দ্বিতীয় দফায় আক্রান্ত হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রধানমন্ত্রীর আগাম প্রস্তুতির নির্দেশনা আশাব্যঞ্জক

19

২০১৯ সালের শেষে চীনের ওহান রাজ্য থেকে উস্থিত করোনা ভাইরাসের আকস্মিক প্রথম ধাক্কায় অনেকটা পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে বিশ্ব। মানবিক ও আর্থিক বিপর্যয় যা হয়েছে; তা কেটে উঠতে বহু সময়ের প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। নানা সীমাবদ্ধতা ও বিশৃঙ্খলার মধ্যেই আপাতত এ ভাইরাসকে মোকাবেলা করা গেলেও বিশ্বব্যাপী সাড়ে আট লাখের উপর প্রাণ সংহার ঘটেছে এ ভাইরাসে, আক্রান্তের সংখ্যাও আড়াই কোটির উপরে। প্রথম ধাক্কা সামলে চীন ও ইউরোপিয়ান অনেক দেশ মেরুদÐ সোজা করে দাঁড়ানোর চেষ্টার মধ্যেই দুঃসংবাদ হলো করোনার দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের। এর মধ্যে চীন, ইতালী, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানী, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে নতুনভাবে সংক্রমণ শুরুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। এশিয়ায় ভারতের অবস্থা খুবই নাজুক বলা যায়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, সংক্রমণ বাড়ায় এরই মধ্যে নতুন করে স্কুল-কলেজ বন্ধ করার নির্দেশ জারি করেছে দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মান ও ফ্রান্স। সংক্রমণ কমাতে ইতালি ও স্পেনেও আবার কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। সেখানে বড় মাপের জমায়েত এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসন। জার্মানিও ফের কঠোর পদক্ষেপের কথা ভাবছে। সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় মিয়ানমারেও স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। খবরে বলা হচ্ছে, স¤প্রতি করোনা থেকে সেরে ওঠা এক করোনাজয়ীর আবার করোনা আক্রান্তের খবর দিয়েছেন হংকংয়ের গবেষকরা। এ খবরটি এত বেশি উদ্বেগের যে, গবেষকদের মতে, নতুন করে আক্রান্ত ব্যক্তির ভাইরাসের চরিত্র আগেরবার আক্রান্ত হওয়া ভাইরাসের থেকে আলাদা। এর ফলে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। বাংলাদেশেও এ আবাস পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশেও এমনটি সংক্রমণের আবাস মিলছে। এছাড়া সামনে বাংলাদেশে আসছে শীতের মৌসুম। এসময় সর্দি, কাশি, জ্বর ও অ্যাজমা রোগ বৃদ্ধি পায়। ধারণা করা হচ্ছে, এসময় করেনা ভাইরাস আবার সংক্রমণ হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এমনটি আশঙ্কা পোষণ করে দ্বিতীয়বার এ ভাইরাস যাতে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে না পারে, সেই জন্য সংশ্লিষ্টদের ব্যাপক সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ আহবানের পর স্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় কারিগারি পরামর্শক কমিটি মনে করছে, বাংলাদেশে জনসাধারণের মধ্যে শৈথিল্য আসার কারণে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় সংক্রমণ বা সেকেন্ড ওয়েভ আসতে পারে। এটা মোকাবেলার জন্য রোডম্যাপ তৈরি ও পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে হবে। গণমাধ্যমে প্রেরিত কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী ভারত বিভিন্ন দেশে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। বৈদেশিক যোগাযোগ উন্মুক্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে জনসাধারণের মধ্যে এক ধরনের শৈথিল্য দেখা যাচ্ছে। এসব কারণে বাংলাদেশেও পুনরায় সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ প্রতিরোধের পাশাপাশি, সংক্রমণ হলে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে পরামর্শক কমিটি। এছাড়া দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ দ্রুত নির্ণয় করার জন্যও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। যেহেতু জীবিকার স্বার্থে লকডাউন সম্ভব নয়, তাই একটি কার্যকর টিকা না পাওয়া পর্যন্ত নিরাপদ থাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করা, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাই কোভিড-১৯ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় বলে মন্তব্য করেছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের এই কমিটি। এ ছাড়া আরো বেশি করে টেস্ট করাসহ জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় এক্স-রে, রক্তের কিছু পরীক্ষার সম্প্রসারণ করা জরুরি বলে মত দিয়েছে। কমিটি বলছে, কোভিড-১৯ এর নমুনা পরীক্ষার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। সংক্রমিত ব্যক্তিকে দ্রুত চিহ্নিত করে আইসোলেট করতে হবে। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং, কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করাসহ প্রবেশ পয়েন্টে প্রতিরোধ কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে। হাসপাতালে যে স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন, তাদের এবং পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করারও পরামর্শ দিয়েছেন কমিটি। সেই সঙ্গে রোগীদের তথ্য বিনিময় করার জন্য আন্তঃহাসপাতাল রেফারেল নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্যও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কমিটি মনে করে, বর্তমানে সংক্রমণের হার নিম্নমুখী হলেও এখনো হার স্বস্তিকর পর্যায়ে যায়নি, তাই হাসপাতালে কোভিড-১৯ শয্যা সংকোচন করা হলেও পুরোপুরি বন্ধ না করে ভবিষ্যতে যাতে পুনরায় ব্যবহার করা যায়, সেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর আগাম শতর্কবার্তা ও নির্দেশনা একইসাথে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি যে প্রস্তাবনাগুলো দিয়েছেন-তা যথার্থ এবং গঠনমূলক বলে মনে করি। এগুলো আমাদের আশাবাদী করবে। এ প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নে আন্তরিক উদ্যোগ নিলে দ্বিতীয় দফা করোনা সংক্রমণের ব্যাপক ক্ষতি থেকে দেশ ও জাতি রক্ষা পাবে নিঃসন্দেহে।