দেশ ভালো না থাকলে কেউ ভালো থাকব না

78

অতিরিক্ত আইজি (টিঅ্যান্ডআইএম) ইকবাল বাহার বলেছেন, দেশ ভালো না থাকলে আমরা কেউ ভালো থাকতে পারবো না। তিনি বলেন, সবাই যার যার অবস্থান থেকে কমিউনিটিকে ভালো রাখতে কাজ করলে দেশে কোনও অশান্তি থাকবে না। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ থাকবে না। তাই দেশকে ভালো রাখতে আমাদের কাজ করতে হবে।
গতকাল শনিবার দুপুরে নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে কমিউনিটি পুলিশিং ডে উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইকবাল বাহার বলেন, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা এ দেশ পেয়েছি। রক্তের দামে কেনা দেশকে ভালোবাসুন। দেশকে ভালোবাসলে সবাই ভালো থাকবেন।
তিনি আরও বলেন, মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত চট্টগ্রাম চাইলে আপনাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। কারণ আপনারা জানেন কে মাদক বিক্রি করে, কে মাদক খায়, কারা সন্ত্রাসী। আপনারা যদি পুলিশকে এসব তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন, তাহলে পুলিশ এসব মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবে।
ইকবাল বাহার বলেন, বৈষম্যহীন পুলিশ ব্যবস্থা সকলের কাম্য। আমরা চেষ্টা করছি। আপনারা চাইলে আমরা জনগণের পুলিশ হব। জনগণ চাইলে পুলিশ বাধ্য।
৩০ বছর আগে যখন চাকরিতে এসেছিলাম তখন বলতে শুনেছি-পুলিশ জনগণের বন্ধু। আমরা চেষ্টা করছি আমার আচরণটি বন্ধুর মতো করবার জন্যে। সেক্ষেত্রে আমরা আপনার বন্ধু হতে পারব যদি কিনা আমার আপনার মনের মিলটি হয়। আপনার আমার চলার পথ এক হয়।
জনগণের ভীতি দূর করতে পুলিশের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে ইকবাল বাহার বলেন, আমরা নানারকম পদক্ষেপ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি আপনাদের দোর গোড়ায়। বিভিন্নভাবে আমরা চেষ্টা করি আপনাদের সমস্যাগুলো জানবার জন্যে। আমরা চাচ্ছি জনগণের সাথে পুলিশের যতবেশি মেশামেশির সুযোগ হবে ততবেশি ভীতি কাটা শুরু হবে। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবান, আস্থাবান হবে।
আইনে পুলিশকে বল প্রয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হলেও সেটা নিয়ে দ্ব›দ্ব থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বল প্রয়োগ আমি করব কিনা, করলে কতটুকু করব, কার বিরুদ্ধে করব- এটা আমাদের দ্ব›েদ্বর জায়গা। কারণ এখানে তিনটি পক্ষ- বাদি, বিবাদি ও পুলিশ। আমি যদি ন্যায়সঙ্গত কাজ করি তাহলে বাদি বা বিবাদি একজন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এভাবে দ্বা›িদ্বকতার মধ্যে পুলিশকে কাজ করতে হয়। যেটা অন্য কোনো চাকরিতে নেই।
মানুষ সবসময় পুলিশের পক্ষে থাকে না মন্তব্য করে চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহারের বলেন, আমরা যারা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করছি আমরা আপনাদের সেবক। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদে সাত অনুযায়ী এ রাষ্ট্রের মালিক জনগণ।
আপনি জনগণ কেমন থাকতে চান সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনাকে। আপনি যদি ভালো থাকতে চান, আমরা যারা আপনার সেবক হিসেবে কাজ করছি, বেতন নিচ্ছি আপনার ট্যাক্সের পয়সায়, সে সেবকটি আমি বাধ্য হব আপনাকে ভালো রাখতে।
চট্টগ্রাম মহানগর কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সভাপতি ও দৈনিক আজাদী পত্রিকার সম্পাদক এম এ মালেকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ কমিশনার মাহাবুবর রহমান বলেন, ১০ বছর আগের বাংলাদেশ পুলিশের সাথে চিন্তা করা হলে দেখা যাবে বিস্তর ফারাক। আগে মানুষ ভয়, লজ্জা, সংকোচে থানামুখী হত না। এখন আমরা পুলিশকে এ পর্যায়ে নিয়েছি যেখানে মানুষকে পুলিশের কাছে আসতে হবে না, পুলিশ যাবে জনগণের দোর গোড়ায়।
পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ভালো-খারাপ নির্ধারণের আহŸান জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, মন্দ পুলিশের সাথে থাকার দরকার নাই। ভালো পুলিশের সাথে থাকার জন্য বিনীত আবেদন জানাচ্ছি।
আমরা চাই আইন শৃঙ্খলাবহিনীর মধ্যে দুর্বৃত্ত থাকলে তাদের আইডেন্টিফাই করার জন্য। তেমনি সমাজে জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে দুর্বৃত্ত থাকলে তাদেরকেও বর্জন করুন।
সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ীকে জনপ্রতিনিধি ও সংগঠনের নেতা না বানানোর আহŸানও জানান সিএমপি কমিশনার।
দেশে চলমান শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে মাহবুব বলেন, সবাই সবার ভুল ত্রæটি সম্পর্কে জানেন। দয়া করে ভালো হয়ে যান। এ অভিযান থেকে কেউ মুক্ত নয়। যারা জনগণের ঘুম হারাম করতেন আমরা চাই জনগণ তাদের ঘুম হারাম করে দেবে।
হয় দেশে থাকবেন, না হয় দেশ ছাড়েন। দেশে থাকলে ভালোভাবে থাকতে হবে। আগে নিজের চিন্তা করুন। কিভাবে বেঁচে থাকবেন, নিজের পরিবার কিভাবে বেঁচে থাকবে। নিজের সন্তান যেন পিতৃহারা না হয়, দয়া করে চিন্তা করুন।
মাহবুব আরও বলেন, আমরা চাই ভালো পুলিশের সাথে আপনারা থাকবেন। আমি খারাপ হলে আমাকেও তাড়াবেন। আগামীতে এ কলঙ্কিত মুখ দেশবাসী দেখতে চাই না। মন্দ মানুষকে বিদায় করে ভালো মানুষের শাসন কায়েম করতে হবে।
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মোস্তাক আহমেদ, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি এসএম আবু তৈয়ব, প্যানেল মেয়র হাসান মাহমুদ হাসনি, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সাবেক সভাপতি কলিম সরোয়ার, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সাধারণ সম্পাদক অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন প্রমুখ।