দোলাচলে এবার শীতের ভাগ্য!

36

বর্ষার ঋতুর মত এবার শীতও যেন শুরুতেই লুকোচুরি খেলছে। রেকর্ড দেরিতে মৌসুমি বায়ুর বিদায়ের পর প্রকৃতিতে হানা দেয় আন্দামান হয়ে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের ও নিম্নচাপের ঘনঘটা কাটিয়ে নবান্নের মাস অগ্রহায়ণের শুরুতে দেশের উত্তরাঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ ধীরে নামতে শুরু করলেও সপ্তাহান্তে এসে ফের চড়তে থাকে। ভারতীয় ভূখন্ড এবং সাগরে অবস্থিত মেঘের প্রবাহ দেশের আকাশে প্রবেশের কারণে পারদের নিম্নমুখী প্রবণতা বাধাপ্রাপ্ত হয়। দুদিনের ব্যবধানে পারদের পতন ঘটেছে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি। গতকাল সোমবার আবহাওয়া অধিদপ্তর হিমালয়ের সবচেয়ে নিকটবর্তী উত্তরের জনপদ রাজারহাটে মৌসুমের এ যাবত সর্বনিম্ন ১২ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এবার শীতের ভাগ্য দোলাচলে ফেলেছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার পানির উর্ধ্বমুখী তাপমাত্রা। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় পানির তাপমাত্রা বেশি থাকলে তা বঙ্গোপসাগরেও প্রভাব ফেলে এবং সাগরের তাপমাত্রা বেশি হলে তা বায়ুপ্রবাহকে প্রভাবিত করে। এসব কারণে শীতের দাপট এবার তুলনামূলকভাবে কম হতে পারে। তবে, চলতি ডিসেম্বরের মধ্য ও শেষভাগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এক বা একাধিক মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ গতকাল সোমবার পূর্বদেশকে বলেন, ‘চলতি মাসের মধ্য এবং শেষভাগে দেশে এক বা একাধিক মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে। সোমবার ঢাকাসহ সারা দেশের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। আগামী সপ্তাহে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। বিশেষ করে, বর্ধিত পাঁচদিনের আবহাওয়ার অবস্থায় রাতের তাপমাত্রা আরও হ্রাস পেতে পারে।’
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার জন্য প্রচারিত আবহাওয়া সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার এবং তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। গতকাল সোমবার দেশের সর্বোচ্চ ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকা কুতুবদিয়ায়।
এর আগে আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে জানানো হয়, নতুন বছরের জানুয়ারি (পৌষ-মাঘ) মাসে দেশের ওপর দিয়ে দুই থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি এবং দু’টি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। একইসাথে শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এবং নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি অথবা ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা কুয়াশা পড়তে পারে। কম সময়ের জন্য হলেও শীতের কামড় অনুভূত হবে জানুয়ারি মাসেই। এমনিতেই জানুয়ারি দেশের শীতলতম মাস। পূর্ববর্তী ৫০ বছরের ইতিহাসের পাতা পাল্টে দিয়ে বিগত ২০১৮ ও চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দেশের তাপমাত্রা রেকর্ড গড়ে চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছিল। ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি আবহাওয়া অধিদপ্তর পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে। এর আগে সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গলে সবচেয়ে কম দুই দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রূয়ারি। চলতি বছরের জানুয়ারিতেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছিল। এই মৌসুমেও সেরকম পরিস্থিতিরই আভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অফিস। তবে, এবারের শীত মৌসুমে তুলনামূলকভাবে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহের স্থায়িত্বকালই বেশি হতে পারে। যাতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ তিন ডিগ্রি সেলসিয়াসের কিছু কম-বেশি হতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন।
প্রসঙ্গত, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে মাঝারি এবং আট ডিগ্রির চেয়ে বেশি থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে হলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।