দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্পে ৪ চ্যালেঞ্জ

75

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজের অগ্রগতিতে এখনো চারটি চ্যালেঞ্জ আছে। আর এই চার চ্যালেঞ্জের কারণেই প্রকল্পের কাজ শ্লথ হয়ে আছে। তবে চ্যালেঞ্জ থাকা এলাকা বাদ দিয়ে বাকি এলাকায় পুরোদমে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২২ সাল নাগাদ প্রকল্প শেষ করতে কাজের বড় ধরনের অগ্রগতি এ বছরেই দেখাতে চান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তবে আপাতত দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও রামু জংশন থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত প্রকল্প কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পটি ১৮ হাজার ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করছে রেলওয়ে।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মো. মফিজুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ২৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও আপাতত রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত কাজ ধরছি না। রামু-ঘুমধুমের মাঝখানে ক্যান্টনমেন্ট পড়ার কারণে এখনো রেললাইন কোনদিকে যাবে তা নিশ্চিত করতে পারছি না। এছাড়াও চুনতি অভয়ারণ্যের বনভূমির উপর কাজ করার ছাড়পত্র পাওয়া যায়নি। যে কারণে ঠিকাদার সেখানে কাজ ধরতে পারছে না। সবমিলিয়ে প্রকল্পের কয়েকটি চ্যালেঞ্জ আমরা চিহ্নিত করে দ্রæত তা সমাধানের চেষ্টা করছি।’
রেলওয়ে সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অংশের জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। দুই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেলওয়েকে এক হাজার দুই একর জমি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ প্রদানের ক্ষেত্রে মামলাজনিত সমস্যা রয়ে গেছে। যা দ্রæত সময়ের মধ্যে নিরসন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কক্সবাজার জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ এবং কৃষি বিভাগের ২১ একর জমি এখনো হস্তান্তর করা হয়নি। প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার জেলার ১৬৫ একর এবং চট্টগ্রাম জেলার ৪২ একর বনভূমি ডি-রিজার্ভকরণ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গাছ কাটার অনুমতি পাওয়া যায়নি। কক্সবাজারের ভারুয়াখালী আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমির ক্ষতিপূরণ সমস্যার সমাধান করতে হবে। এসব সমস্যা যত দ্রæত সমাধান করা যাবে তত প্রকল্পের কাজে অগ্রগতি বাড়বে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, ‘বনভূমি ব্যবহার ও ডি-রিজার্ভের লক্ষ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় হতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বর মাসেও ডি-রিজার্ভের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের চাহিদা মাফিক তথ্যাদি পুনরায় প্রেরণ করা হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় থেকে কোনোরূপ সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। সিদ্ধান্ত পেলেই এসব এলাকায় কাজ শুরু করবে ঠিকাদার।’
জানা যায়, দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত প্রকল্পটি দুটি লটে বিভক্ত করে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এরমধ্যে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত লট-১ ও চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত লট-২। এ প্রকল্পে রামুতে হবে মূল জংশন। দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কি.মি. রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কি.মি. এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কি.মি রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে। ১২৮ কি.মি রেলপথে স্টেশনের সংখ্যা থাকছে ৯টি। এগুলো হলো- সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়ার সাহারবিলের রামপুর, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার, উখিয়া ও ঘুমধুম।
এতে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম থাকবে ৯টি, ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম থাকবে ৯টি। সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হবে রেলসতু। এ ছাড়া ৪৩টি মাইনর সেতু, ২০১টি কালভার্ট, সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় একটি ফ্লাইওভার, ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং এবং রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পর্যটন শহর কক্সবাজারের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক যেমন বাড়বে তেমনি আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিল্ক রুট (চীন-মিয়ানমার-বাংলাদেশ) ও ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে বিদ্যমান রেলপথটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন হবে।