দেড় শতাধিক ইয়াবাকারবারী আত্মসমর্পণ করছে শনিবার

63

সরকারের দেওয়া সুযোগ নিয়ে কক্সবাজারের দেড় শতাধিক ইয়াবা কারবারী আত্মসমর্পণ করছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আগামী শনিবার সকাল ১০টায় টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তারা আত্মসমর্পণ করবে। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে গতকাল বুধবার সকাল থেকে টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মাইকিং করা হয়।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংসদ সদস্যবৃন্দ ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগের দিনই (শুক্রবার) কক্সবাজারে পৌঁছাবেন বলে জানা গেছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এ বি এম মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন এরই মধ্যে দেড় শতাধিক তালিকাভুক্ত ও চিহ্নিত ইয়াবা চোরাকারবারি আত্মসমর্পণের জন্য কক্সবাজারের বিশেষ একটি স্থানে নিজেদের উদ্যোগে নিরাপদ হেফাজতে জড়ো হয়েছেন। আরও অনেকে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আত্মসমর্পণকারীরা স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ পাবেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। তবে ঠিক কতজন আত্মসমর্পণের জন্য ‘নিরাপদ হেফাজতে’ এসেছেন এবং কী কী শর্তে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ দেওয়া হবে, ‘কৌশলগত কারণে’ তা প্রকাশ করতে রাজি হননি তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এর আগে বলেছিলেন, ইয়াবা কারবারিরা স্বাভাবিক জীবনে না এলে মামলা চলবে। আর স্বাভাবিক জীবনে এলে এদের মামলা আমরা দেখব। ইয়াবা পাচার করে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া ব্যক্তিরা আত্মসমর্পণ করলে তাদের অবৈধ সম্পদ বৈধতা পাবে কি না- সে প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে তিনি বলেছিলেন, সম্পদের বিষয় এটা দুদক বা এনবিআর দেখবে।
বাংলাদেশে বর্তমানে মাদকের মধ্যে ইয়াবা ট্যাবলেটের কথাই সবার আগে আসে। এই ইয়াবা আসে মূলত মিয়ানমার থেকে। ইয়াবা পাচার বন্ধে মিয়ানমার সরকারের সহায়তা চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না বলে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এর মধ্যেই গত বছর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মাদকবিরোধী অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের প্রশ্নবিদ্ধ অভিযানে কয়েকশ জন নিহত হলেও ইয়াবা কারবার বন্ধ করা যায়নি। এই অবস্থায় নতুন বছরের শুরুতে ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের সুযোগ নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়।
এর মধ্যে টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এনামুল হক গত ১৫ জানুয়ারি ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে প্রশাসনের কাছে আত্মসমর্পণের কথা জানালে বিষয়টি আলোচনার জন্ম দেয়।
কক্সবাজারের চিহ্নিত মাদক পাচারকারীদের একটি অংশ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণের আগ্রহ জানালে বিষয়টি আকার পেতে শুরু করে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসূচি তুলে ধরে এসপি মাসুদ বলেন, ১৫ ফেব্রæয়ারি সকালে বিমানে কক্সবাজার পৌঁছাবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ওইদিন বিকালে কক্সবাজারে জেলার ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। পরদিন সকালে তিনি টেকনাফে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যাবেন।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আগমনের সার্বিক প্রস্তুতির তদারকিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী আজ কক্সবাজার আসছেন বলেও জানান এসপি।
এসপি মাসুদ জানান, গত বছরের শেষ দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা সর্বশেষ তালিকায় ইয়াবা পাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত ১ হাজার ১৫১ জন কক্সবাজারের। তাদের মধ্যে শীর্ষ ইয়াবা চোরাকারবারি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ৭৩ জনকে।
শীর্ষ ইয়াবা চোরাকারবারিসহ তালিকায় থাকাদের বড় একটা অংশের বসবাস সীমান্তবর্তী টেকনাফ উপজেলায়। তাদের সবাই কমবেশি প্রভাবশালী, কেউ কেউ আবার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা বদির পাঁচ ভাই আব্দুর শুক্কুর, আব্দুল আমিন, মুজিবুর রহমান, মোহাম্মদ সফিক ও মোহাম্মদ ফয়সাল, ভাগ্নে সাহেদুর রহমান নিপু, বেয়াই শাহেদ কামাল ও ফুফাত ভাই কামরুল হাসান রাসেলের নামও ওই তালিকায় ছিল বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।
তবে বদি বরাবরই সেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তিনিও টেকনাফ-উখিয়ার ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণ করতে আহবান জানান।