় দেব না। দ্রব্যমূল্য বেশি নিলে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান করবো।
অপরদিকে বান্দরবান বাজারে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়। গতকাল শনিবার দুপুরে বান্দরবান বাজারের বিভিন্ন মুদি দোকান, চালের দোকান ও বিভিন্ন দোকানে এই অভিযান পরিচালনা করে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এম ইবনে মিজান। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানকে দ্রব্যমূল্য বাড়তি নেয়া ও মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার বিক্রির অভিযোগে ২টি দোকানকে ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বেশি দামে পণ্য বিক্রি না করার জন্য নির্দেশনাও প্রদান করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এম ইবনে মিজান, জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা বিজয় ধর, বান্দরবান বাজার মুদি দোকান ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি দাশসহ পুলিশ সদস্য এবং বাজার মুদি দোকান ব্যবসায়ী
নাজিরহাট : করোনাভাইরাসের প্রভাবে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে নাজিরহাট বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেছে ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসন। গত শুক্রবার রাত ৯টায় এ অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সায়েদুল আরেফিন। এসময় উচ্চমূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রির অপরাধে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে ভোক্তা অধিকার আইনে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানাকৃত ব্যবসায়ীরা হলেন নাজিরহাট পৌরসভার শফিউল আলমের পুত্র শাহাবুদ্দিন দুলাল, লতু মিয়ার পুত্র কাজী মো. জানে আলম, নুরুল আলমের পুত্র মো. এরশাদুল আলম চৌধুরী, রবীন্দ্র কুমার শীলের পুত্র ভজন কান্তি শীল।
অভিযানে বাজারের অন্য ব্যবসায়ীদের সঠিক মূল্য রাখার জন্য সতর্ক করেন এবং এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার সায়েদুল আরেফিন। অভিযানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জানে আলম, ফটিকছড়ি থানার এসআই মান্নান, বাজার সমিতির নেতৃবৃন্দ, পুলিশ ফোর্স মোবাইল কোর্টকে সহযোগিতা করেন।
চকরিয়া : চকরিয়ায় বিভিন্ন ইউনিয়নে ভোগ্যপণ্যের দোকানে পৃথক অভিযান চালিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রি ও মজুদের দায়ে ২৬ জনের কাছ থেকে ৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুরুদ্দীন মো. শিবলী নোমান এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর হোসেন গতকাল শনিবার সকাল ১০টা থেকে একটানা সন্ধ্যা পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করেন।
এ সময় তারা উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের বানিয়াছড়া স্টেশন, খুটাখালী বাজার, ডুলাহাজারা বাজার, বদরখালী বাজার ও চকরিয়া পৌর সদরের ২৬টি ভোগ্য পণ্যের দোকানে অভিযান চালিয়ে অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রি ও মজুদের দায়ে ২৬জন দোকানদারের কাছ থেকে ৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
পৃথক অভিযানের সময় পুলিশ, আনসার সদস্য ও উপজেলা প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, করোনাকে পুঁজি করে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন বাজারে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত দামে ভোগ্যপণ্য বিক্রির অভিযোগ পেয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ও নিয়মিত বাজার মনিটরিং কর্মসূচির আওতায় শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের পৃথক অভিযান চালানো হয়। এ সময় পৌর এলাকার তিনটি ভোগ্য পণ্যের দোকানে অভিযান চালিয়ে তিন দোকান মালিকের কাছ থেকে ১৮ হাজার টাকা, বানিয়ারছড়া স্টেশনের এক মিল মালিক ও দুই মুদির দোকানদারের কাছ থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও বদরখালী বাজারের ৫টি ভোগ্যপণ্যের দোকানে অভিযান চালিয়ে ৭৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
অপরদিকে শনিবার সকাল ১০টা থেকে একটানা সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলা খুটাখালী ও ডুলাহাজারা বাজারের ১৫টি ভোগ্যপণ্যের দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তানভীর হোসেন। এ সময় অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রি ও মজুদের দায়ে ১৫জন দোকানদারের কাছ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ও নিয়মিত বাজার মনিটরিং কর্মসূচির আওতায় এসব অভিযান চালানো হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চালের আড়তদার, মিল মালিক ও মুদির দোকানদারদের কাছে প্রায় ৪০০ মে. টন চাল মজুদ রয়েছে। ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা যাতে এসব চাল অতিরিক্ত দামে গ্রাহকদের নিকট বিক্রি করতে না পারেন সে ব্যাপারে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে ট্যাক অফিসার হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের গুদামে মজুদকৃত এসব চাল প্রতিদিন নির্ধারিত মূল্যে বিক্রির পর সন্ধ্যায় উপজেলা প্রশাসনের কাছে মজুদের স্টকসহ জানানোর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

উখিয়ায় : উখিয়া উপজেলার প্রশাসন বিভিন্ন হাট বাজারে পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেছে। গতকাল শনিবার বিকালে এ অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)।
এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী মরিচ্যা ও সোনারপাড়া বাজারে ৪টি মুদির দোকানে অভিযান চালিয়ে অতিরিক্ত দাম, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য রাখার দায়ে ৬৫ টাকা, পরিবেশ আইন অমান্য করে পাহাড় কেটে মাটি পাচারকালে মাটি ভর্তি একটি ডাম্পার গাড়িকে আটক করে ১ লাখ টাকা এবং বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ আইনে একজনকে ১০হাজার টাকাসহ ১লাখ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
ইউএনও অভিযান পরিচালনাকালে বিভিন্ন হোটেল, মুদির দোকানসহ মালামাল ক্রয়-বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে বলেন, যতদিন নির্ধারিত দামে মালামাল বিক্রি, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ক্রেতাদের হয়রানি বন্ধ হবে না ততদিন এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
একই সময়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিমুল এহসান খান উখিয়া বিভিন্ন হাটবাজারে অভিযান চালিয়ে ১২ টি কাঁচা তরকারি ও মুদির দোকান মালিককে অতিরিক্ত দাম নেওয়ার অপরাধে ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে প্রত্যকে ১৫ দিনের কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, অভিযানে উপজেলার থাইংখালী বাজারে ৪ দোকানে ৫৫ হাজার, পালংখালী বাজারে ২ দোকানে ৭০ হাজার, মরিচ্যা বাজারে ৫ দোকানে ১লাখ ১৫ হাজার এবং কোটবাজার ১ দোকানে ২০ হাজার টাকা সহ মোট ২লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
তিনি জানান, দেশে করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে। তাই অনেকে তাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করে রাখতেছে। এ সুবাধে অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্যের দাম বেশি নিচ্ছে। যারা দাম বেশি নিচ্ছে তাদেরকে জরিমানা করা হয়েছে। হাটবাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে অভিযান অব্যহত থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।