চলছে রমজান। আর দুই সপ্তাহ পর মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ। এরমধ্যে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ। ইতোমধ্যে দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি পোশাক শিল্পসহ বেশ কয়েকটি ইস্পাত শিল্প প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মানা সাপেক্ষে খুলে দেয়া হয়েছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার বা স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া শর্ত কতটুকু পালন করতে পারছে-তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট চালু রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন । গত সোমবার রংপুর বিভাগের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলার সময় এ ইঙ্গিত দেন তিনি। তবে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরায় খুব বেশি খোলামেলাভাবে মেশা বা এক জায়গায় জড়ো হওয়া বা খুব বড় জনসমাগম করা থেকে মুক্ত থাকার উপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা বজায় রেখে অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখার জন্য মন্ত্রিসভা বিভাগ থেকে শিগগিরই কিছু নির্দেশনা দেয়া হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বিকাল নাগাদ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আলোকে শর্ত সাপেক্ষে দোকানপাট ও শপিংমল খোলার বিষয়ে নির্দেশনা দিলেন মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব। পরপর স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ১০ মে দোকানপাট খোলার বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত জানানো হয়। তবে ঈদকে সামনে রেখে দোকানপাট ও শপিংমল খোলার যে শর্তগুলো দেয়া হয়েছে, তা আদৌ অনুসরণ করা হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা থেকে যায়। কারণ স্বাস্থ্য সুরক্ষাবান্ধব অনেকগুলো শর্ত দিয়ে গার্মেন্টস খুলে দেয়ার পর দেখা যায়, শর্তগুলো পালনের ক্ষেত্রে তেমন মনোযোগী ছিল না অধিকাংশ কর্তৃপক্ষ। ফলে দেশে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে অনেকে মনে করছেন। এ অবস্থায় দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্তে সেই ঝুঁকি আরো বাড়তে পারে। শপিংমলগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাকাটা সম্ভব হবে কিনা প্রশ্ন রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এমতাবস্থায় করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট চালু রাখার কারণে সড়কে মানুষের চলাচল বেড়ে যাবে। শেষ সময়ে এসে এমন সিদ্ধান্ত কেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। করোনা সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ মার্চ দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। তখন থেকে সরকারি ও বেসরকারি অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। মসজিদ, মন্দিরসহ প্রার্থনার স্থানগুলোও এক প্রকার বন্ধ। সরকারের নির্দেশনা মেনে নিয়ে একেবারে সীমিত আকারে কয়েকজনকে নিয়ে ওয়াক্ত, তারাবি ও জুমার নামাজ পড়ছেন মুসল্লিরা। গার্মেন্ট মালিকদের অনুরোধে লকডাউনের এক মাসের মাথায় গত ২৬ এপ্রিল খুলে দেয়া হয় তৈরি পোশাক কারখানাগুলো। আর গত সোমবার এলো আরো কিছু ঘোষণা। শর্ত মেনে আগামী ১০ মে থেকে সারাদেশে হাট-বাজার, ব্যবসা কেন্দ্র, দোকানপাট ও শপিংমলগুলো সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে সীমিত পরিসরে খোলা রাখা যাবে। সেই সঙ্গে প্রতিটি শপিংমলে প্রবেশের ক্ষেত্রে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ঘোষিত সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে। ঘোষণায় আরো বলা হয়, আসন্ন ঈদের ছুটিতে জনগণকে নিজ নিজ স্থানে থাকতে হবে এবং আন্তঃজেলা-উপজেলা বাড়িতে যাওয়ার ভ্রমণ থেকে নিবৃত্ত করতে হবে। এমতাবস্থায় শর্তাবলী পালনসাপেক্ষে অধীন অফিস/ অধিদপ্তর/ বাহিনী/ সংস্থাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে চিঠিতে অনুরোধ জানায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। দোকান-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ায় ব্যবসায়ীরা খুশি হয়েছেন এটাই স্বাভাবিক। সরকারের সিদ্ধান্তে মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে সরকারের দেয়া শর্ত বা নির্দেশনা মেনেই দোকান খোলা রাখতে হবে। কোনো ধরনের অনিয়ম করা যাবে না। সরকার যেমন দেশের জনগণের কথা চিন্তা করছে, ঠিক তেমনি ব্যবসায়ীদের ও তাদের গ্রাহকদের নিরাপদ জীবনের কথা ভেবে সরকারের নির্দেশনাও মেনে চলতে হবে। ব্যত্যয় হলে দোকানপাট বন্ধ রাখার বিকল্প আর কিছুই থাকবে না।