সম্প্রতি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে দেশের উচ্চ আদালত তাদের পর্যবেক্ষণসহ স্বপ্রণোদিত হয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিচ্ছেন যা দেশ ও জাতির স্বার্থে জরুরি বলে মনে করছেন দেশের সাধারণ মানুষ। দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন, শিশু ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডসহ দেশের নদী ও খাল-বিল ইত্যাদি বিষয়ে আদালতের গভীর পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দেশের মানুষকে আশাবাদী করে তুলছে। যদিও আদালতের এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ধীর-স্থির নীতি লক্ষ্য করা যায়। বাস্তবে এসব নির্দেশনা যথাসময়ে যথাযথভাবে প্রতিপালিত হলে দেশ ও জাতির অনেক কল্যাণ হবে। দেশের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও অমূল পরিবর্তন ঘটবে।
সম্প্রতি হাইকোর্টের তিনটি পৃথক বেঞ্চ পৃথক পৃথক নির্দেশনার মাধ্যমে সরকারি ডাক্তারদের রোগী দেখা, অস্ত্র ও মাদকের মামলায় তদন্ত এবং আদালতে বিচারাধীন কোনো মামলার শিশু আসামির ছবিসহ তার পরিচিতি গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার করার উপর যে নির্দেশনা দিয়েছে তাকে বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সকলেই সময়োপযোগী ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মত দিয়েছেন।
সূত্র জানায় একটি জাতীয় পত্রিকাসহ কয়েকটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্রে আদালতে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি ডাক্তারদের রোগী দেখা নিয়ে একটি নীতিমালা করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ নির্দেশনায় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিশন গঠন করতেও বলা হয়েছে। আদালত বলেছে, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করার নামে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে যাতে কেউ ব্যবসা করতে না পারে, সে জন্যই একটি পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন থাকা উচিত। এই গাইডলাইন করতে স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিএমডিসি সভাপতি এবং বিএমএ সভাপতির প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের ভিন্ন আরেকটি বেঞ্চ অস্ত্র ও মাদকের মামলায় এক মাসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। এক মাসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে কী কারণে এই ব্যর্থতা তা সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতের কাছে ব্যাখ্যা করতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তা যাতে যথাসময়ে তদন্ত সম্পন্ন করতে পারেন তা তদারকির জন্য একটি মনিটরিং কমিটি গঠনের জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শক ও সকল এসপির প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের আরেকটি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আদালতে বিচারাধীন কোনো মামলার শিশু আসামির ছবিসহ তার পরিচিতি গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার করা যাবে না। একই সঙ্গে বিচারের আগে, বিচার চলাকালে এবং বিচারের পর সংশ্লিষ্ট শিশু সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করা যাবে না।
একটি রাষ্ট্রে বহু সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু স্বাস্থ্য খাত নিয়ে যখন অতি বাণিজ্যিক মনোভাব এবং চিকিৎসা প্রার্থীদের প্রতি চিকিৎসকদের অমনোযোগ ও খারাপ আচরণের মত বিষয়গুলো আসে তখন রাষ্ট্রের করণীয থাকে এ অবস্থার অবসানে কঠোর মনোভাব পোষণ করা। কিন্তু দেশের পেশাজীবী রাজনীতির প্রভাব বলয়ে আশ্রিত কিছু সংখ্যক চিকিৎসকদের কারণে তা কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা বা চিকিৎসা ব্যবস্থাকে সঠিক পথে পরিচালিত করা সম্ভব হয়ে উঠছে না; এ অবস্থায় আদালতের এই নির্দেশনা অত্যন্ত সঠিক। সরকারি চাকরি করলেও দেখা যায় চিকিৎসকদের অনেকেই প্রাইভেট প্র্যাকটিসে বেশি আগ্রহী। ফলে হাসপাতালের রোগীরা অবহেলিত থাকে। আবার সেবামূলক এই পেশায় মানুষের জীবন নিয়ে অমানবিক বাণিজ্যের অভিযোগও আছে। অস্ত্র মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণ সর্বাংশে সঠিক ও প্রাসঙ্গিক।
সেখানে বলা হয়েছে, অনেক সময় দেখা যায় মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চলে যায় কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাদকসহ আটকের মামলায় অভিযোগপত্র দিতেও দেরি করেন তদন্ত কর্মকর্তা। তদন্তে বিলম্বের কারণে বিচার বিলম্বিত হয়। এ কারণেই অস্ত্র ও মাদকের মামলায় দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন। দ্রূত তদন্ত হলে তাড়াতাড়ি বিচার সম্পন্ন হয়। আমরা আশা করব, উচ্চ আদালতের এই তিন নির্দেশনা প্রতিপালিত হবে।