দোহাজারী-ঘুমধুম রেলপথ বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকগুলো সরাতে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

119

বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম দোহাজারী-ঘুমধুম রেলপথ প্রকল্পটি। এ সরকার প্রথম দফায় ক্ষমতা গ্রহণের এক বছরের মাথায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন এবং বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। ২০১৪ সালে গৃহীত প্রকল্পে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দে ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ মিটারগেজের পরিবর্তে ডুয়েল মিটারগেজে উন্নীত করা হয়েছে। এতে ব্যয় বরাদ্দ বাড়িয়ে ১০ হাজার কোটি টাকাতে উন্নীত করা হয়েছে। কাক্সিক্ষত এ রেলপথ নির্মাণ হলে পর্যটন জেলা হিসেবে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে যাবে। এছাড়া রেলপথে বছরে প্রায় ৫ লাখ পর্যটক কক্সবাজার সফর করতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকার ১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতাসীন হয় তখন মেয়াদের শেষে ২০০০ সালে দোহাজারী-কক্সবাজার ভায়া রামু ও ঘুমধুম পর্যন্ত দীর্ঘ ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু পরবর্তী সরকার এ প্রকল্প আর বাস্তবায়নে আর কোন আগ্রহ দেখায়নি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে আবার ক্ষমতায় এসে প্রকল্পটি পুনরুজ্জীবিত করে। ২০১২ সালে নভেম্বর থেকে ২০১৩ সালের পুরো বছর এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রকল্পের আওতায় নতুনভাবে প্রস্তাবিত রেলপথের ডিজাইনসহ আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। সে সময়ে একাধারে প্রায় দেড় বছর ফিজিবিলিটি স্ট্যাডির পাশাপাশি প্রস্তাবিত রেললাইনের নতুন ডিজাইন অবকাঠামো তৈরি করে ২০১৪ সালের শেষ নাগাদে প্রকল্পের দরপত্র আহব্বান করা হয়। কিন্তু প্রকল্পের বর্তমান অর্থায়ন ও মিটারগেজের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ডুয়েল মিটারগেজে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এ প্রকল্পের কালক্ষেপণ ও ব্যয়বৃদ্ধি আরো বেড়ে যায়।
এ প্রকল্পের নতুন সমীক্ষা অনুযায়ী স্কুল, মসজিদ ও কবরস্থানের অবস্থান ঠিক রেখে রেলপথের কিছুটা দিক পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে জমি অধিগ্রহণ ব্যয় আগের চেয়ে বেড়ে ৩ হাজার ৫শ’ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধনও করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ডুয়েল গেজ রেলপথে রূপান্তর প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করতে ২০১৭ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলে ভুমি অধিগ্রহণসহ কয়েকটি বড় সেতু, কালভার্ট নির্মাণসহ নানা জটিলতায় পড়ে এ প্রকল্প শেষ করতে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময় বর্ধিত করা হয়েছে। কিন্তু এরমধ্যে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের অধিনে থাকা বনভূমি, জমি ও স্থাপনা অধিগ্রহণ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না দেয়ায় এ প্রকল্পের কাজে বড় ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। মঙ্গলবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দোহাজারী-ঘুনধুম রেল লাইন প্রকল্পের দুই অংশের মধ্যে দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত নির্বিঘেœ কাজ চললেও কক্সবাজার-ঘুনধুম অংশে কক্সবাজার জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ এবং কৃষি বিভাগের একুশ একর জমি এখনো পর্যন্ত প্রকল্প রেল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। এছাড়া, চুনতি বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের অভয়ারণ্যের বনভূমির উপর রেল লাইন নির্মাণের ছাড়পত্র না পাওয়া এবং রামু-ঘুনধুমের মাঝখানে ক্যান্টনম্যান্ট পড়ায় এ এলাকায় রেল লাইনের গতি কোন দিকে হবে তা এখনও ঠিক না হওয়ার কারণে কাজের গতি ¯øথ হয়ে এসেছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার- ঘুনধুম এলাকার কাজ উরোক্ত সমস্যার কারণে এখনো শুরু করা হয় নি, তবে দোহাজারী-কক্সবাজারের রেল লাইনের কাজ দ্রুত করা হচ্ছে। প্রকল্প পরিচালক সূত্রে জানা যায়, সমস্যা যায় থাক, ২০২২ সালে কাজ শেষ করতে হলে এবছর কাজের অগ্রগতি দৃশ্যমান হতে হবে। তাদের ভাষায় এখন ২৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ ও প্রকল্প পরিচালক সূত্রে জানায়, ভুমি জটিলতা ও অন্যান্য যে সমস্যা তা যেহেতু সরকারের অধিনস্থ দফতর তাতে বেশি সমস্যা হবে না। আমরা মনে করি, প্রকল্পটি যেহেতু সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় বৃহৎ মেগা প্রকল্প সেহেতু এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কোনভাবেই কাম্য নয়।